বাবাকে উত্ত্যক্তকারীর ‘মারপিট’, স্কুলছাত্রীর ‘আত্মহত্যা’
প্রকাশ | ১৫ অক্টোবর ২০১৭, ১৫:৩৮
খুলনার সরকারি করোনেশন মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী ও সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত সার্জেন্ট রবিউল ইসলামের মেয়ে শামসুন নাহার চাঁদনীকে স্কুলে আসা-যাওয়ার পথে উত্ত্যক্ত করত বখাটে শুভ। এ ঘটনার প্রতিবাদ করে ওই শিক্ষার্থীর বাবা মো. রবিউল ইসলাম। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে শুভ ও শুভর মা লোকজন নিয়ে চাঁদনীদের বাড়িতে ঢুকে মারধর করে বাবা মো. রবিউল ইসলামকে এবং হুমকি দেন চাঁদনীকে তুলে নিয়ে যাওয়ার।
বাবাকে হেনস্তার এই দৃশ্য দেখে আত্মহত্যা করেছে মেয়ে। গত শুক্রবার রাতে খুলনার বটিয়াঘাটা উপজেলার হরিণটানা এলাকার দক্ষিণপাড়ায় এ ঘটনা ঘটে। তিন ভাইবোনের মধ্যে সবার ছোট ছিল চাঁদনী। সে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষা সমাপনী (পিইসি) পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়।
এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শুভর বিরুদ্ধে ওই এলাকায় আরও অনেক মেয়েকে উত্ত্যক্ত করার অভিযোগ রয়েছে। কিছুদিন আগে মধ্যপাড়া এলাকার দশম শ্রেণির আরেক শিক্ষার্থীকে উত্ত্যক্ত করায় এলাকায় তাকে নিয়ে সালিস হয়। নাম প্রকাশ না করার শর্তে উত্ত্যক্তের শিকার ওই শিক্ষার্থীর মা অভিযোগ করে বলেন, ওই এলাকায় আসার পর থেকেই শুভ তাঁর মেয়েকে উত্ত্যক্ত করছিল। পরে সালিস ডেকে শুভকে সতর্ক করা হয়।
প্রত্যক্ষদর্শী গ্রামবাসী জানায়, ১৩ অক্টোবর (শুক্রবার) রাতে ক্ষমতাসীন দলের নেত্রী হিসেবে পরিচিত মাফিয়া কবীর বখাটে শুভ ও তার বাবা শাহ আলম এবং বখাটের সাঙ্গোপাঙ্গদের নিয়ে চাঁদনীদের বাড়িতে যায়। সবাইকে বাড়ির বাইরে রেখে মাফিয়া কবীর চাঁদনীদের বাড়ির ভেতরে ঢোকে। ঘরে ঢুকেই মাফিয়া চাঁদনীর বাবা রবিউলকে ধমক দিয়ে জিজ্ঞাসা করে, তিনি কেন শুভর বাড়িতে নালিশ নিয়ে গেলেন। মাফিয়া দাবি করতে থাকে, শুভ চাঁদনীকে উত্ত্যক্ত করে না, উল্টো চাঁদনীই শুভকে ফোন দেয়। এ সময় চাঁদনী ফোন করার কথা অস্বীকার করলে মাফিয়া তাকে গলাধাক্কা ও চড়-থাপ্পড় দেয়। মেয়েকে মারার প্রতিবাদ করায় মাফিয়া কবীর রবিউল ইসলামের ওপর ক্ষিপ্ত হয় এবং মেয়েকে তুলে নেওয়ার হুমকি দেয়। তখন ঘরের বাইরে অবস্থান নেওয়া শুভ, শুভর বাবা শাহ আলমসহ চার-পাঁচজন রবিউল ইসলামকে মারধর করে। এ সময় নিজ ও পরিবারের ইজ্জত বাঁচাতে চাঁদনী একটি কক্ষে ঢুকে দরজা আটকে সিলিং ফ্যানের সঙ্গে ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করে। পরিবারের লোকজন টের পেয়ে চিৎকার-চেঁচামেচি শুরু করলে আশপাশের লোকজন এগিয়ে এলে অপহরণচেষ্টাকারীরা পালিয়ে যায়।
এদিকে ঘটনার পর শুভদের বাড়িতে গিয়ে কাউকে পাওয়া যায়নি। সেই বাড়ির ভাড়াটে মাছুরা বেগম বলেন, শুক্রবার রাত ৯টার দিকে শুভর মা বাড়ি থেকে বেরিয়ে যান। পরে রাত সাড়ে ১১টার দিকে পুলিশ গিয়ে কাউকে না পেয়ে বাড়িতে তালা লাগিয়ে গেছে।
রবিউল ইসলাম জানান, শুভ নামের একটি ‘বখাটে’ ছেলে চাঁদনীকে উত্ত্যক্ত করত। এই ঘটনা জানার পর তিনি বিষয়টি শুভর মা-বাবাকে জানান। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে শুক্রবার শুভ ও শুভর মা তাকে অপমান করেন এবং চাঁদনীকে তুলে নিয়ে যাওয়ার হুমকি দেন। বাবাকে অপমান করার সহ্য করতে না পেরে সে আত্মহত্যা করেছে।
চাঁদনীর মা ফিরোজা বেগম অভিযোগ করেন, এর আগেও শুভ আরেকটি মেয়েকে উত্ত্যক্ত করত। এ নিয়ে সালিশও হয়েছে। তারপরও শুভ এ কাজ থেকে বিরত থাকেনি।
স্থানীয় জলমা ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য শহীদুল ইসলাম লিটন বলেন, শুভর পুরো পরিবারটির বিরুদ্ধে এলাকায় নানা খারাপ কাজের অভিযোগ রয়েছে। এর আগে চাঁদনীর বাবাসহ অনেকেই শুভকে নিষেধ করলেও সে শোনেনি।
নগরীর লবণচরা থানার ওসি মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, হরিণটানা প্রাথমিক বিদ্যালয় এলাকায় নিজ বাড়ি থেকে শুক্রবার রাতে শামসুন নাহার চাঁদনী (১২) নামের মেয়েটির ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
মো. শফিকুল ইসলাম জানান, এ ঘটনায় চাঁদনীর বাবা রবিউল ইসলাম বাদী হয়ে বখাটে শুভসহ চার জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছেন। এরই মধ্যে মাফিয়াকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছে। আর ময়নাতদন্ত শেষে চাঁদনীর লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। শনিবার বিকেলে নগরীর নিরালা কবরখানায় লাশ দাফন করা হয়েছে।
বটিয়াঘাটা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক অনুপ গোলদার জানান, মাফিয়া কবীর আওয়ামী লীগের কোনো কমিটিতে নেই। সে আওয়ামী লীগের সমর্থনে গত ইউপি নির্বাচনে জলমা ইউপির সংরক্ষিত ৩ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার পদে নির্বাচন করে পরাজিত হয়।