দীর্ঘ ৩১ বছর পর ধর্ষণের অভিযোগ ও স্ত্রীর মর্যাদা দাবি
প্রকাশ | ০৭ অক্টোবর ২০১৭, ১৬:১৭
দীর্ঘ ৩১ বছর পর ধর্ষণের অভিযোগ, স্ত্রীর মর্যাদা এবং ঔরসজাত সন্তানের স্বীকৃতি আদায়ের জন্য আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন এক গৃহপরিচারিকা। ৫ অক্টোবর (বৃহস্পতিবার) চুয়াডাঙ্গার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১ আদালতে মামলা দায়ের করেন তিনি। চুয়াডাঙ্গার মানবাধিকার সংগঠন ‘মানবতা’র আইনি সহায়তায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলাটি করা হয়।
মামলায় দামুড়হুদা উপজেলার সদর ইউনিয়নের চিৎলা গোবিন্দহুদা গ্রামের মৃত সামছুদ্দীন বিশ্বাসের ছেলে আজিজুর রহমান ওরফে পচা হুজুরকে আসামি করা হয়েছে। আদালতের বিচারক, জেলা ও দায়রা জজ রবিউল ইসলাম মামলাটি আমলে নিয়ে দামুড়হুদা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রফিকুল হাসানকে তদন্ত করে আদালতে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।
মামলার আরজিতে বাদী উল্লেখ করেছেন, ১৯৮৬ সালের মাঝামাঝি সময় থেকে তিনি প্রতিবেশী সামছুদ্দিন বিশ্বাসের বাড়িতে ঝিয়ের (গৃহপরিচারিকা) কাজ করতেন। ওই বাড়িতে কাজ করার সময় গৃহকর্তার ছেলে আজিজুর রহমান (সে সময় ২০-২১ বছর বয়স) তাকে উত্ত্যক্ত করতেন। এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৮৬ সালের ১১ নভেম্বর রাত ১০টার দিকে আজিজুর রহমান তার (গৃহপরিচারিকার) ঘরে ঢুকে বিয়ের আশ্বাস দিয়ে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপনের চেষ্টা করেন। কিন্তু এতে তিনি রাজি না হলে তাকে মেরে ফেলার হুমকি দিয়ে জোরপূর্বক ধর্ষণ করেন আজিজুর। তবে লোকলজ্জার ভয়ে তিনি ঘটনাটি তখন কাউকে বলেননি।
পরবর্তীতে ধর্ষণের কারণে তিনি অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়েন। এসময় অভিযুক্ত আজিজুর রহমান গর্ভপাত ঘটানোর জন্য তাকে চাপ দিতে থাকেন। কিন্তু ওই নারী তা না করায় পরে এলাকাবাসীর চাপে অন্তঃসত্ত্বা থাকা অবস্থায় বাদীকে কাজী ডেকে বিয়ে করলেও আজিজুর তাকে স্ত্রীর মর্যাদা দেননি।
ধর্ষণের শিকার ঐ নারী জানান, ১৯৮৭ সালের ২ সেপ্টেম্বর তিনি এক কন্যাসন্তানের জন্ম দেন। সেসময় সামাজিক চাপে আজিজুর রহমান তাকে কিছু জমি লিখে দেন। সেই মেয়ের বয়স ১৮ বছর হলে ওই জমি বিক্রি করে তাকে বিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু গত বছর ‘জন্মের ঠিক নাই’ উল্লেখ করে তাকে তালাক দিয়ে দুই সন্তানসহ বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেন মেয়ের স্বামী।
ঐ নারী জানান, চলতি বছরে তিনি ও তার মেয়ে চুয়াডাঙ্গার মানবাধিকার সংগঠন মানবতার কাছে আইনি সহায়তা চান। কিন্তু আজিজুর রহমান সংগঠনটির কাছে বাদীকে স্ত্রীর মর্যাদা এবং তার কন্যাকে সন্তানের স্বীকৃতি দেবেন বলে কালক্ষেপণ করতে থাকেন। পরে গত ১ অক্টোবর দামুড়হুদা মডেল থানায় মামলা করতে গেলে থানা কর্তৃপক্ষ আদালতে মামলা করার পরামর্শ দেয়।
এদিকে মামলার আসামি আজিজুর রহমান দাবি করেন, ১৯৮৬ সালের এই ঘটনায় সে সময় সামাজিকভাবে উভয় পক্ষের মধ্যে সমঝোতার পর আদালতের মাধ্যমে নিষ্পত্তি করা হয়েছিল। এত দিন পর কেন মামলা হচ্ছে, তা তার বোধগম্য নয়।