প্রেমিকার হাতে লাঞ্ছিত হয়ে প্রেমিকের আত্মহত্যার অভিযোগ
প্রকাশ | ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৭, ১৮:০৮
প্রেমিকার লোকজনের হাতে পিতামাতাসহ আহত হওয়ার মানসিক যন্ত্রণা সইতে না পেরে লাবিব ইসলাম নামে আদমজী ক্যান্টনমেন্ট কলেজের এক মেধাবী ছাত্র আত্মহত্যা করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এই ঘটনায় লাবিবের প্রেমিকা ভিকারুননিসা নূন কলেজের ছাত্রী মেহজাবিনের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছে লাবিবের পরিবার। এ বিষয়ে আত্মহত্যায় প্ররোচিত করার অভিযোগে মেহজাবিনের বিরুদ্ধে মামলা করতে আগ্রহী লাবিবের পিতা।
এ বিষয়ে লাবিবের (১৭) বোন আনিকা আন নূর বলেন, তারা রাজধানীর মিরপুর ডিওএইচএসের ১২ নম্বর সেকশনের ৭ নম্বর সড়কের ৪০১ নম্বর বাড়িতে বসবাস করেন। তাদের দুই বোনের একমাত্র ভাই ছিল লাবিব। লাবিব আদমজী ক্যান্টনমেন্ট কলেজে উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণীতে বিজ্ঞান বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্র ছিল। লাবিবের সঙ্গে ভিকারুননিসা নূন স্কুল এ্যান্ড কলেজের উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণীর প্রথম বর্ষের মেধাবী ছাত্রী মেহজাবিনের প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। মেহজাবিন মগবাজার টিএ্যান্ডটি কলোনিতে পরিবারের সঙ্গে বসবাস করে বলে জানা গেছে। টানা ছয় মাস তাদের মধ্যে গভীর প্রেমের সম্পর্ক ছিল।
আনিকা বলেন, সম্প্রতি লাবিবের সঙ্গে তার প্রেমের সম্পর্কে টানাপোড়েন চলছিল। এ নিয়ে তার ভাইয়ের সঙ্গে মেয়েটির প্রায়ই তর্ক চলছিল। মেয়েটি লাবিবের সঙ্গে আর সম্পর্ক রাখতে চাচ্ছিল না। কিন্তু লাবিব মেয়েটির সঙ্গে সম্পর্ক রাখতে আগ্রহী ছিল। এমন টানাপোড়েনের কারণে লাবিব লেখাপড়ায় অমনোযোগী হয়ে পড়লে বিষয়টি আব্বা-আম্মাসহ পরিবারের সবাই বুঝতে পারে। পূর্বপরিচিত হওয়ায় গত কয়েকদিন ধরে আব্বা-আম্মা মেয়েটির সঙ্গে আলাপ-আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছিল। কথাবার্তার একপর্যায়ে মেয়েটি সরাসরি কথা বলতে লাবিবকে নিয়ে বেইলী রোডের পাশে স্কাইভিউ পয়েন্টের ছাদে থাকা রেস্টুরেন্টে আসতে বলে। কথা মোতাবেক লাবিবের পিতা আনিসুল ইসলাম, মা লায়লা ইসলাম ও লাবিব আর লাবিবের এক বন্ধুকে নিয়ে সেখানে যান।
কিন্তু গত ১১ সেপ্টেম্বর (সোমবার) সন্ধ্যা ছয়টার দিকে সেখানে সাক্ষাত করতে গেলে মেহজাবিন চিৎকার-চেঁচামেচি করে ব্যাপক শোরগোল করে। এ সময় সেখানে আগ থেকে বসে থাকা মেহজাবিনের পক্ষের অন্তত ২০ জন লাবিব, তার পিতামাতা ও বন্ধুকে বেধড়ক মারধর করে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে হোটেল কর্তৃপক্ষ লাবিবের বন্ধু আর বাবা-মাকে কোনমতে রক্ষা করতে পারে। কিন্তু ততক্ষণে মেহজাবিনের লোকজন লাবিবকে টেনে-হিঁচড়ে নিয়ে মারাত্মকভাবে আঘাত করে। পরে হোটেলের লোকজন সবাইকে উদ্ধার করে। তারা গুলশান ইউনাইটেড হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফেরেন।
আনিকা জানান, এ নিয়ে রাতভর বাসায় আলাপ-আলোচনা চলতে থাকে। ভোর চারটার দিকে লাবিব তার রুমে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দেয়। এর কয়েক মিনিট পর থেকেই লাবিবকে ডাকাডাকি করছিলেন বাড়ির লোকজন। কিন্তু কোন সাড়াশব্দ পাচ্ছিলেন না। পরে দরজা ভেঙ্গে ঝুলন্ত অবস্থায় লাবিবকে উদ্ধার করে দ্রুত গুলশান ইউনাইটেড হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে দায়িত্বরত চিকিৎসকরা লাবিবকে মৃত ঘোষণা করেন। পরদিন সকাল নয়টার দিকে পুলিশ হাসপাতাল থেকে লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠায়। ময়নাতদন্ত শেষে বিকেল পাঁচটার দিকে লাবিবের লাশ তার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
আনিকার দাবি, প্রেমিকার লোকজনের হাতে পিতা-মাতার আহত হওয়ার মানসিক যন্ত্রণা সইতে পারেনি লাবিব। মূলত এজন্যই লাবিব অভিমানে ও কষ্টে আত্মহত্যা করতে পারে।
একমাত্র পুত্রের মৃত্যুতে মাহজাবিনকে দায়ী করে তার শাস্তির দাবি করেছেন লাবিবের পরিবারের সবাই।