মিয়ানমারের উপর আন্তর্জাতিক চাপ অব্যাহত রাখার আহবান
প্রকাশ | ৩০ এপ্রিল ২০১৮, ১৩:২২ | আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০১৮, ১৩:২৫
রোহিঙ্গা সঙ্কট সমাধানে আন্তর্জাতিক চাপ অব্যাহত রাখার আহবান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
৩০ এপ্রিল (সোমবার) জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের প্রতিনিধিদল গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতে এলে এ আহবান জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এসময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, আপনারা জানেন যে বাংলাদেশে ১৬ কোটি মানুষ বসবাস করে। এর আগেও ১৯৭৭ সালে রোহিঙ্গারা এ দেশে এসেছিল। কিন্তু এবার তারা অনেক বেশি সংকটাপন্ন ও নাজুক অবস্থায় বাংলাদেশে এসেছে। সে জন্যই আমরা তাদের আশ্রয় দিয়েছি।
সম্পূর্ণ মানবিক কারণে রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে আশ্রয় দেয়া হয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ কোনো সংঘাত চায় না বরং রোহিঙ্গা ইস্যুর শান্তিপূর্ণ সমাধান চায়। রোহিঙ্গা সঙ্কট সমাধানে আমরা চীন, রাশিয়া, ভারত ও জাপানের জোরালো ভূমিকা প্রত্যাশা করছি।
বৈঠক শেষে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন।
বৈঠকে জাতিসংঘ নিরাপত্তা বর্তমান প্রেসিডেন্ট গুস্তাভো আদোলফো মেজা কোয়াদরা ভেলাসকেজের নেতৃত্বে ১৪ সদস্যের প্রতিনিধিদল প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। উচ্চ পর্যায়ের এ প্রতিনিধিদলে নিরাপত্তা পরিষদের পাঁচ স্থায়ী সদস্য- যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য ও চীনের প্রতিনিধিরা ছিলেন।
উল্লেখ্য, রোহিঙ্গা পরিস্থিতি দেখতে গত ২৮ এপ্রিল (শনিবার) কুয়েত থেকে বিমান যোগে সরাসরি কক্সবাজার বিমান বন্দরে পৌঁছেন জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের ৩০ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল।
জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের সভাপতির দায়িত্বপ্রাপ্ত দক্ষিণ আমেরিকান দেশ পেরুর সাবেক প্রেসিডেন্ট গুস্তাভো মেজা-চুয়াদ্রার নেতৃত্বে গত ২৯ এপ্রিল (রবিবার) সকাল সাড়ে ৯টার দিকে প্রতিনিধি দলটি বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের বান্দরবানের নাইক্ষংছড়ির তুমব্রুর কোনারপাড়া জিরো পয়েন্ট যান। নো-ম্যানস ল্যান্ডে অবস্থানরত রোহিঙ্গাদের পরিস্থিতি সরেজমিন দেখে তারা উখিয়ার বালুখালী-০২ ময়নারঘোনা রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করেন।
পরিদর্শন শেষে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের সদস্যদের কক্সবাজারে রোহিঙ্গা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ শেষে আয়োজিত এক ব্রিফিংয়ে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে যুক্তরাজ্যের স্থায়ী প্রতিনিধি কারেন পিয়ার্স মিয়ানমার থেকেই বাংলাদেশে এসেছে রোহিঙ্গারা। রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান তাদেরকেই করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, এটি আমাদের ব্যর্থতা, আমরা মিয়ানমারের এই জাতিগত নিধনকে এড়িয়ে গেছি। সংকট সমাধানে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ মিয়ানমারকে চাপ দেবে এবং সমাধানে বাংলাদেশের পাশে থাকবে। এটা সুস্পষ্ট যে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের এ দায় এড়িয়ে যাবার সুযোগ নেই।
এসময় দলটির অন্যান্য সদস্যরা বলেন, বাংলাদেশ এ সমস্যার কোন অংশ নয়। তবুও বাংলাদেশ যে অসুবিধা ভোগ করছে সেই ব্যাপারে সবাই একমত। সমস্যাটি যে মিয়ানমারের এবং এর সমাধানও যে তাকেই করতে হবে সেই ব্যাপারেও তারা একমত। তবে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে কোনো শক্ত পদক্ষেপের ব্যাপারে তারা একমত নন। তারা আরও বলেন, এই সমস্যার কোনো ম্যাজিক সমাধান নেই, নেই কোনো ম্যাজিক কাঠি। আমরা দুই দেশের সরকারকে বোঝানোর চেষ্টা করবো।
রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন না করলে এই সমস্যার গভীরতা দেখতে পারতেন না বলে জানান দলটির আরেক সদস্য।
প্রতিনিধি দলের সদস্যরা তাদের অবস্থান থেকে এ ঘটনাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে দেখার আশ্বাস দেন রোহিঙ্গাদের।