শিশু গৃহকর্মীকে পিটিয়ে হত্যা, লাশ গুমের চেষ্টা
প্রকাশ | ২৮ মে ২০১৮, ১২:০২ | আপডেট: ২৮ মে ২০১৮, ১২:২৩
ভাতে চুল পড়ার মতো তুচ্ছ ভুলের জের ধরে ১০ বছরের শিশু গৃহকর্মীকে মারধর করে তাকে হত্যা করেছেন গৃহকর্ত্রী। গত বুধবার রাজধানীর দক্ষিণখান এলাকায় গৃহকর্মী শিশুটিকে হত্যা করা হয়। শুধু হত্যা করেই ক্ষান্ত হননি তিনি, এক আত্মীয়ের সাথে যোগসাজশ করে ঐ লাশ গুম করে ফেলারও চেষ্টা করেন তিনি।
রাজধানীর দক্ষিণখান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তপন চন্দ্র সাহা জানান, তিন মাস আগে গৃহকর্ত্রী কাজল রেখা ওরফে জুঁই (২৭) এর বাসায় গৃহকর্মী হিসেবে কাজ শুরু করে ১০ বছর বয়সী সাথি আক্তার। শুরু থেকেই কারণে অকারণে সাথির উপর পাশবিক অত্যাচার চালাতেন রেখা। বুধবার রাতের খাবারে ভাতের মধ্যে চুল থাকা নিয়ে সাথিকে মারধর করেন রেখা। এক পর্যায়ে সাথির মাথা দেয়ালের সঙ্গে ঠুকে দেন যার ফলে সাথির মৃত্যু হয়।
পুলিশ কর্মকর্তা নূর মোহাম্মদ বলেন, সাথিকে খুন করার পর সেদিন রাতে তার লাশ বাসায় রেখে দেন রেখা। পরে দক্ষিণখানেই থাকা আরেক আত্মীয় শরিফুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করেন তিনি। পরদিন বৃহস্পতিবার শরিফুল নতুন লাগেজ কিনে এনে তাতে সাথির লাশ ভরে ফেলেন। লাশ ভর্তি লাগেজ নিয়ে আবদুল্লাহপুর যাবার পথে চেকপোস্টে পুলিশের হাতে ধরা পড়েন শরিফুল। এরপর জানা যায় আসল ঘটনা। পরে অভিযান চালিয়ে কিশোরগঞ্জ থেকে কাজল রেখাকে গ্রেপ্তার করে রবিবার আদালতে তোলা হয়।
২৭ মে (রবিবার) ঢাকার আদালতে সাথিকে হত্যার দায় স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন পেশায় ডিজে (ডিস্ক জকি) কাজলরেখা। বর্তমানে তিনি কারাগারে আছেন। এ ঘটনায় রেখার মা ও তার আত্মীয় শরিফুলকে আগেই গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তারাও এখন কারাগারে আছেন।
তবে বুধবার সাথি খুন হলেও তার বাবা রহমত আলী বিষয়টি জানতে পারেন দু'দিন পর। পুলিশের কাছ থেকে খবর পেয়ে তিনি ময়মনসিংহ থেকে ঢাকায় এসে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সাথির লাশ শনাক্ত করেন। সেদিনই তিনি বাদী হয়ে গৃহকর্ত্রী কাজল রেখা, তার মা খোদেজা বেগম ও রেখার আত্মীয় শরিফুল ইসলামের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন।
সাথির বাবা রহমত আলী বলেন, দক্ষিণখানের ফায়দাবাদ এলাকায় একা থাকতেন কাজলরেখা। তিন মাস আগে সাথিকে লেখাপড়া করানোর কথা বলে কাজে নেন কাজল রেখা। কথা ছিল, মাসে সাথির পরিবারকে দুই হাজার টাকা দেবেন। কিন্তু কাজল রেখা এখন পর্যন্ত কোন টাকা দেননি।
তিনি আরো জানান, গত সোমবার সাথির সাথে সর্বশেষ তাদের মোবাইল ফোনে কথা হয়। সাথি বলেছিল, সে ঈদের সময় বাড়িতে আসবে। কিন্তু তার দু'দিন পরেই তাকে বিদায় নিতে হলো চিরতরে। মেয়ে হত্যার দৃষ্টান্তমূলক বিচার চান সাথির বাবা মা।