বখাটের হাত থেকে মেয়েকে বাঁচাতে গিয়ে বাবার মৃত্যু
প্রকাশ | ০৭ মে ২০১৮, ১১:২৩
বখাটেরা বাড়ি থেকে তুলে নিতে এসেছে দশম শ্রেণীতে পড়ুয়া কিশোরী মেয়েকে। তাই মেয়েকে বাঁচাতে বখাটেদের বাধা দিতে যান বাবা। কিন্তু বাধা দিতে গিয়ে বখাটেদের ছুরিকাঘাতে আহত বাবা মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। ৫ মে (শনিবার) রাতে বগুড়ার গাবতলী উপজেলার পেরীরদহ গ্রামে ঘটেছে এই মর্মান্তিক ঘটনা।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বগুড়া শহরতলির নিশ্চিন্তপুর এলাকার বখাটে রনি আহমেদ দশম শ্রেণিতে পড়ুয়া ওই ছাত্রীকে মাদ্রাসায় যাওয়া আসার পথে উত্ত্যক্ত করত। বিয়ের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করায় শনিবার রাত আটটার দিকে কয়েকজনকে নিয়ে ওই ছাত্রীকে বারি থেকে তুলে নিতে আসে রনি। এসময় ভয়ে ঘরে লুকিয়ে থাকে ওই ছাত্রী। অন্যদিকে মেয়েকে বাঁচাতে বখাটেদের ঘরে ঢুকতে বাধা দেন পিতা ছায়েদ আলী। এ সময় বখাটে যুবকেরা ক্ষিপ্ত হয়ে ছায়েদ আলীর পাঁজরে ছুরিকাঘাত করে। ছায়েদ আলীর চিৎকার শুনে প্রতিবেশী শফিকুল ইসলাম এগিয়ে আসলে বখাটেরা তার হাতেও ছুরিকাঘাত করে জখম করে। পরে অন্য প্রতিবেশীরা ছুটে এসে রক্তাক্ত চাকুসহ রনি ও তার আরেক সহযোগীকে আটক করে। তবে এসময় তাদের সাথে থাকা আরো চার থেকে পাঁচজন বখাটে পালিয়ে যায়।
গুরুতর আহত অবস্থায় ছায়েদ আলীকে দ্রুত বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে রাত ৯টার দিকে চিকিৎসকেরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে ছায়েদ আলীর মৃত্যু হয়েছে বলে চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন।
নিহত ছায়েদ আলীর মেয়ে ওই ছাত্রী বলেন, ‘কিছুদিন হলো মাদ্রাসায় যাতায়াত পথে ওই বখাটে উত্ত্যক্ত করত। পরে বাবা-মাকে বিষয়টি জানাই। শনিবার রাতে হঠাৎ করে
তারা কয়েকজন বাড়িতে এসে আমাকে জোর করে তুলে নিয়ে যেতে চায়। এসময় আমি ভয়ে ঘরে লুকিয়ে পড়ি। আমাকে বাঁচাতে বাধা দিতে গেলে ওরা আমার বাবাকে চাকু মেরে খুন করে। আমি এদের ফাঁসি চাই’।
গাবতলী উপজেলার মহিষাবান ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম বলেন, মাত্র ছয়-সাতজন বখাটে যুবক গ্রামে ঢুকে বাবা-মায়ের সামনে থেকে কিশোরী মেয়েকে তুলে নিতে আসে। মেয়েকে বাঁচাতে গিয়ে নিরীহ দরিদ্র ব্যবসায়ী ছায়েদ আলী বখাটেদের হাতে খুন হলেন। গ্রামে এত লোকজন, অথচ এদের প্রতিরোধ করা গেল না, এটা সবার জন্য লজ্জার। আমরা খুনিদের গ্রেপ্তার এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।
গাবতলী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খায়রুল বাসার বলেন, ময়নাতদন্ত শেষে লাশ পরিবারের নিকট বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে রনি ও তার অপর সহযোগী হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করেছেন। এ ঘটনায় নিহত ছায়েদ আলীর স্ত্রী মরিয়ম বেগম বাদী হয়ে থানায় হত্যা মামলা দায়েরের প্রস্তুতি নিচ্ছেন।