শরীরজুড়ে ক্ষত নিয়ে হাসপাতালে কাতরাচ্ছেন সাবিনা
প্রকাশ | ২৮ মে ২০১৮, ১৩:২২ | আপডেট: ২৮ মে ২০১৮, ১৩:৪০
অভাবের সংসারে একটু সচ্ছলতা আনতে স্বামী সন্তান ফেলে রাজধানীতে গৃহকর্মীর কাজ করতে যান সাবিনা। কিন্তু সচ্ছলতা ফেরা তো দূর, উলটো নিজেই এখন বয়ে বেড়াচ্ছেন হাজারো নির্যাতনের ক্ষত। একের পর এক অত্যাচারে জীর্ণ শীর্ণ হয়ে আসা শরীর নিয়ে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে কাতরাচ্ছেন ২৫ বছর বয়সী সাবিনা।
সাবিনার (২৫) বাড়ি পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার চরবলেশ্বর গ্রামে। গত ১৬ মে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাকে। হাসপাতালের অর্থোপেডিকস বিভাগে কিছুদিন চিকিৎসাধীন থাকার পর সম্প্রতি তাকে ওয়ান-স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে (ওসিসি) রাখা হয়েছে।
সাবিনার মা মমতাজ বেগম ও বড় বোন হাফিজা খাতুন জানান, সাবিনার স্বামী ভ্যান চালিয়ে পরিবারের খরচ মেটাতেন। কিন্তু ঐ সামান্য আয়ে দুই সন্তানসহ চারজনের ওই সংসারে অভাব লেগেই থাকতো। ভাগ্য ফেরানোর আশায় গত বছর মে মাসে পাশের গ্রামের মমতাজ নামের এক নারীর আত্মীয়ের বাসায় থাকা-খাওয়া বাদে প্রতি মাসে ৫ হাজার টাকার বিনিময়ে গৃহকর্মীর কাজ নেন সাবিনা। কিন্তু ঢাকায় ধানমন্ডি এলাকার ৯ নম্বর রোডের ঐ সিদ্দিক আহমেদের বাড়িতে যাওয়ার পর থেকেই যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে রাখা হয় সাবিনাকে। এমনকি ৫ হাজার টাকার কথা বলা হলেও তাকে ৩ হাজার টাকা বেতন দেয়া হয়।
সাবিনার মা মমতাজ বেগম জানান, মাস তিনেক আগে চা বানানোর সময় সাবিনার পায়ে গরম পানি পড়ে। এসময় তাকে কোনো চিকিৎসা না দেয়ায় ক্ষত গভীর হয়ে সোজা হয়ে হাঁটতে পারতো না সাবিনা। একারণে ঠিকমতো কাজ করতে না পারায় তার উপর পাশবিক অত্যাচার শুরু হয়। একের পর এক নির্যাতনে তার হাতের বাহু থেকে শুরু করে কবজি পর্যন্ত কয়েক জায়গায় ভেঙে গেলেও সাবিনাকে কোনো চিকিৎসা দেওয়া হয়নি। এমনকি তাকে ঠিকমতো খেতেও দেওয়া হতো না। আটকে রাখা হতো বাথরুমে।
মমতাজ বেগম বলেন, দীর্ঘদিন মেয়ের খোঁজখবর না পেয়ে খুঁজতে খুঁজতে ধানমন্ডির ওই বাড়িতে যান তিনি। কিন্তু নির্যাতন অত্যাচারে সাবিনার তখন এমন বেহাল দশা যে নিজের মেয়েকেই প্রথমে চিনতে পারেননি মা। ওই অবস্থায় তিনি মেয়েকে নিয়ে আসতে চাইলে গৃহকর্ত্রী একটি সাদা কাগজে তার ও সাবিনার স্বাক্ষর নিয়ে ছেড়ে দেন।
এদিকে মেয়েকে নিয়ে বাড়িতে এলেও থানায় মামলা করতে গেলে আগে হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে মেডিকেল সার্টিফিকেট আনতে বলে পুলিশ। পরে সাবিনাকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
খুলনা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের অর্থোপেডিকস বিভাগের সহকারী রেজিস্ট্রার মো. নজরুল ইসলাম বলেন, আঘাতজনিত কারণে সাবিনার ডান হাতের কবজির ঠিক ওপরের একটি হাড় ভেঙে গেছে। ওই হাতের কাঁধের অংশটিও জখম। প্রায় দুই মাস আগে ওই ঘটনা ঘটেছে বলে মনে হয়। চিকিৎসা না করানোয় কাঁধের ভাঙা অংশটি আর ঠিক হওয়া সম্ভব নয়। তবে হাতের ভাঙা অংশটি জোড়া লেগে গেছে। ডান ও বাঁ হাত এবং ডান পায়ের ঊরুর মাংসপেশি শক্ত হয়ে গেছে। প্রতিনিয়ত আঘাতের কারণে এটা হতে পারে। দুই পায়েও কিছুটা পচন ধরেছে।
ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারের প্রধান ও খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার সোনালী সেন বলেন, সাবিনাকে সব ধরনের সহযোগিতা করা হচ্ছে। তার শারীরিক অবস্থারও ধীরে ধীরে উন্নতি হচ্ছে। সাবিনার পক্ষ থেকে এখনো কেউ মামলা করেননি। মামলা করলে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।