'জঙ্গি সোমার ঘনিষ্ঠ ছিল হলি আর্টিজান হামলাকারীরা'
প্রকাশ | ৩০ মার্চ ২০১৮, ০০:৫২
বৃত্তি নিয়ে অস্ট্রেলিয়ার একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে যাওয়ার এক সপ্তাহের মাথায় নিজের বাড়িওয়ালাকে গলা কেটে হত্যার চেষ্টা চালানো জঙ্গি মোমেনা সোমার সাথে যোগাযোগ ছিল গুলশানের হলি আর্টিজানে হামলায় যুক্তদের। এছাড়া তার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল এমন তরুণদের একটি অংশ সিরিয়ায় ইসলামিক স্টেটের পক্ষে যুদ্ধ করতে দেশ ছাড়ে। এমনটাই ধারণা করছে পুলিশ।
গত ৯ ফেব্রুয়ারি অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্নে সোমা তার বাড়িওয়ালা রজার সিঙ্গাভেলুকে গলা কেটে হত্যার চেষ্টা চালান। এর দুদিন পর মোমেনার বোন আসমাউল হুসনা তাদের মিরপুরের বাসায় এক পুলিশ কর্মকর্তাকে হত্যার চেষ্টা করেন। মোমেনা বর্তমানে অস্ট্রেলিয়ার একটি কারাগারে রয়েছেন। তার বোনও এখন কারাগারে।
তদন্ত কর্মকর্তারা জানান, পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে মোমেনা সোমার বোন আসমাউল হুসনা জানিয়েছেন, মোমেনার সঙ্গে নিবরাস ইসলাম ও রোহান ইমতিয়াজের যোগাযোগ ছিল। হুসনা বলেছেন, ২০১২ সালে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে দ্বিতীয় বর্ষে পড়ার সময়ই মোমেনা সোমা জঙ্গিবাদের দিকে ঝুঁকে পড়েন। ব্লগার রাজিব হায়দারের খুনের এক নম্বর আসামি রেদওয়ানুল আজাদ রানা, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ফেডারেল রিজার্ভ উড়িয়ে দেওয়ার পরিকল্পনাকারী নাফিস সহ জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ আরও বেশ কিছু তরুণ ছিলেন মোমেনা সোমার ঘনিষ্ঠ।
পুলিশ বলছে, উগ্রবাদীদের সঙ্গে মোমেনার যোগাযোগ পাওয়া গেলেও মোমেনার বোন আসমাউল হুসনার তেমন কোনো যোগাযোগ এখনো পাওয়া যায়নি। অস্ট্রেলিয়া ফেডারেল পুলিশ ইতোমধ্যে বাংলাদেশে এসে আসমাউল হুসনাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। এই তালিকায় আরও কয়েকজন নারীও রয়েছেন।
এছাড়া তদন্তে পুলিশ জানতে পেরেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ে তৃতীয় বর্ষে পড়ার সময় মোমেনা সোমা সোমালিয়ার একটি ইসলামিক ইউনিভার্সিটির বিভিন্ন আলোচনায় যুক্ত হন। সেখানে বাংলাদেশের আরও কিছু তরুণ সম্পৃক্ত ছিলেন। সেসময় মোমেনার মা অন্ধ হয়ে গেলে মোমেনার বাবা মনিরুজ্জামান দ্রুত মেয়ের বিয়ে দিতে চান। অনলাইনে একটি ঘটকালি সাইটেও যুক্ত হন তিনি যার সঙ্গেও উগ্রবাদী তরুণদের কারও কারও ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল বলে ধারণা করা হচ্ছে।
পুলিশের ধারণা এই অনলাইন সাইটেই মোমেনা সোমার সঙ্গে গাজী কামরুস সালামের (সোহান) পরিচয় হয়। এই কামরুস সালাম আইএসের পক্ষে যুদ্ধ করতে তুরস্ক হয়ে সিরিয়ায় গিয়ে পরে ফিরে আসেন। মোমেনার মায়ের অসুস্থতার সময়ে কামরুস সালাম মারফত নজিবুল্লাহ আনসারীর সাথে মোমেনার পরিচয় হয়।
পুলিশের ধারণা, হয়তো এরপরও মোমেনা সোমার সঙ্গে নজিবুল্লাহ আনসারীর যোগাযোগ হয়েছিল। কেননা ২০১৫ সালের জানুয়ারিতে তুরস্কের আতিলিন বিশ্ববিদ্যালয়ে বৃত্তি নিয়ে পড়তে যাওযার চেষ্টা করেছিলেন মোমেনা সোমা। কিন্তু ভিসা প্রত্যাখ্যাত হলে তিনি ওই বছরই আবার তিউনিসিয়ায় যাওয়ার চেষ্টা করেন যা কিনা আইএসে যোগদানকারী বিদেশি যোদ্ধাদের তালিকায় শীর্ষে।
সেই বছরই মোমেনা সোমার মা মারা যাওয়ার পর দুই বোন ক্রমে জঙ্গিবাদের দিকে ঝুঁকতে থাকেন।
মোমেনা সোমা ও আসমাউল হুসনার বাবা মনিরুজ্জামান পুলিশকে বলেন, তিনি বুঝতে পারছিলেন তার মেয়েরা বদলে যাচ্ছে। তারা সব সময় ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে কোনটা ঠিক কোনটা বেঠিক তা নিয়ে মন্তব্য করতো এবং কঠোরভাবে সবাইকে মানতে বাধ্য করাতো।