নিবরাসকে সাঈদ বানিয়ে মেসে তুলেন ইমাম!
প্রকাশ | ১৫ জুলাই ২০১৬, ২১:১১
ঢাকার গুলশানের হলি আর্টিসান বেকারিতে হামলাকারীদের একজন নিবরাস ইসলাম। তার পরিবারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল যে এই তরুণ গত ফেব্রুয়ারি থেকে নিখোঁজ ছিলেন।
অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে, এই সময়কালে নিবরাস ঝিনাইদহের একটি মেসে ‘সাঈদ’ পরিচয় দিয়ে ছিলেন।
স্থানীয় একাধিক ব্যক্তি জানিয়েছেন, ঝিনাইদহ সদরের সোনালীপাড়ার এক মেসে নিবরাসকে দেখেছেন তারা। তারা বলছেন, গুলশানে হামলাকারীদের ছবি গণমাধ্যমে আসার পর তারা নিবরাসকে চিনতে পারেন, তবে তারা জানতেন তার নাম সাঈদ।
নিবরাসের পরিবারের দেওয়া তথ্যের সঙ্গে মিলালে দেখা যায়, ঘর ছাড়ার পর ঝিনাইদহ শহরের হামদহ সোনালী পাড়ায় অবসরপ্রাপ্ত সেনাসদস্য কওছর আলীর মালিকানাধীন বাড়ির মেসে ছিলো নিবরাস। ওই মেসের চারটি কক্ষে মোট আটজন থাকতেন। তাদের মধ্যে নিবরাস ওরফে সাঈদ একজন। ঈদের সপ্তাহ খানেক আগে তারা মেস ছেড়ে যান, তারপর আর ফেরেনি। ঈদের ছয় দিন আগে গুলশানে হামলা হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঝিনাইদহ সরকারি কেসি কলেজের ব্যবস্থাপনা বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের এক ছাত্র বলেন, “চার মাস আগে সে (নিবরাজ) এই ছাত্রাবাসে (মেসে) উঠেছিল। পাশের মাঠে নিয়মিতই আমাদের সঙ্গে ফুটবল খেলত, ভালো ইংরেজি বলত সে। তখন আমরা জানতাম তার নাম সাঈদ। বলেছিল যে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দিতে এখানে উঠেছে। এখন ছবি দেখে বুঝলাম ওই সাঈদই নিবরাস”।
নিবরাস যে মেসে ছিলেন, তার মালিক কওছর আলীর স্ত্রী বিলকিস নাহার বলেন, "ঈদের ছুটিতে ওই মেসের আট ছাত্র চলে গিয়েছিল। তারপর আর ফেরেনি। চার মাস আগে সাঈদ (নিবরাস) সহ দুজনকে পাশের মসজিদের ইমাম মো. রোকনুজ্জামান মেসে তুলে দিয়েছিলেন। তারা কী করত, কোথা থেকে এসেছিল, আমরা কিছু জানতাম না”।
বাড়ির মালিক কওছর আলী ও ইমাম রোকনুজ্জামানের খোঁজ চাইলে বিলকিস বলেন, ঈদের আগের রাতে পুলিশ পরিচয় দিয়ে একদল লোক এসে বাড়ি ও মেস তল্লাশি করে। তারা যাওয়ার সময় কওছার ও তাদের দুই ছেলে বেনসার আলী ও বেনজির আলী, ইমাম রোকনুজ্জামান এবং সাব্বির নামে স্থানীয় এক হাফেজকে ধরে নিয়ে যায়।
তবে ঝিনাইদহ জেলার পুলিশ সুপার (এসপি) আলতাফ হোসেন জানান, তারা এদের কাউকে আটকের বিষয়ে কিছু জানেন না।
ইমাম রোকনুজ্জামান গত বছর থেকে স্থানীয় ওই মসজিদে ইমামতি করে আসছেন। তিনি যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার নাইড়া গ্রামের আইনুদ্দিনের ছেলে। ওই মসজিদের সভাপতি ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ঝিনাইদহ জেলা শাখার সভাপতি শরাফত হোসেন জোয়ার্দ্দার। তিনি বলেন, “২০১৫ সালে মসজিদের ইমাম নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি দিয়েছিলাম। চারজন আবেদন করলে আমরা পরীক্ষা নিই। রোকনুজ্জামান পাস করলে তাকে ইমাম হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল।”
নিবরাসসহ কয়েকজনের ঘটনা প্রকাশ পাওয়ার পর আরও ১০ জন নিখোঁজ যুবকের তথ্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে দেওয়া হয়েছে। এদের জঙ্গি তৎপরতায় জড়িত থাকার সন্দেহও করছেন গোয়েন্দারা। এই তালিকা প্রকাশের পর আরও কিছু তরুণ ও যুবকের নিখোঁজ থাকার খবরও তাদের পরিবারগুলো দিচ্ছে। বৃহস্পতিবার ঝিনাইদহ সদর থানায় এমন এক তরুণের সন্ধান চেয়ে সাধারণ ডায়েরি হয়েছে। ১৭ বছর বয়সী হাসান আলী নামে দশম শ্রেণির ওই শিক্ষার্থীর মা সুন্দরী বেগম বলছেন, এক বছর ধরে তার ছেলে নিখোঁজ। এখন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে নিখোঁজদের বিষয়ে জানাতে বলায় তিনি জিডি করেছেন।