'মাজার জিয়ারত করতে' খালেদার সিলেটে যাত্রা
প্রকাশ | ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, ১৯:৩৬
বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দায়ের করা জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার রায় ঘোষণার জন্য আগামী ৮ ফেব্রুয়ারি দিন ঠিক করেছেন বিচারক। রায় ঘোষণাকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন উত্তেজনার মধ্যে হযরত শাহজালাল (র.) ও হযরত শাহপরাণ (র.) এর মাজার জিয়ারতের জন্য সিলেট সফরে গেছেন বিএনপি প্রধান।
আজ ৫ ফেব্রুয়ারি (সোমবার) সকাল সোয়া ৯টায় রাজধানীর গুলশানের বাসভবন থেকে খালেদা জিয়ার গাড়িবহর সিলেটের উদ্দেশে রওনা হয়।
বিএনপি প্রধানের সফরসঙ্গী হিসেবে রয়েছেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীসহ সিনিয়র নেতারা। বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে খালেদা জিয়ার গাড়িবহর সিলেট পৌছায়।
সিলেট সফরের প্রাক্কালে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, নির্বাচনী প্রচারণার জন্য নয়, বিএনপি চেয়ারপারসন সিলেটে যাচ্ছেন হযরত শাহজালাল (র.) এবং শাহপরাণ (র.) এর মাজার জিয়ারতের জন্য।
তিনি বলেন, একবছর আগে নির্বাচনী প্রচারণার অর্থ হয় না। এখনো তো লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি হয়নি। কিসের নির্বাচনী প্রচারণা? তবে কোনো দল চাইলে তারা নির্বাচনী প্রচারণা করতে পারে, এটা তাদের বিষয়।
প্রসঙ্গত গত বছরের ২০ ডিসেম্বর থেকে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শুরু হয়। এদিন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল খালেদা জিয়াসহ সব আসামির সর্বোচ্চ শাস্তি চেয়ে যুক্তি উপস্থাপন শেষ করেন। দণ্ডবিধির ৪০৯, ১০৯ এবং দুদক আইনের ৫(২) ধারায় শাস্তি প্রার্থনা করেন তিনি।
এরপর ২১, ২৬, ২৭ ও ২৮ ডিসেম্বর এবং ৩, ৪, ১০, ১১ ও ১৬ জানুয়ারি খালেদার পক্ষে যুক্তি উপস্থাপন করেন তার আইনজীবীরা। খালেদা জিয়ার পক্ষে যুক্তি উপস্থাপন করেন আইনজীবী আবদুর রেজ্জাক খান, জমির উদ্দিন সরকার, খন্দকার মাহবুব হোসেন, এ জে মোহাম্মদ আলী ও ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ। খালেদা জিয়ার পক্ষে যুক্তি উপস্থাপন শেষ হলে কারাগারে থাকা অন্য দুই আসামি কাজী সালিমুল হক কামাল ও শরফুদ্দিন আহমেদের পক্ষে যুক্তি উপস্থাপন শুরু করেন আইনজীবী আহসানউল্লাহ। গতকাল শুনানির সময়ও খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়া বিএনপির সিনিয়র নেতাদের মধ্যে মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, নজরুল ইসলাম খান, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু, বরকতউল্লাহ বুলু, কেন্দ্রীয় নেতা আমানউল্লাহ আমান, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, ফজলুল হক মিলন, অ্যাডভোকেট রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, আফরোজা আব্বাসসহ বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতা-কর্মীরা আদালতে উপস্থিত ছিলেন।
কী হবে খালেদা জিয়ার : অভিযোগ প্রমাণ হয়েছে দাবি করে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ সব আসামির সর্বোচ্চ শাস্তি চেয়েছে রাষ্ট্রপক্ষ। এ ক্ষেত্রে দণ্ডবিধির ১০৯, ৪০৯ এবং দুদক আইনের ৫(২) ধারায় শাস্তি প্রদানের দাবি তাদের। এ মামলার কোনো ভিত্তি নেই দাবি করে খালেদা জিয়াসহ আসামিদের খালাস দাবি করেছে তাদের আইনজীবীরা। অভিযোগ প্রমাণ না হলে আসামিরা খালাস পাবেন, এটাই স্বাভাবিক। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, অভিযোগ প্রমাণ হলে কী শাস্তি হবে আসামিদের। দণ্ডবিধির ৪০৯ ধারায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ড, দুদক আইনের ৫(২) ধারায় সর্বোচ্চ সাত বছর কারাদণ্ড এবং দণ্ডবিধির ১০৯ ধারায় অপরাধ সংঘটনে সহযোগীদের সমান সাজার বিধান রয়েছে। এ ছাড়া আত্মসাৎ করা অর্থের সমপরিমাণ বা তার কয়েকগুণ বেশি জরিমানার বিধান রয়েছে আইনে। দণ্ডবিধির ৪০৯ ধারায় বলা হয়েছে, ‘কোনো ব্যক্তি যদি সরকারী কর্মচারী হিসেবে তার পদমর্যাদা বলে অথবা ব্যাংকার, ব্যবসায়, ফ্যাক্টর, দালাল, অ্যাটর্নি বা প্রতিনিধি হিসেবে বা ব্যবসায় সূত্রে কোনোভাবে কোনো সম্পত্তির জিম্মাদার হয়ে বা উক্ত সম্পত্তির পরিচালনের ভারপ্রাপ্ত হয়ে সে সম্পত্তি সম্পর্কে অপরাধমূলক বিশ্বাস ভঙ্গ করে, তবে উক্ত ব্যক্তি যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে অথবা ১০ বছর পর্যন্ত যে কোনো মেয়াদে সশ্রম বা বিনাশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত হবে এবং তদুপরি অর্থ দণ্ডেও দণ্ডনীয় হবে।’
দণ্ডবিধির ১০৯ ধারায় বলা হয়েছে, ‘যে অপরাধ সংঘটনে সহায়তা করা হয়েছে, সহায়তার দরুন যদি সে অপরাধ অনুষ্ঠিত হয় এবং এই আইনের অনুরূপ সহায়তার দণ্ডদানের জন্য যদি কোনো স্পষ্ট বিধান না করা হয়ে থাকে, তবে অনুরূপ সহায়তাকারী যে অপরাধটি সংঘটনে সহায়তা করেছে সে অপরাধের জন্য যে দণ্ডের বিধান করা হচ্ছে, অপরাধটি সংঘটনে সহায়তার জন্য তাকেও সে দণ্ডেই দণ্ডিত করা হবে।’
এ বিষয়ে ফৌজদারি আইন বিশেষজ্ঞ ও আওয়ামী লীগের আইনবিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট শ ম রেজাউল করিম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, দণ্ডবিধির ৪০৯ ধারায় অপরাধমূলক আত্মসাতের দায়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের বিধান রয়েছে। এ ছাড়া দুর্নীতি দমন কমিশন আইনের ৫(২) ধারায় সাত বছর পর্যন্ত কারাদণ্ডের বিধান রয়েছে। আর ১০৯ ধারায় অপরাধ সংঘটনে সহায়তাকারীদের শাস্তির বিষয়ে বলা হয়েছে। তিনি বলেন, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হলে দণ্ডবিধির ১০৯, ৪০৯ এবং দুদক আইনের ৫(২) ধারায় সর্বোচ্চ শাস্তি হতে পারে। এসব ধারায় আত্মসাত্কৃত অর্থের সমান বা কয়েকগুণ বেশি জরিমানা করার বিধান রয়েছে বলেও জানান এই ফৌজদারি আইন বিশেষজ্ঞ। এতিমদের জন্য বিদেশ থেকে আসা দুই কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৭১ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ২০০৮ সালের ৩ জুলাই রমনা থানায় জিয়া অরফানেজ মামলাটি দায়ের করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। ২০০৯ সালের ৫ আগস্ট আসামিদের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়।
অন্যদিকে ২০১১ সালের ৮ আগস্ট খালেদা জিয়াসহ চারজনের বিরুদ্ধে ৩ কোটি ১৫ লাখ ৪৩ হাজার টাকা আত্মসাতের অভিযোগে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলাটি দায়ের করে দুদক। ২০১২ সালের ১৬ জানুয়ারি আদালতে এ মামলার অভিযোগপত্র দাখিল করে দুদক। এ মামলায় বিএনপি নেতা হারিছ চৌধুরী ও তার তৎকালীন একান্ত সচিব জিয়াউল ইসলাম মুন্না এবং ঢাকা সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার একান্ত সচিব মনিরুল ইসলাম খানকে আসামি করা হয়।