সিজারে শিশুকে দুইখণ্ড, ডাক্তারসহ ৭ জনকে হাইকোর্টে তলব
প্রকাশ | ২৫ মার্চ ২০১৮, ১৬:০৩
সিজার করে বের করে আনার সময় শিশুকে দুইখণ্ড করার ঘটনায় কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ (কুমেক) হাসপাতালের সিভিল সার্জন, ডাক্তারসহ সাতজনকে তলব করেছেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে কেন কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট।
২৫ মার্চ (রবিবার) বিচারপতি সালমা মাসুদ চৌধুরী ও বিচারপতি এ কে এম জহিরুল হকের হাইকোর্ট বেঞ্চ স্বপ্রণোদিত হয়ে রুলসহ এ আদেশ দেন। আদেশে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক, কুমিল্লার সিভিল সার্জন, গাইনি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ডা. করুনা রানী কর্মকার, ডা. নাসরিন আক্তার পপি, ডা. জানিবুল হক, ডা. দিলরুবা শারমিন ও ডা. আয়েশা আফরোজকে তলব করা হয়েছে। এই ৭ জনকে আগামি ৪ এপ্রিল আদালতে উপস্থিত হয়ে ঘটনার ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়েছে।
২৫ মার্চ (রবিবার) সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. আসাদুজ্জামান কয়েকটি সংবাদপত্রে প্রকাশিত প্রতিবেদনটি আদালতের নজরে আনেন। এসময় তার সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী ব্যারিস্টার ফারহানা ইসলাম খান, আনিসুল হাসান ও সেগুফতা তাবাসসুম আহমেদ।
এ প্রসঙ্গে আইনজীবী সেগুফতা তাবাসসুম আহমেদ বলেন, মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের পক্ষ থেকে দুইটি দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত এ প্রতিবেদনটিকে আদালতের নজরে আনা হয়। প্রতিবেদনে প্রকাশ করা হয়েছে, কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ (কুমেক) হাসপাতালে প্রসূতির পেটে নবজাতকের মাথা কেটে বিচ্ছিন্ন করে ফেলা হয়েছে। একইসঙ্গে ওই প্রসূতির জরায়ু কেটে অপারেশন করা হয়েছে। গত এক সপ্তাহ ধরে সন্তান এবং শরীরের একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ হারিয়ে কুমেকে ব্যথায় কাতরাচ্ছেন জুলেখ বেগম (৩০) নামে এক নারী। চাঞ্চল্যকর এ ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর গত ২৪ মার্চ (শনিবার) থেকে হাসপাতালে ভীড় করছেন গণমাধ্যমকর্মীরা।
জানা গেছে, প্রসব বেদনা নিয়ে গত ১৭ মার্চ (শনিবার) রাতে কুমিল্লা হাসপাতালে ভর্তি হন জুলেখা। ১৮ মার্চ (রবিবার) অপারেশন থিয়েটারে হাসপাতালের গাইনি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ডা. করুনা রানী কর্মকারের নেতৃত্বে ৫ সদস্যের চিকিৎসক দল ওই অপারেশন করেন। এসময় ডা. নাসরিন আক্তার পপি, ডা. জানিবুল হক, ডা. দিলরুবা শারমিন ও ডা. আয়েশা আফরোজসহ অন্যরা অপারেশনে অংশ নেন।
কান্নাজড়িত কন্ঠে প্রসূতি জুলেখা বেগম জানান, ডাক্তাররা আমার জীবনটা শেষ করে দিয়েছে। হাসপাতালে আসার পরেও বাচ্চা পেটে নড়াচড়া করছিল। তারা আমার বাচ্চাকে মেরে ফেলেছে। সেই সাথে আমার জরায়ুও কেটে ফেলেছে।
এ প্রসঙ্গে জুলেখার স্বামী সফিক আহমেদ বলেন, হাসপাতালে ভর্তি করার সময় তার অনেক ব্যথা ছিল। ডাক্তারদের অনুরোধ করলেও শনিবার রাতে কেউ সিজার করেননি। রবিবার সিজার করার সময় নবজাতকের মাথা কেটে ফেলা হয়েছে এবং স্ত্রীর জরায়ু কেটে অপারেশন করে দিয়েছে।
তিনি আরও বলেন, নবজাতক মৃত হয়েছে জানিয়ে ঐদিন হাসপাতালের একজন দারোয়ান এসে মৃত নবজাতককে মাটিচাপা দেওয়ার জন্য ৫০০ টাকা চান। পরে তিনি ৩০০ টাকা দেন। মৃত নবজাতককে মাটি চাপা দেয়ার জনু দারোয়ান যখন নিয়ে যায়, তখন তিনি দেখতে পান শিশুটির মাথা কেটে ফেলা হয়েছে। সেইসময় তিনি মোবাইলে ছবি তুলে রাখেন। মৃত নবজাতককে হাসপাতালের কাছেই মাটিচাপা দেয়া হয়েছে।
এ ঘটনায় অস্ত্রোপচারে অংশ নেওয়া ডা. নাসরিন আক্তার পপি, ডা. আয়েশা আফরোজ, ডা. জানিবুল হক, ডা. দিলরুবা শারমিন সাংবাদিকদের জানান, প্রসূতির গর্ভের সন্তান মৃত ও অস্বাভাবিক পজিশনে ছিল। কিন্তু শিশুটির হাত-পা জরায়ু মুখ দিয়ে বের হয়ে চলে আসায় বাধ্য হয়ে অপারেশনের মাধ্যমে মৃত শিশুর দেহ ও মাথা বিচ্ছিন্ন করে বের করতে হয়েছে। তাছাড়া অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের কারণে রোগীর জীবন ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় জরায়ু কেটে ফেলতে হয়েছে। অপারেশনের আগে এসব বিষয়ে প্রসূতির স্বামীর অনুমতি নেওয়া হয়েছে। এতে ডাক্তারদের অবহেলা ছিল না বলে দাবি করেন চিকিৎসকরা।
এ ঘটনায় হাসপাতালের উপপরিচালক ডা. মতিউর রহমান সংশ্লিষ্ট চার ডাক্তারকে তার কার্যালয়ে ডেকে আনেন। পরে তিনি সাংবাদিকদের জানান, প্রসূতির জীবন রক্ষার্থে ডাক্তাররা অপারেশন করে গর্ভের সন্তান দুই খণ্ড করে বের করে আনেন। তবে এক্ষেত্রে ডাক্তারদের দায়িত্বে অবহেলা ছিল কীনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।