বিউটি আক্তার ধর্ষণ ও হত্যা
বিউটি হত্যাকারীকে গ্রেপ্তারে ৪৮ ঘন্টার আল্টিমেটাম
প্রকাশ | ৩০ মার্চ ২০১৮, ১৮:৫৪ | আপডেট: ৩০ মার্চ ২০১৮, ১৯:০৪
হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জে বিউটি আক্তার নামে এক কিশোরীকে আটকে রেখে ধর্ষণ ও মামলা পরবর্তীতে আবারও ধর্ষণ করে হত্যার ঘটনায় মূল অভিযুক্তকে গ্রেপ্তারের জন্য ৪৮ ঘন্টা সময় বেঁধে দিয়েছে শাহবাগের আন্দোলনকর্মীরা।
৩০ মার্চ (শুক্রবার) বিকেল ৫টায় শাহবাগ জাতীয় জাদুঘরের সামনে ‘বিউটি আক্তার-এর ধর্ষণ ও হত্যার বিচারের দাবিতে আমরা’ শিরোনামে ‘নিপীড়নের বিরুদ্ধে শাহবাগ’ ব্যানারে আয়োজিত এক মানববন্ধন থেকে এই দাবি জানানো হয়। এতে বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ অংশগ্রহণ করেন।
মানববন্ধন থেকে ‘নিপীড়নের বিরুদ্ধে শাহবাগ’ এর এক্টিভিস্ট প্রকাশক রবিন আহসান বলেন,বাংলাদেশে আজ কোনো জায়গায়ই নারীরা নিরাপদ নয়। অথচ দীর্ঘ ২৭ বছর ধরে নারীরা শীর্ষ ক্ষমতায়। আমরা সারাদেশের নারীদের ওপর নির্যাতনের প্রতিবাদ জানাচ্ছি। চারিদিকে ধর্ষণ, নারী ও শিশু নিপীড়ন, যৌন হয়রানি-নির্যাতনের যেন মহোৎসব চলছে। ভুক্তভোগীর আর্তনাদ কারো নজরে আসেনা। কিন্তু এভাবে চলতে পারেনা, চলতে দেওয়া যায় না।
তিনি আরও বলেন, আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে মূল অভিযুক্ত বাবুলকে গ্রেপ্তার করে বিচারের আওতায় আনতে হবে। অন্যথায় কঠোর আন্দোলন করা হবে বলে হুঁশিয়ারি দেন তিনি।
সাবেক ছাত্রনেতা ও এক্টিভিস্ট আকরামুল হক জানান, বিচারহীনতার সংস্কৃতি আজ এই অবস্থার জন্য দায়ী। পরিস্থিতি এমন জায়গায় গিয়ে ঠেকেছে, খোদ রাজধানীতেই বিচারিক কর্মকাণ্ডে হতাশার প্রতিফলন দেখা যায়। আইন-বিচার-নির্বাহী বিভাগ নির্বিকার; প্রতিকারহীন আত্মসমর্পন আজ সবখানে।
যুব ইউনিয়ন নেতা ও ছাত্র ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি খান আসাদুজ্জামান মাসুম জানান, সম্প্রতি পত্রিকায় প্রকাশিত তথ্য মোতাবেক, ঢাকার থানাগুলোর মধ্যে নারী নির্যাতন মামলায় বিচার হচ্ছে মাত্র দুই থেকে তিন শতাংশ আসামির। রাষ্ট্রের পুলিশ ও সরকারি উকিলদের সহযোগিতায় পার পাচ্ছে আসামিরা। এ থেকে পরিত্রাণ পেতে প্রতিবাদ-প্রতিরোধই একমাত্র বিকল্প।
প্রসঙ্গত, হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জে বখাটে বাবুল মিয়ার উৎপাতে স্কুল ছেড়ে একটি কোম্পানিতে চাকরি নিয়েছিল কিশোরী বিউটি আক্তার। কিন্তু কাজে যাওয়া-আসার পথে তাকে ফের উত্ত্যক্ত করতে শুরু করে বাবুল মিয়া ও তার সহযোগীরা। স্বজনদের অভিযোগ এই হয়রানির অভিযোগ করায় গত ২১ জানুয়ারি বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে অজ্ঞাত স্থানে একমাস আটকে রেখে বিউটি আক্তারকে ‘ধর্ষণ’ করে বাবুল ও তার সহযোগীরা। পরে গত ২১ ফেব্রুয়ারি কৌশলে বিউটিকে তার বাড়িতে রেখে বাবুল পালিয়ে যায়।
এর এক সপ্তাহ পর গত ১ মার্চ বিউটির বাবা সায়েদ আলী বাদী হয়ে বাবুল ও তার মা ইউপি সদস্য কলমচানকে আসামি করে হবিগঞ্জ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে অপহরণ ও ধর্ষণ মামলা দায়ের করেন। গত ৪ মার্চ আদালত শায়েস্তাগঞ্জ থানাকে এ মামলার আসামিদের গ্রেপ্তারের নির্দেশ দেন। গত ১৬ মার্চ সায়েদ আলী বিউটিকে তার নানার বাড়ি লাখাই উপজেলার গুনিপুর গ্রামে পাঠিয়ে দেন। মামলা করায় ওই দিন রাতেই আবার বিউটিকে তুলে নিয়ে যায় বাবুল। এবার ধর্ষণের পর খুন করে বিউটির লাশ হাওরে ফেলে দেওয়া হয়। পরদিন ১৭ মার্চ সকালে হাওরে বিউটির লাশ পাওয়া যায়। বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হলে সবাই বিচারের দাবিতে সোচ্চার হয়ে ওঠে।
এই ঘটনায় বিউটির বাবা সায়েদ আলী শায়েস্তাগঞ্জ থানায় বাবুলসহ দুজনের নাম উল্লেখ এবং আরও কয়েকজনকে আসামি করে হত্যার পর ধর্ষণের অভিযোগে ফের মামলা করেন।