৪ বছর পর সুরাহা হলো লাইজুর মরদেহের
প্রকাশ | ০৪ মে ২০১৮, ১৫:৩৫
হিন্দু নাকি মুসলিম? কোন ধর্মমতে সৎকার হবে সেই জটিলতায় চার বছর ধরে রংপুর মেডিকেল কলেজ এর হিমঘরেই পড়ে রইলো নিপা রানী রায় তথা ধর্মান্তরিত মোছা. হোসনে আরা ইসলাম ওরফে হোসনে আরা লাইজুর মরদেহ। অবশেষে ৪ বছরেরও বেশি সময় পর লাইজুর মরদেহ ইসলাম ধর্মের রীতি অনুযায়ী দাফনের অনুমতি দিয়েছেন আদালত।
গত ১২ এপ্রিল হাইকোর্টের বিচারপতি মো. মিফতাহ উদ্দিন চৌধুরীর একক হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন এবং নীলফামারী জেলা প্রশাসককে এ নির্দেশ বাস্তবায়ন করতে বলেন।
৩ মে (বৃহস্পতিবার) আদালতের আদেশের কপি জেলা প্রশাসকের হাতে পৌঁছে। এর প্রেক্ষিতে ৪ মে (শুক্রবার) সকাল সাড়ে ১১টায় রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গ থেকে নীলফামারীর ডোমার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাবিহা সুলতানার কাছে মরদেহটি হস্তান্তর করা হয়।
আদালতের আদেশ মোতাবেক জেলা প্রশাসক বিকেলের মধ্যে হোসনে আরার মরদেহ দাফনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছেন।
আদালত সূত্রে জানা যায়, ২০১৩ সালের ২৫ অক্টোবর ডোমার উপজেলার খামার বমুনিয়া গ্রামের স্কুল শিক্ষক অক্ষয় কুমার রায়ের মেয়ে কলেজছাত্রী নিপা রানী রায় প্রেম এর কারণে ধর্মান্তরিত হয়ে মোছা. হোসনে আরা ইসলাম নাম ধারণ করে একই উপজেলার বোড়াগাড়ি ইউনিয়ন পূর্ব বোড়াগাড়ী গ্রামের ইউপি সদস্য জহুরুল ইসলামের ছেলে হুমায়ুন ফরিদ ওরফে লাইজু ইসলামকে বিয়ে করেন।
এর ৩ দিন পর মেয়েটির বাবা অক্ষয় কুমার রায় বাদী হয়ে নীলফামারী নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আদালতে একটি অপহরণ মামলা দায়ের করেন। কিন্তু আদালত মামলার সার্বিক বিবেচনা করে অপহরণ মামলা খারিজ করে দিলে অক্ষয় কুমার রায় তার মেয়েকে অপ্রাপ্ত বয়স্ক ও মানসিক ভারসাম্যহীন দাবি করে আদালতে কাগজপত্র দাখিল করেন। আদালত এই মামলাটি আমলে নিয়ে শারীরিক পরীক্ষার জন্য মেয়েটিকে রাজশাহী সেফহোমে পাঠিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেন। এ অবস্থায় ২০১৪ সালের ১৫ জানুয়ারি মেয়েটির স্বামী হুমায়ূন ফরিদ লাইজু ইসলাম বিষপান করে আত্মহত্যা করেন।
লাইজুর আত্মহত্যার বিষয়টি আদালতে উপস্থাপন করে অক্ষয় কুমার মেয়েকে তার জিম্মায় নিতে আদালতে আবেদন করলে আদালত তা মঞ্জুর করেন। ২০১৪ সালের ১৬ জানুয়ারি মেয়েকে বাড়িতে নিয়ে নিজ জিম্মায় রাখেন অক্ষয় কুমার।
কিন্তু এই মামলা চলমান অবস্থায় ২০১৪ সালের ১০ মার্চ দুপুরে বাবার বাড়িতে কীটনাশক পান করে আত্মহত্যা করে নীপা ওরফে হোসনে আরা লাইজু।
এরপর মেয়েটির শ্বশুর জহুরুল ইসলামী শরিয়ত মোতাবেক দাফন ও বাবা অক্ষয় কুমার রায় হিন্দু শাস্ত্রে সৎকারের জন্য তাৎক্ষণিকভাব জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আবেদন করেন। আদালত উভয়পক্ষের শুনানি শেষে পুলিশকে এ বিষয়ে একটি প্রতিবেদন দাখিলের আদেশ দেন।
২০১৪ সালের ১২ মার্চ ডোমার থানা পুলিশ আদালতে একটি প্রতিবেদন দাখিল করলে আদালত মেয়েটির মরদেহ রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সংরক্ষণের আদেশ দেন। এরপর থেকে এতদিন মরদেহ রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের হিমঘরেই সংরক্ষিত ছিল।