“বাংলা সাহিত্যে ধূমকেতুর মত আবির্ভাব হয়েছিল নজরুলের”
প্রকাশ | ২৬ মে ২০১৮, ১৬:১৩
বাংলা সাহিত্যের আকাশে ধূমকেতুর মতোই আবির্ভাব হয়েছিল বাংলাদেশের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের- বললেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বাংলাসাহিত্যকে তিনি সোনার ফসলে ভরিয়ে রেখে গেছেন।
২৬ মে (শনিবার) ভারতের পশ্চিম বর্ধমানের আসানসোলে কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় আয়োজিত সমাবর্তন অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সম্মানসূচক ডক্টর অব লিটারেচার (ডি.লিট) ডিগ্রি প্রদান করে।
তিনি বলেন,অসাম্প্রদায়িকতা ও মানবতার বাণী কবয়ী নজরুলের বচন ও আচরণে প্রতিনিয়ত প্রতিফলিত হয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, চিন্তাচেতনা ও জীবনদর্শনের দিক থেকে কাজী নজরুল ইসলাম ও আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অবস্থান একই মেরুতে। উভয়েই শোষণ ও বঞ্চনামুক্ত একটি অসাম্প্রদায়িক সমাজ বিনির্মাণের স্বপ্ন দেখতেন। তিনি তখনকার সময়ে ফরিদপুরে এই দুজনের সাক্ষাত হয়েছিল বলে উল্লেখ করেন।
বক্তৃতার মাঝখানে তিনি কবি নজরুলের অনন্য সৃষ্টি বিদ্রোহী কবিতার কয়েকটি লাইন আবৃত্তি করে শোনান।
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, স্বাধীন বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭২ সালে কবি নজরুলকে ঢাকায় নিয়ে আসেন। তার চিকিৎসা ও বসবাসের ব্যবস্থা করেন এবং তাকে নাগরিকত্ব প্রদান করে বাংলাদেশের জাতীয় কবি হিসেবে ঘোষণা করেন। নজরুলের বিখ্যাত গান ‘চল চল চল/ঊর্ধ্ব গগনে বাজে মাদল’ বাংলাদেশের রণসঙ্গীত হিসেবে গ্রহণ করা হয়। কবির মৃত্যুর পরে এই মহান কবিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে সমাধিস্থ করা হয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, পূর্ববাংলার নরম-পলিমাটি আর অবারিত সবুজ তাকে ভীষণভাবে আকর্ষণ করতো। চুরুলিয়ায় জন্ম হলেও কবি নজরুলের বিচরণ ছিল সারাবাংলায়। শৈশবের একটি পর্ব তিনি কাটিয়েছেন ময়মনসিংহের ত্রিশালে। পরবর্তী জীবনে বিভিন্ন সময়ে তিনি কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, সিরাজগঞ্জ, ফরিদপুর নানা জায়গায় থেকেছেন, মানুষের সঙ্গে মিশেছেন।
শেখ হাসিনা বলেন, নজরুল আমাদের সকলের। বাংলা ভাষাভাষী সকল মানুষের প্রাণের অন্তস্থলে তিনি রয়েছেন। কবি প্রাবন্ধিক অন্নদাশঙ্কর রায় লিখেছেন:
“ভুল হয়ে গেছে বিলকুল
আর সবকিছু ভাগ হয়ে গেছে,
ভাগ হয়নি কো নজরুল।”
প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, নজরুল ভাগ হয়নি। আর তারই প্রতিফলন কবির নামে পশ্চিমবঙ্গে যেমন বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, তেমনি বাংলাদেশেও তার নামে বিশ্ববিদ্যালয়সহ নানা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। কবির স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে ময়মনসিংহের ত্রিশালে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়।
তিনি বলেন, আমরা বাঙালিরা ভাগ্যবান যে আমরা রবীন্দ্রনাথ এবং নজরুলের মত দুই মহান কবি পেয়েছি। তারা শুধু আমাদের ভাষা, সাহিত্য এবং সংস্কৃতিকেই সমৃদ্ধ করেননি, তারা আমাদের মূল্যবাধ এবং জীবনাচারণেও ইতিবাচক পরিবর্তন ঘটিয়েছেন। বাঙালির চরিত্রে কোমলতা আর দ্রোহের যে মিশ্রণ তা সম্ভবত এই দুই কবির কাছ থেকে পাওয়া।
সমাবর্তন অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক সাধন চক্রবর্তী ও পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চ্যাটার্জি।