'তদন্ত নিয়ে বেশি খোঁচাখুঁচি করবেন না'
প্রকাশ | ১৮ জুলাই ২০১৬, ০১:১৬
সাম্প্রতিক জঙ্গি হামলার তদন্ত নিয়ে ‘বেশি খোঁচাখুঁচি’ না করতে সাংবাদিকদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আসেম সম্মেলন থেকে ফেরার পরদিন রবিবার গণভবনে সংবাদ সম্মেলনে এসব বলেন শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, "কীভাবে এসব হামলা হয়েছে, তদন্তে তা খুঁজে বের করা হচ্ছে। চমকে দেওয়ার মতো তথ্য আসছে তদন্তে। এই তথ্য প্রকাশ হলে ‘তাজ্জব’ বনে যেতে হবে"।
তবে তদন্ত মাঝ পর্যায়ে থাকায় তা খোলসা করেননি প্রধানমন্ত্রী।
জঙ্গিবাদী তৎপরতার তদন্তে ভারতের সঙ্গে পারস্পারিক সহযোগিতা চলার কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে ‘গোয়েন্দা তথ্য’ চাওয়া হয়েছে।
আতঙ্ক সৃষ্টি করাই গুলশানে হামলার উদ্দেশ্য ছিল মন্তব্য করে তিনি বলেন, “যে সম্মানজনক অবস্থায় নিয়ে গিয়েছিলাম বাংলাদেশকে সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ মোকাবিলা করে অর্থনৈতিক গতিধারা সৃষ্টি করে, সেই সম্মানজনক অবস্থানে মনে হচ্ছে একটা ছেদ এনে দিল।”
গুলশান ও শোলাকিয়ায় জঙ্গি হামলার তদন্তের অগ্রগতি জানতে চাইলে তিনি বলেন, “তদন্ত সম্পন্ন হওয়ার পর আপনারাই (সাংবাদিক) তাজ্জব হয়ে যাবেন। তদন্ত কতটুকু এগোলো, সব কথা তো বলা যাবে না। বলে ফেললে তদন্ত তো ওখানে শেষ হয়ে যাবে। কাজেই এখানে যতটুকু ঠিক বলা প্রয়োজন ততটুকু বলা যাচ্ছে। এখনও তদন্তের অনেকগুলি ধাপ আছে, কাজ আছে। সেগুলি কিন্তু করা হচ্ছে এবং খুঁজে খুঁজে বের করা হচ্ছে এবং ভবিষ্যতে আরও এমন এমন জিনিস বের হবে যখন সম্পূর্ণটা সফলভাবে করতে পারব যে, আপনারা নিজেরাই তাজ্জব হয়ে যাবেন কীভাবে এই কাজগুলি এরা করেছে”।
হামলার ঘটনায় নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের পাশাপাশি শিক্ষকের নাম আসার দিকে ইঙ্গিত করে শিক্ষকরা কীভাবে ছাত্রদের মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেয় বা জঙ্গিবাদের দিকে ঠেলে দেয় সে প্রশ্ন তোলেন শেখ হাসিনা।
সন্ত্রাসবাদ এখন বাংলাদেশের একার সমস্যা নয়, বিশ্ব সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, “সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে সচেতনতা শুধু আমার দেশের মধ্যেই না, সারা বিশ্বব্যাপীই হচ্ছে। হ্যাঁ, এর পেছনে, এটার শুরু কীভাবে হল, মদদদাতা কারা, কোত্থেকে একটার পর একটা কী হচ্ছে, এ ব্যাপারেও কিন্তু অনেকেই সচেতন।”
অচিরেই এর বিরুদ্ধে বিশ্ববাসী সরব হবে আশা প্রকাশ করে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বলেন, “হয়তো এখনও সবাই সোচ্চার হচ্ছে না। কিন্তু সেইদিন বেশি দূরে না যেদিন মানুষ সকলেই সোচ্চার হবে।”
বাংলাদেশ সব সময় সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদবিরোধী-মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, “স্ব-স্ব অবস্থানে থেকে সবাইকে এর বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে আহ্বান জানাচ্ছি।”
যারা ধর্মের নামে তরুণদের জঙ্গিবাদে জড়াতে উসকানি দিচ্ছে, তাদের চিহ্নিত করার ওপরও গুরুত্ব আরোপ করেন তিনি।
বাংলাদেশকে অর্থ-সামাজিক উন্নয়নের মাধ্যমে বিশ্বে সম্মানের জায়গায় নিয়ে যাওয়া হয়েছিল মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “একটার পর একটা ঘটনা ঘটিয়ে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করার চেষ্টা করেছে। কিন্তু গুলশানে এই ঘটনা ঘটার পর, বিদেশি হত্যার পর খুব স্বাভাবিকভাবে...এই আসেম আগেরবার মিলানে যখন হয়, তখন যে গলা উঁচু করে কথা বলতে পেরেছিলাম; আজকে সেখানে দেখা যাচ্ছে যে, আজকে বাংলাদেশেও যে ঘটনা পৃথিবীর অন্য দেশের একই ঘটনা। একই পর্যায়ে চলে গেছি”।
সম্মেলনে অন্যান্য দেশের নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে এ নিয়ে আলোচনার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, “অমরা এতদিন অনেকটা নিয়ন্ত্রণে রেখেছিলাম। কিন্তু এটা এখন বিশ্বব্যাপী। উন্নত দেশগুলোতেও হচ্ছে। এখানে সহযোগিতা সকলকে সকলের করতে হবে। কোথায়, কীভাবে কারা মদদ দিচ্ছে সেটাই সবাইকে বলে এসেছি। অস্ত্র কোত্থেকে আসছে, কারা তৈরি করছে, অস্ত্রের ডিলার কে, প্রশিক্ষণ কারা দিচ্ছে, অর্থদাতা কে? যেখানে যেখানে এ ধরনের ঘটনা ঘটছে সবাই মিলিতভাবে এ তথ্য সংগ্রহ করবে, সহযোগিতা করবে এটা আমরা বলেছি”।