যৌতুক ও পরকীয়ার জেরে গৃহবধূকে হত্যা
প্রকাশ | ০৯ ডিসেম্বর ২০১৭, ০০:২৬
বরিশালের আগৈলঝাড়ায় স্বামীর পরকীয়ায় বাধা ও যৌতুকের দাবিকৃত টাকা না দেওয়ায় এক গৃহবধূকে হত্যার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
৫ ডিসেম্বর ঢাকার কামরাঙ্গীরচর এলাকার হাসাননগর গ্রামের ভাড়াবাসায় স্বামী আব্দুল হাই (৩২) শ্বাসরোধ করে রিপাকে হত্যা করেছে বলে নিহতের পরিবার অভিযোগ করেছেন। সৈয়দা রিপা আক্তার (১৯) উপজেলার দক্ষিণ শিহিপাশা গ্রামের সৈয়দ জসিম উদ্দিন চুন্নুর মেয়ে।
জানা যায়, রিপাকে হত্যার পর দেবর রেজাউল ও ননদ মাহমুদা আক্তার ঢাকা মেডিকেলে লাশ ফেলে পালিয়ে যায়। নিহত রিপার লাশ পুলিশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্ত শেষে তার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করে। রিপার গ্রামের বাড়ি আগৈলঝাড়া উপজেলার দক্ষিণ শিহিপাশা নিজ বাড়িতে ৭ ডিসেম্বর (বৃহস্পতিবার) সকালে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন সম্পন্ন করা হয়েছে।
রিপার পরিবারের অভিযোগসূত্রে জানা গেছে, ২০১৬ সালের ৯ ডিসেম্বর পারিবারিকভাবে বরিশাল কোতওয়ালী থানার ভেদুরিয়া গ্রামের আব্দুল বারেক হাওলাদারের ছেলে ব্যবসায়ী মো. আব্দুল হাই (৩২)’র সাথে বিয়ে হয়। বিয়ের সময় যৌতুক হিসেবে রিপার পরিবার একলক্ষ টাকার আসবাবপত্র দেয়। রিপাকে নিয়ে তার স্বামী ও তার পরিবার ঢাকায় বসবাস করত। গত ৮-৯ মাস আগে ঢাকার কেরাণীগঞ্জ বালুরচর এলাকার এক প্রবাসীর স্ত্রী শাহিদা বেগম (২৮)’র সাথে আব্দুল হাই এর পরকীয়ার সম্পর্ক গড়ে উঠে। আব্দুল হাই ব্যবসার জন্য রিপার কাছে পাঁচ লক্ষ টাকা দাবি করে। রিপার পরিবার গরীব হওয়ায় স্বামীর দাবিকৃত যৌতুকের টাকা দিতে না পারায় তাকে শারীরিকভাবে নির্যাতন চালাত।
স্বামীর পরকীয়া প্রেমে বাধা ও যৌতুকের টাকা না দেওয়ায় গত ২৪ নভেম্বর রিপাকে মারধর করে বাসা থেকে বের করে দেয়। তখন রিপা ২৫ নভেম্বর কামরাঙ্গীরচর থানায় স্বামী আব্দুল হাই, শ্বশুর আব্দুল বারেক ও শাশুড়ি মোর্শেদা বেগমের নামে সাধারণ ডায়রি করেন। থানায় অভিযোগের কারণে রিপাকে পুনরায় তার স্বামী ও পরিবারের লোকজন মারধর করে।
পরবর্তীতে ২৭ নভেম্বর রিপা পুনরায় কামরাঙ্গীরচর থানায় স্বামী আব্দুল হাই, শ্বশুর আব্দুল বারেক ও শাশুড়ী মোর্শেদা বেগম, দেবর রেজাউল ও স্বামীর পরকীয়া প্রেমিকা শাহিদা বেগমের নামে অভিযোগ দায়ের করে। এসময় পুলিশ স্বামী আব্দুল হাইকে আটক করে। রাতে দুই পরিবারের সম্মতিতে স্বামী আব্দুল হাই যৌতুকের জন্য নির্যাতন করবে না ও পরকীয়া প্রেমিকার সাথে সম্পর্ক রাখবে না বলে মুচলেকা দিলে পুলিশ তাকে ছেড়ে দেয়। কিন্তু এ ঘটনার পর রিপার উপর স্বামী ও তার পরিবারের নির্যাতন বেড়েই চলছিল।
রিপার বড় বোন সৈয়দা মার্জিয়া ও মামা পলাশ মোল্লা জানান, গত ৫ ডিসেম্বর পূর্বপরিকল্পিত ভাবে স্বামী তার পরিবারের লোকজন ও পরকীয়া প্রেমিকা শাহিদা বেগম রিপাকে গলায় ফাঁস দিয়ে হত্যা করে। পরে রিপার দেবর ও ননদ রিপাকে ঢাকা মেডিকেলে আনলে কত্যর্বরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করে। রিপার মৃত্যুর খবর পেয়ে তার স্বামীসহ পরিবারের লোকজন ঘরে তালা লাগিয়ে পালিয়ে যায়।
এ ব্যাপারে কামরাঙ্গীরচর থানার ওসি শাহিন ফকির জানান, ময়নাতদন্ত শেষে রিপোর্ট হাতে পেলে জানা যাবে এটি হত্যা না আত্মহত্যা। সে মোতাবেক আসামির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।