ফেসবুকে 'ধর্ম অবমাননা'র অভিযোগ

আবারো সংখ্যালঘু পাড়ায় আক্রমন, অগ্নিসংযোগ, নিহত ১

প্রকাশ | ১১ নভেম্বর ২০১৭, ১৬:১৫ | আপডেট: ১১ নভেম্বর ২০১৭, ১৬:১৯

অনলাইন ডেস্ক
ছবি: প্রথম আলো

রামু, নাসিরনগরের মতো আবারো একই কায়দায় ফেসবুকে ধর্ম অবমাননার অভিযোগ তুলে পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার হরকলি ঠাকুরপাড়া গ্রামের হিন্দু সম্প্রদায়ের আটটি বাড়ি। বিক্ষোভের সময় পুলিশ-জনতা সংঘর্ষে হাবিব নামে এক যুবক নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় ৫ পুলিশ সদস্যসহ আহত হয়েছেন আরও ৩০ জন। 

পুলিশ সূত্র জানিয়েছে, গত ৫ নভেম্বর গঙ্গাচড়া উপজেলার খলেয়া ইউনিয়নের ঠাকুরপাড়া এলাকার মৃত খগেন রায়ের ছেলে টিটু রায় ফেসবুকে ‘ধর্মীয় অবমাননাকর’ স্ট্যাটাস দেন। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে কয়েক দিন ধরে ওই গ্রাম ও আশপাশ এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছিল। তবে টিটু রায় গ্রামে থাকেন না। নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় স্ত্রী-সন্তান নিয়ে বসবাস করেন।

জানা যায়, ১০ নভেম্বর (শুক্রবার) জুমার নামাজের পর রংপুর-দিনাজপুর মহাসড়কের পাগলাপীর এলাকায় এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। বেলা তিনটার দিকে হঠাৎ করে উপজেলার শলেয়া শাহ, বালাপাড়াসহ আরও কয়েকটি এলাকার কয়েক হাজার বিক্ষুব্ধ মানুষ সমবেত হয়ে বিক্ষোভ করে। বিক্ষুব্ধ জনগণ হরকলি ঠাকুরপাড়ায় অবস্থিত অভিযুক্ত টিটু রায়ের বাড়িতে আগুন দেয়। এতে তাদের তিনটি ঘর ভস্মীভূত হয়ে যায়। এরপর ওই এলাকার আরও সাতটি বাড়ির ১৫টি ঘরে আগুন দিলে সেগুলো ভস্মীভূত হয়ে যায়।

স্থানীয় সূত্র জানায়, পুলিশ বিক্ষোভকারীদের সরাতে গুলি, রাবার বুলেট ও টিয়ার শেল ছোড়ে। কয়েকজন গুলিবিদ্ধ হয়। আহতদের রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে একজনের মৃত্যু হয়। তার নাম হাবিবুর রহমান।

রংপুর মেডিকেলের ইমার্জেন্সি মেডিকেল অফিসার ডা. সুজন বলেন, এ পর্যন্ত হাসপাতালে ১৪ জন ভর্তি হয়েছেন। এদের মধ্যে গুলিবিদ্ধ ১১ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।

পুলিশ জানায়, আহতদের মধ্যে রফিকুল ইসলাম নামে এক পুলিশ কনস্টেবল রয়েছেন। তার অবস্থা গুরুতর।

আজ ১১ নভেম্বর (শনিবার) সকাল আটটার দিকে হরকলি ঠাকুরপাড়া গ্রাম ঘুরে দেখা গেল, ঘরপোড়া এই মানুষগুলোর এখনো শঙ্কা কাটেনি। পুড়ে যাওয়া ঘরগুলোর ধ্বংসস্তূপের সামনে বসে আছেন অনেকে। রাতভর উৎকণ্ঠায় জেগে ছিলেন শতাধিক মানুষ। কোথায় কোন ফেসবুকে কে কি লিখেছে, কিসের জেরে তাদের সহায় সম্বল পুড়ে ছাই হলো, জানেন না তারা।

জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ ওয়াহেদুজ্জামান বলেন, আমি ঘটনা শুনেছি। ইউএনওকে (উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা) ঘটনাস্থলে পাঠিয়েছি। ঘটনার সার্বিক খোঁজখবর নিচ্ছি।

ইউএনও জিয়াউর রহমান বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে ঘর নির্মাণের সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। ১০টি পরিবারকে তিন হাজার করে টাকা সাহায্য ও ঘর নির্মাণের জন্য ঢেউটিন, শুকনো খাবার দেওয়া হবে। ঘর তৈরির জন্য যা প্রয়োজন, তা দেওয়া হবে।

গঙ্গাচড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জিন্নাত আলী বলেন, ওই ঘটনায় ছয়জনকে আটক করা হয়েছে। তবে এখনো কোনো মামলা করা হয়নি। মামলার প্রস্তুতি চলছে।