ছাত্রী ধর্ষণের অভিযোগে শিক্ষকের বিরুদ্ধে মামলা
প্রকাশ | ১২ সেপ্টেম্বর ২০১৭, ১৭:৩৫
প্রেমের ফাঁদে ফেলে বিয়ের প্রলোভন দিয়ে নীলফামারীর সৈয়দপুরে এক কলেজছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় ওই ছাত্রীর বাবা ১১ সেপ্টেম্বর (সোমবার) রাতে উপজেলার কামারপুকুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. জয়নাল আবেদীনের বিরুদ্ধে সৈয়দপুর থানায় একটি ধর্ষণ মামলা দায়ের করেছেন। এদিকে এ ঘটনার পর থেকে প্রধান শিক্ষক গা ঢাকা দিয়েছেন।
মামলার বিবরণ থেকে জান যায়, ভিকটিম সৈয়দপুর উপজেলার কামারপুকুর ডিগ্রি কলেজের এইচএসসির একাদশ শ্রেণির ছাত্রী (১৬)। সে কামারপুকুর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে গত ২০১৭ সালের স্কুল সার্টিফিকেট পরীক্ষা (এসএসসি) পাস করে ওই কলেজে ভর্তি হয়। কামারপুকুর উচ্চ বিদ্যালয়ে অধ্যায়নকালে ওই ছাত্রীর সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলেন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. জয়নাল আবেদীন। এর একপর্যায়ে চলতি বছরে গত ৩ মে প্রধান শিক্ষক জয়নাল আবেদীন স্ত্রীর অনুপস্থিতিতে ওই ছাত্রীকে তার সৈয়দপুর শহরের নতুন বাবুপাড়াস্থ বাসায় নিয়ে যায়। সেখানে প্রেম-ভালোবাসার সুযোগ নিয়ে ওই ছাত্রীকে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে জয়নাল আবেদীন। এ সময় ওই কলেজছাত্রী সেখানে কান্নাকাটি করতে থাকলে প্রধান শিক্ষক তাকে বিয়ের প্রলোভন দেয় এবং ঘটনাটি কাউকে না জানানোর জন্য বলেন। এরপর থেকে ওই কলেজছাত্রী ঘটনাটির বিষয়ে সম্পূর্ণ চুপচাপই থাকে।
কিন্তু গত ৯ সেপ্টেম্বর বিকেলে প্রধান শিক্ষক জয়নাল আবেদীনের স্ত্রী আসমা বেগম কয়েকজন অপরিচিত লোকজনকে সঙ্গে নিয়ে ওই কলেজছাত্রীর উপজেলার কামারপুকুর দলুয়া চৌধুরীপাড়ার বাড়িতে যায়। আর সেখানে গিয়ে তিনি (আসমা বেগম) ওই কলেজছাত্রী ও তার বাবা-মাকে নানা ভাষায় গালমন্দ করেন। এতে করে ছাত্রীর পরিবার ও গ্রামবাসী ঘটনাটির বিষয়ে জানতে পারেন।
এদিকে এ ঘটনা জানার পর গ্রামবাসী ও বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা লম্পট প্রধান শিক্ষক জয়নাল আবেদীনের ওপর চরম ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেন। ১১ সেপ্টেম্বর (সোমবার) তারা বিদ্যালয়ে এসে জয়নাল আবেদীনের বিচার ও তাকে প্রধান শিক্ষক পদ থেকে প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে বিক্ষোভ করেন। এ সময় বিদ্যালয়ে এক বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির উদ্ভব হয়। অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে সৈয়দপুর থানার পুলিশ সদস্যরা ছুটে আসেন।
অন্যদিকে এ ঘটনার খবর পেয়ে তাৎক্ষণিক সৈয়দপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মো. মোখছেদুল মোমিন, উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. বজলুর রশীদ, মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার রেহেনা ইয়াসমীন, উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা নুরুন্নাহার শাহজাদী, কামারপুকুর উচ্চ বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি অধ্যক্ষ আলহাজ মো. আব্দুল গফুর সরকারসহ অন্যান্য সদস্যরা বিদ্যালয়ে আসেন। তারা বিদ্যালয়ে এসে ঘটনার বিষয়ে কলেজছাত্রীর মুখে বিস্তারিত শুনে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে যথাযথ পদক্ষেপের আশ্বাস দেন। এ সময় তাদের আশ্বাস পেয়ে বিদ্যালয়ে আসা অভিভাবকরা ও এলাকাবাসী শান্ত হয়ে ফিরে যান।
এ ঘটনার পর সোমবার রাতে প্রধান শিক্ষক জয়নাল আবেদীনের বিরুদ্ধে সৈয়দপুর থানায় একটি ধর্ষণ মামলা দায়ের করা হয়। ধর্ষিতার পিতা বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন।
সৈয়দপুর থানার ওসি মো. আমিরুল ইসলাম কামারপুকুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে ধর্ষণের মামলা দায়েরের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।