৮ হাজার ৩২ রোহিঙ্গার তালিকা হস্তান্তর
প্রকাশ | ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, ২৩:২৫
মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনের জন্য বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া আট হাজার ৩২ জন রোহিঙ্গার তালিকা ঢাকা সফররত দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী লেফটেন্যান্ট জেনারেল কিউ সোর হাতে তুলে দিয়েছেন বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল।
১৭ ফেব্রুয়ারি (শনিবার) সচিবালয়ে দুই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নেতৃত্বে মিয়ানমার ও বাংলাদেশের প্রতিনিধি দলের বৈঠক হয়।
বৈঠক শেষে আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেন, সাড়ে ১০ লাখের বেশি মিয়ানমার নাগরিকের তালিকা করা হয়েছে। বৈঠকে তাদের কাছে এক হাজার ৬৭৩টি রোহিঙ্গা পরিবারের আট হাজার ৩২ জনের তালিকা দিয়েছি।
ফিরিয়ে নেওয়ার আগে তাদের পরিচয় যাচাই করার কথা বলেছেন মিয়ানমারের কর্মকর্তারা। তবে কবে থেকে রোহিঙ্গাদের ফেরত নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হবে তার সুনির্দিষ্ট দিনক্ষণ ঠিক হয়নি। এছাড়া অগ্রবর্তী দল হিসাবে দুই দেশের সীমান্তের শূন্য রেখায় অবস্থানরত সাড়ে ছয় হাজার রোহিঙ্গাকে শিগগির ফেরত নেওয়ার আশ্বাস বাংলাদেশ পেয়েছে বলে জানান তিনি।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, তারা যাতে নিজেদের এলাকায় ফিরে যেতে পারেন সে বিষয়ে আলোচনার জন্য ২০ ফেব্রুয়ারি কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক সেদেশে যাবেন। সেখানে জেলা প্রশাসক পর্যায়ে মিটিং হবে।
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, তারা এই বৈঠকে যে তালিকা দিয়েছেন তা যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়া দ্রুত শুরুর আশ্বাস দিয়েছেন মিয়ানমারের কর্মকর্তারা। এরপর সিদ্ধান্ত নেবেন কীভাবে নিয়ে যাবেন। তাদের ফেরত নেওয়ার বিষয়ে দুইপক্ষের ঐক্যমত রয়েছে।
১২ সদস্যের প্রতিনিধি দল নিয়ে গত ১৫ ফেব্রুয়ারি (বৃহস্পতিবার) তিন দিনের সফরে বাংলাদেশে আসেন মিয়ানমারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জেনারেল কিউ সো। রাতেই রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন তিনি। সেখানে আলোচনায়ও পর্যায়ক্রমে রোহিঙ্গাদের ফেরত নিতে তার তার দেশের আগ্রহের কথা জানান মিয়ানমারের এই সেনা কর্মকর্তা।
১৬ ফেব্রুয়ারি (শুক্রবার) দুপুর পৌনে ৩টায় মিয়ানমারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সচিবালয়ে উপস্থিত হলে বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তাকে ফুল দিয়ে স্বাগত জানান। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ভবনের সামনে তাকে সশস্ত্র সালাম জানায় ঢাকা মহানগর পুলিশের একটি দল। পরে ৩টার সময় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে দুই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নেতৃত্বে বৈঠক শুরু হয়। বাংলাদেশের পক্ষে মন্ত্রীসহ ১৮ জন এবং মিয়ানমারের পক্ষে ১৫ জন বৈঠকে অংশ নেন।
সন্ধ্যা সোয়া ৬টায় বৈঠক শেষ হওয়ার পর মিয়ানমারের প্রতিনিধি দল সচিবালয় ত্যাগ করেন। এ সময় সাংবাদিকদের সঙ্গে কোনো কথা বলেননি মিয়ানমারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। তবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেন, রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেওয়ার আলোচনায় খুব আন্তরিকতা দেখিয়েছেন মিয়ানমারের কর্মকর্তারা।
মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন-পুনর্বাসনে তিন ধাপে কাজ করবে জানিয়ে তিনি বলেন, প্রাথমিক, মাধ্যমিক এবং ফাইনাল পর্যায়ে পুনর্বাসনের জন্য কাজ করবে তারা। প্রাথমিক কাজ হচ্ছে, এদের চিহ্নিত করা হবে, দ্বিতীয় পর্যায়ে পুনর্বাসনের জন্য বাড়ি-ঘরের ব্যবস্থা করা এবং তৃতীয় পর্যায়ে তাদের ফিরিয়ে নেওয়ার পর যেন স্থায়ীভাবে থাকতে পারে।
মিয়ানমারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নেতৃত্বে প্রতিনিধি দলে ছিলেন স্বরাষ্ট্রসচিব উ টিন মিন্ট, পররাষ্ট্র সচিব মিন্ট থো, পুলিশ প্রধান মেজর জেনারেল অং ইউন অ, বাংলাদেশে নিযুক্ত মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূত লইন অ-সহ ১৫ জন সদস্য।