ষোড়শ সংশোধনী গ্রহণযোগ্যতা পায়নি: প্রধানমন্ত্রী
প্রকাশ | ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৭, ১৪:১৬
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং সংসদ নেতা দেশের গণতন্ত্রকে সমুন্নত রাখার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী মামলার রায় কারো কাছেই গ্রহণযোগ্যতা পায়নি।
তিনি বুধবার জাতীয় সংসদে সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের জন্য আনিত প্রস্তাবের সমর্থনে প্রদত্ত বক্তৃতায় একথা বলেন।
প্রধান বিচারপতির উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন, রায়ে সংসদকে এভাবে হেয় প্রতিপন্ন করা, মহামান্য রাষ্ট্রপতিকে হেয় করা বা তার ক্ষমতা কেড়ে নেয়ার চেষ্টা, জাতির পিতার সম্পর্কে কথা বলা বা আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রাম বা মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে প্রশ্ন তোলা- এটাতো একজন জনপ্রতিনিধি হিসেবে বা একজন স্বাধীন দেশের নাগরিক হিসেবে কারো কাছেই গ্রহণযোগ্য নয়।
শেখ হাসিনা বলেন, কাজেই যে রায় দেয়া হয়েছে, তা কারো কাছেই গ্রহণযোগ্যতা পায়নি। উনি (প্রধান বিচারপতি) তার রায়ে আর একটি বিষয় উল্লেখ করেছেন, কেবিনেট যেভাবে সিদ্ধান্ত নেয় সেভাবে নাকি সংসদ চলে।
সরকার প্রধান বলেন, এটা সম্পূর্ণ ভুল ব্যাখ্যা সংসদ চলে সংবিধান মোতাবেক এবং সংসদ কিভাবে চলবে সেখানে তার কার্যপ্রণালী বিধিও দেয়া রয়েছে। আর এই কার্যপ্রণালী বিধি অনুযায়ী কার্যউপদেষ্টা কমিটি রয়েছে। যার সভাপতিত্ব করেন স্পিকার। সংসদ কতদিন চলবে, কি কি আলোচনা হবে- তার সবকিছুই কার্যউপদেষ্টা কমিটিতে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। কাজেই এখানে কেবিনেটের কোন ভূমিকাই নেই। মানে উনি এই বিবিধ ধরনের কথা বলতে গিয়ে নিজেকেও প্রশ্নবিদ্ধ করেছেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রধান বিচারপতি আমাদের পার্লামেন্ট, গণতন্ত্র- সবকিছুকেই একটি প্রশ্নের মুখে ঠেলে দিয়েছেন। কাজেই এখানে তার উদ্দেশ্য কি সেটাই আমার প্রশ্ন।
শেখ হাসিনা বলেন, কাজেই আমি এটুকুই বলতে চাই যে, এই সংসদই সার্বভৌম এবং পার্লামেন্টই সংবিধান রচনা করে। পার্লামেন্টই জনগণের অধিকার সুরক্ষিত করে এবং এই পার্লামেন্ট গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠিত করে।
তিনি বলেন, আর এই পার্লামেন্ট যে আইন পাস করে সেই আইন দ্বারাই বিচার বিভাগ এবং নির্বাহী বিভাগ চলে। আইন সভা, বিচার বিভাগ ও নির্বাহী বিভাগ এই তিনটিই ওই আইনের দ্বারাই চলে যে আইন সংসদ তৈরি করে দেয়।
রায়ের পর বিএনপি’র মিষ্টি বিতরণের ঘটনায় হতবাক প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা দেখলাম- বিএনপি খুবই উৎফুল্ল হলো, মিষ্টি বিতরণ করলো। তার একটাই কারণ হতে পারে, ওই রায়তেই আবার তাদের মার্শাল ল’ দেয়া, অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল-এগুলোও কিন্তু বলা রয়েছে।
এটাও বলা রয়েছে, জিয়া মার্শাল ল’ দিয়ে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করেছিল এবং এটা যে ‘ব্যানানা রিপাবলিক’ করেছিল, সেটাও কিন্তু বলা আছে। তাই এতোদিন পর আমাদের কথাই মেনে নিয়ে তারা মনে হয় ওইটা দেখেই খুশি হয়ে গেছে। অথবা তারা রায় ভালোভাবে দেখেননি বা পড়েননি।
তিনি বলেন, সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল মার্শাল ল’ দ্বারা করা এবং সেটাকেই ফিরিয়ে আনাতেই তারা উৎফুল্ল। অর্থাৎ যেটা উচ্চ আদালতের রায় মার্শাল ল’ দিয়ে যা যা করা হয়েছে, তা অবৈধ। এই অবৈধ জিনিসকে যখন বৈধতা দিতে গেছে, তখন ওইটুকুতেই তারা খুশি হয়ে গেছে, বাকিটা আর দেখেনি।
গণতন্ত্রকে সমুন্নত রাখার আহবান পুনর্ব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, গণতন্ত্রকে আমাদের সমুন্নত রাখতে হবে। জনগণের যে অধিকার এবং ভোটের অধিকার তাকে সমুন্নত রাখতে হবে। গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা ছাড়া দেশের উন্নতি হয় না। তাই এই ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখতে হবে। সে লক্ষ্যেই আজকে এই সংসদ জনগণের আশা-আকাঙ্খা পরিপূরণ করছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের সংবিধানের ৭ম অনুচ্ছেদের প্রজাতন্ত্রের মালিক করা হয়েছে এই জনগণকে।