ধর্ষকের সঙ্গে বিয়ে, ধর্ষিতাকেই জরিমানা!
প্রকাশ | ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৭, ১৫:০৫
টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর উপজেলায় সপ্তম শ্রেণির এক শিক্ষার্থীকে ধর্ষণের অভিযোগ পাওয়া গেছে। অভিযুক্ত ধর্ষক রেজাউল করিম উপজেলার ধুবলিয়া গ্রামের আব্দুল মজিদের ছেলে।
এ ঘটনায় ২৪ সেপ্টেম্বর (রবিবার) দুপুরে ধর্ষণের শিকার শিক্ষার্থীর পিতা বাদী হয়ে ভূঞাপুর থানায় ধর্ষক রেজাউল করিমসহ চারজনের নামে মামলা দায়ের করেছেন। মামলায় তিন ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে সালিশ করে ধর্ষণকারীর সঙ্গে তার মেয়েকে বিয়ে দেয়া ও ধর্ষিতাকে আড়াই লাখ টাকা জরিমানা করার মাধ্যমে ঘটনা ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টার অভিযোগ করেছেন।
এদিকে চেয়ারম্যানগণসহ আসামীপক্ষ প্রভাবশালী হওয়ায় চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে ধর্ষণের শিকার হতদরিদ্র পরিবারটি।
মামলা সূত্রে জানা যায়, উপজেলার সপ্তম শ্রেণির এক শিক্ষার্থীকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ধুবলিয়া গ্রামের রেজাউল করিম ধর্ষণ করে। এর আগে প্রায় ৬ মাস থেকে ওই শিক্ষার্থীকে কু-প্রস্তাব দিয়ে আসছিল রেজাউল। গত ৫ সেপ্টেম্বর রাতে মোবাইলে ওই শিক্ষার্থীকে বাড়ির বাইরে আসতে বলে। পরে বাড়ির পাশের নির্জনস্থানে নিয়ে ধর্ষণ করে। এ সময় মেয়েটির চিৎকারে স্থানীয়রা এগিয়ে এসে ধর্ষককে আটক করে। পরে ধর্ষকের সমর্থকরা দেশীয় অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে তাকে ছিনিয়ে নিয়ে যায়। ধর্ষণের বিষয়টি স্থানীয় ফলদা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাইদুল ইসলাম তালুকদার দুদুকে জানানো হয়।
১৬ সেপ্টেম্বর ওই ইউপি চেয়ারম্যান তার বাড়িতে পার্শ্ববর্তী গাবসারা ইউপি চেয়ারম্যান মনিরুজ্জামান মনির ও ঘাটাইল উপজেলার লোকেরপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান শরিফুল ইসলাম শরিফসহ এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিদের উপস্থিতিতে সালিশের আয়োজন করে। সালিশে ফলদা ইউপি চেয়ারম্যান সাইদুল ইসলাম তালুকদারের সভাপতিত্বে গাবসার ইউপি চেয়ারম্যান মনির ও লোকেড়পাড়া ইউপি চেয়ারম্যান ধর্ষণকারীর সঙ্গে মেয়েটির বিয়ে ও তার পরিবারকে যৌতুক হিসাবে আড়াই লাখ টাকা ধার্য করে রায় দেন।
ধর্ষণের শিকার শিক্ষার্থীর পিতা জাহিদুল ইসলাম জানান, "ধর্ষণের ঘটনা ধামাচাপা দিতে স্থানীয় তিন ইউপি চেয়ারম্যান সালিশের আয়োজন করে। আমাদের পরিবার দরিদ্র তাই আমাদের বিরুদ্ধে উল্টো রায় দিলে সালিশ বর্জন করি। এতে ওই পক্ষ ক্ষিপ্ত হয়ে নানা ধরণের হুমকি দিলে ২৪ সেপ্টেম্বর (রবিবার) মামলা করি"।
প্রভাবশালী মহল এ ঘটনায় জড়িত থাকায় সঠিক বিচার পাওয়া নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে মেয়েটির স্বজনরা। এছাড়া ধর্ষণকারী ও সালিশকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবী করেছেন তারা।
এদিকে সালিশ ও জুড়ি বোর্ডের দেয়া রায়ে ক্রটির কথা স্বীকার করে পরিবারটিকে আইনের আশ্রয় নিতে পরামর্শ দিয়েছেন ফলদা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান সাইদুল ইসলাম তালুকদার।
ভূঞাপুর থানা অফিসার ইনচার্জ (ওসি) একেএম কাউছার চৌধুরী জানান, ধর্ষণের ঘটনায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে ধর্ষকসহ চারজনের নাম উল্লেখ করে থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। ধর্ষণের ঘটনায় চেয়ারম্যানরা সালিশের আয়োজন করেছিল বলে বাদী মামলায় উল্লেখ করেছে। এ জাতীয় ঘটনায় সালিশি আয়োজন দণ্ডনীয় অপরাধ। অপরাধ প্রমাণিত হলে কাউকেই ছাড় দেয়া হবে না। আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।