‘রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে চাপ প্রয়োগ করুন’
প্রকাশ | ০৫ নভেম্বর ২০১৭, ১৯:৪২
রাখাইন থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আসা রোহিঙ্গাদের স্বদেশে ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য মিয়ানমারকে চাপ দিতে কমনওয়েলথভুক্ত দেশগুলোর সংসদ সদস্যদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘মিয়ানমারকে তার নাগরিকদের ওপর নির্যাতন বন্ধ করতে। বাংলাদেশে আসা রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে চাপ প্রয়োগ করুন।’
৫ নভেম্বর (রবিবার) সকালে রাজধানীর মানিক মিয়া এভিনিউয়ে জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় কমনওয়েলথ পার্লামেন্টারি কনফারেন্সের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত বিশ্ব নেতাদের উদ্দেশে তিনি এ কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর অমানবিক নির্যাতন এবং তাদের দেশ ছাড়তে বাধ্য করা শুধু এ অঞ্চলে নয়,এর বাইরেও অস্থিরতা তৈরি করছে। মিয়ানমার সরকারের এমন আচরণের জন্য সেখান থেকে ৬ লাখ ২২ হাজারেরও বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। ১৯৭৮ সাল থেকে বিভিন্ন সময়ে আসা আরও প্রায় ৫ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অবস্থান করছে।’
তিনি বলেন, মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে সাময়িকভাবে আমরা এই বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গা নাগরিককে আশ্রয় দিয়েছি। আপনাদের অনুরোধ জানাবো রোহিঙ্গা ইস্যুতে বিশেষ গুরুত্বের সঙ্গে আলোচনা করুন।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলাদেশকে দারিদ্র্য, ক্ষুধামুক্ত, অসাম্প্রদায়িক ও গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে গড়ে তোলার জন্য আমরা নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছি। জাতীয় সংসদ,নানা স্তরের স্থানীয় সরকারসহ আমরা গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালী করেছি। ’
গণমাধ্যমের স্বাধীনতা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থার অতন্দ্র প্রহরী স্বাধীন এবং শক্তিশালী গণমাধ্যম। বিগত বছরগুলোয় বাংলাদেশের গণমাধ্যম ব্যাপকভাবে বিকশিত হয়েছে। নিশ্চিত করা হয়েছে তাদের স্বাধীনতা। মানুষের তথ্যপ্রাপ্তির অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের মূল লক্ষ্য গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থার ভিত শক্তিশালী করার মাধ্যমে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তোলা। সে লক্ষ্যে আমরা রূপকল্প-২০২১ প্রণয়ন করি। সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনার ভিত্তিতে আমরা আমাদের কর্মসূচিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি।’
শেখ হাসিনা বলেন, সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়-এই নীতির ভিত্তিতে আমাদের পররাষ্ট্র নীতি পরিচালিত হয়। বিশেষ করে প্রতিবেশী দেশসমূহের সঙ্গে আমরা সব সময়ই সুসম্পর্ক জোরদার করার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছি। এর ফলে আমরা ভারতের সঙ্গে গঙ্গা নদীর পানি চুক্তি এবং স্থল সীমানা চুক্তি সম্পাদনের মাধ্যমে দীর্ঘদিনের বিরোধের শান্তিপূর্ণ নিষ্পত্তি করতে পেরেছি। একইভাবে মিয়ানমার এবং ভারতের সঙ্গে সমুদ্রসীমা নির্ধারণ করা সম্ভব হয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, ক্ষুধা-দারিদ্র্য নিরসনের সংগ্রামের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে সন্ত্রাস এবং জঙ্গিবাদ মোকাবিলার নতুন সংগ্রাম। জঙ্গিবাদ আজ আর কোনও নির্দিষ্ট দেশের সমস্যা নয়, এটি বৈশ্বিক সমস্যায় পরিণত হয়েছে। আমাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে জঙ্গিবাদ সমস্যার মোকাবিলা করতে হবে।
তিনি বলেন, জলবায়ুর বিরূপ প্রভাবের ফলে আমরাই সবচেয়ে বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছি। এ বছর অতিবৃষ্টিসহ কয়েকবার বন্যায় ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে ফসলের। জলবায়ুর বিরূপ প্রভাব মোকাবিলার জন্য যেসব সহায়তার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে, সেগুলোর দ্রুত বাস্তবায়ন প্রত্যাশা করছি।
তিনি বলেন, আসুন এই পৃথিবীকে বিশ্ববাসীর জন্য সুখময়, শান্তিপূর্ণ ও সমৃদ্ধ বাসভূমিতে পরিণত করি। বাংলাদেশে আপনাদের অবস্থান আনন্দময় এবং এ সম্মেলনের ফলপ্রসূ হোক।