চট্টগ্রামে ভয়াবহ জঙ্গি হামলার পরিকল্পনা নস্যাৎ
প্রকাশ | ১৩ জুলাই ২০১৬, ১১:১২
সীতাকুণ্ড উপজেলার বাড়বকুণ্ডস্থ চিটাগাং ক্যামিকেল কমপ্লেক্সে কর্মরত বিদেশি নাগরিকদের হত্যার পরিকল্পনা নস্যাৎ করে দিয়েছে পুলিশ। এছাড়া ঢাকার গুলশান ও কিশোগঞ্জের শোলাকিয়ার মতো চট্টগ্রামের বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠান কিংবা বিদেশি নাগরিকদের ওপর হামলার পরিকল্পনাও ছিল ওই জঙ্গিদের, এমনটাই দাবি পুলিশের।
শনিবার (৯ জুলাই) রাতে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলার বাড়বকুণ্ড এলাকা থেকে আনসারউল্লাহ বাংলা টিমের চার সদস্যকে গ্রেপ্তারের পর এসব তথ্য জানতে পারে পুলিশ। তবে তাদের গ্রেপ্তারের মধ্য দিয়ে সেই হামলার সব পরিকল্পনা নস্যাৎ করে দেওয়ার দাবি পুলিশের।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন মুসাইব ইবনে উমায়ের (২৫), মো. শিপন ওরফে ফয়সাল (২৫), খোরশেদুল আলম (৩১) ও রাসেল মো. ইসলাম (৪১)। তারা আনসারুল্লা বাংলা টিমের নেতা মুফতি জসীম উদ্দিন রাহমানীর অনুসারী বলে জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে। সন্ত্রাস দমন আইনে তাদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। মঙ্গলবার (১২ জুলাই) তাদের আদালতে হাজির করে ১০ দিনের রিমান্ডের আবেদনের পর আদালত ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে।
সীতাকুণ্ড মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ইফতেখার হাসান জানিয়েছেন, গ্রেপ্তার হওয়া আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের চার সদস্যের কাছ থেকে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে। বিশেষ করে চট্টগ্রামের বিভিন্ন মিল-কারখানায় কর্মরত বিদেশি নাগরিক, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ বিভিন্ন ধর্মীয় সম্প্রদায়ের উপর জঙ্গিরা হামলা চালানোর পরিকল্পনা নিয়ে মাঠে নেমেছিল। এ মাসের মধ্যে এই হামলার ছক কষছিল তারা।
তাদের কাছ থেকে ৪টি চাপাতি, ৪টি কিরিচ, ১টি ল্যাপটপ, ১টি ট্যাব ও ৫টি মোবাইল সেটসহ সরকার বিরোধী অডিও, ভিডিও উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
চট্টগ্রামের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (উত্তর) মোস্তাফিজুর রহমান বলেছেন, ‘দেশকে অস্থিতিশীল করতে ও জঙ্গি তৎপরতাসহ সীতাকুণ্ড অঞ্চলে স্থানীয় কিছু লোকজনের সহায়তা নিয়ে বাড়বকুণ্ডে জড়ো হয়েছিল। যারা সীতাকুণ্ডে ওই চারজনকে আশ্রয় দিয়েছিল, তাদেরও ধরতে অভিযান চলছে।’
এই দিকে জঙ্গিদের অন্যতম আব্দুল্লাহ প্রকাশ রাজীবকে এখনো আটক করা যায়নি। তবে তার বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে বেশ কিছু গোপন তথ্য উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। তার বাড়ি সীতাকুণ্ডের বাড়বকুণ্ড ইউনিয়নের মান্দারিটোলা এলাকায়।
পুলিশ জানিয়েছে, গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে মুসাইব ইবনে উমায়ের বছর দুয়েক আগে ধর্মান্তরিত হন। তিনি ইয়ং ওয়ান গার্মেন্টসে কোয়ালিটি পরিদর্শক হিসাবে কর্মরত। তার পূর্বের নাম পিকলু দাশ। পিতার নাম অরুণ কান্তি দাশ। বাড়ি পটিয়ার ছনহরায়। খোরশেদুল আলমের বাড়ি আনোয়ারার হাইলধরে। তার পিতার নাম আবদুস শুক্কুর (আইয়ুব আলী সওদাগরের বাড়ি)।
খোরশেদ বর্তমানে সীতাকুণ্ডের কদমরসুল এলাকার পেনিনসুলা শিপ ব্রেকিং ইয়ার্ডে সিকিউরিটি ইনচার্জ হিসাবে কর্মরত। ফয়সাল হোসেন শিপন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবার সৈয়দাবাদের আবদুল আজিজের পুত্র। বর্তমানে নগরীর আশকারদীঘি এলাকার সিদ্দিকী কলোনির বাসিন্দা। রাসেল মোহাম্মদ ইসলাম সীতাকুণ্ডের সোনাইছড়ি এলাকার জোড়ামতল এলাকার মৃত সফিকুল ইসলামের পুত্র। বর্তমানে খাতুনগঞ্জের মাহমুদ ডেনিম্স লি. নামক প্রতিষ্ঠানে হিসাবরক্ষক হিসাবে কর্মরত। এ চারজন একে অপরকে না চিনলেও তারা সবাই একই মতবাদে বিশ্বাসী।
পুলিশ জানায়, গুলশান ও শোলাকিয়ার ন্যায় চট্টগ্রাম অঞ্চলে নিজেদের অবস্থান জানান দিতে গ্রেপ্তার হওয়া জঙ্গিরা চট্টগ্রামে বড় ধরনের নাশকতার পরিকল্পনা করছিল। তারা বিদেশী নাগরিক ও পুলিশকে টার্গেট করে হামলার পরিকল্পনা করেছিল। কিন্তু গোয়েন্দা সংস্থার লোকেরা ঘটনাটি উদ্ঘাটন করতে পারায় তাদের পরিকল্পনা নস্যাৎ হয়ে গেছে।
রাসেল মোহাম্মদ ইসলামের স্ত্রী সার্জিনা আক্তার বলেন, তার স্বামীকে শনিবার আটক করেছে পুলিশ। সোমবার সীতাকুণ্ড থানা পুলিশ তার বাড়ি থেকে রাসেলের ব্যবহৃত ল্যাপটপ জব্দ করে নিয়ে আসে। সীতাকুণ্ড থানার এস আই রফিকুল ইসলাম জামান সাংবাদিকদের ল্যাপটপ জব্দের বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ল্যাপটপটি নিয়ে তদন্ত হচ্ছে।
এদিকে চট্টগ্রামে আরো আনসারউল্লাহ বাংলা টিমের সদস্য থাকতে পারে এবং তারাও যাতে বড় ধরনের কোনো হামলা না করতে পারে সেদিকেও খেয়াল রাখছে পুলিশ। সেই সঙ্গে সীতাকুণ্ডের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে বলে জানান চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ সুপার এ কে এম হাফিজ আক্তার।
তিনি জানান, গ্রেপ্তারকৃতরা জিজ্ঞসাবাদে আনসার উল্লাহ বাংলা টিমের সক্রিয় সদস্য এবং জসিম উদ্দিন রাহমানির অনুসারী বলে জানিয়েছে। তাদের ইতোমধ্যে আদালতের মাধ্যমে পাঁচদিনের রিমান্ডে আনা হয়েছে। এখন জিজ্ঞাসাবাদে তাদের কাছ থেকে আরো তথ্য আদায় করা হবে বলে জানান তিনি।