‘জনকল্যাণের শিক্ষা পেয়েছি বঙ্গবন্ধুর কাছ থেকে’
প্রকাশ | ৩১ আগস্ট ২০১৭, ১৭:৪৮
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, জনগণের কল্যাণে কাজ করতে হলে যে ঝুঁকি নিতে হয়, আর সেই শিক্ষা পেয়েছি বঙ্গবন্ধুর কাছ থেকে। একাত্তরে পরাজয়ের প্রতিশোধ নিতেই পঁচাত্তরের হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়েছিল। পঁচাত্তরে যেই শক্তি ষড়যন্ত্র করেছিল, সেই শক্তি এখনো ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে, তা সত্ত্বেও দেশ এগিয়ে যাচ্ছে।
আজ ৩১ আগস্ট (বৃহস্পতিবার) জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউটে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ আয়োজিত আলোচনায় প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন।
বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ‘১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে দেশকে অন্ধকারে ঠেলে দেওয়া হয়েছিল। সন্ত্রাস-খুন-জঙ্গিবাদ কায়েম করা হয়েছিল। খুনিদের মদদ জিয়া, এরশাদ, খালেদা জিয়া সবাই দিয়েছে। তাদের সংসদে বসিয়েছে। তাদের নানাভাবে উৎসাহিত করেছে। এসব করেছে আমাকে আঘাত দেওয়ার জন্য। আমি যাতে ভেঙে পড়ি সেই জন্য। কিন্তু আমি কোন বাবার মেয়ে কোন মায়ের মেয়ে সেটা তারা উপলব্ধি করতে পারেনি।
তিনি বলেন, বাবা ও মা’র কাছ থেকে দেশকে ভালোবাসার, দেশের কল্যাণে কাজ করার, দেশের জন্য যে কোনও ত্যাগ স্বীকার করার শিক্ষা পেয়েছি। শিক্ষা পেয়েছি যেকোনও ঝুঁকি নেওয়ার মতো সাহস রাখার। জীবনের প্রতিকূল অবস্থা মোকাবিলা করেও আজকে আওয়ামী লীগ পরপর তিনবার সরকার গঠন করেছে বলেই বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘যতবারই আব্বাকে জেলে যেতে হয়েছে মা কখনোই মনোবল হারাননি। সংসারের সব ঝামেলা থেকে তাকে দূরে রাখতেন। পাশাপাশি সংগঠনের প্রতি দৃষ্টি দিতেন। ছাত্রলীগের একটা যোগাযোগ মায়ের সঙ্গে ছিল। তিনি আত্মপ্রচারে বিশ্বাস করতেন না। পর্দার আড়ালে থেকেই সব করতেন। ছয় দফাকে কেন্দ্র করে পুরো আন্দোলনটাই আমার মা গড়ে তুলেছিলেন। বাবার প্রতিটি পদক্ষেপে তিনি সমর্থন দিতেন।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, মা দলের প্রয়োজনে গয়নাগাটি ও ঘরের জিনিসপত্রও বিক্রি করে দিতেন। অনেক নেতার বাড়িতে গিয়ে আমার মা বাজারের টাকাও দিতেন। যাদের তিনি বাজারের টাকা দিতেন তাদের মধ্যে বেঈমান খন্দকার মোস্তাকও ছিল।
তিনি আরও বলেন, ‘মায়ের কোনও চাহিদা ছিল না। কোনও চাহিদার কথা বাবাকে বলতেন না। তাঁর ত্যাগের কথা বলে শেষ করা যাবে না। আমার মা ত্যাগ স্বীকার করেছেন বলেই আব্বা দেশের জন্য কাজ করতে পেরেছেন। মা পাশে ছিলেন বলেই আব্বা নির্দিষ্ট লক্ষ্য নিয়ে কাজ করতে পেরেছিলেন। দেশের স্বাধীনতা এনে দিয়েছেন। দেশ স্বাধীনের পর তিনি শূন্য থেকে শুরু করে একটা প্রদেশকে রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে দিয়ে গেছেন।’
ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের পড়াশোনায় আরো মনোযোগী হওয়ার আহবান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘শিক্ষাটা হচ্ছে সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ। ছাত্রলীগ থেকে ভবিষ্যতে নেতৃত্ব আসতে হবে। তার জন্য শিক্ষা একান্তভাবে দরকার। ছাত্রলীগের প্রত্যেকটি কর্মীকে সুশিক্ষায় শিক্ষিত হতে হবে। তাহলে এ দেশটাকে আমরা গড়ে তুলতে পারবো।’
ছাত্রলীগের সঙ্গে আত্মার সম্পর্ক রয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ছাত্রলীগের কাছে এলে মনে হয় মন খুলে কথা বলি। কারণ আমি নিজেও ছাত্রলীগের একজন সামান্য সদস্য ছিলাম। একজন কর্মী থেকে সব সময় রাজপথের সংগ্রামে ছিলাম। বলতে গেলে এটাই হচ্ছে মূল সংগঠন যার সঙ্গে আমার আত্মার সম্পর্ক হয়েছে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আওয়ামী লীগের একটা গুণ আছে। আওয়ামী লীগের তৃণমূল নেতারা সব সময় সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়। দেশের জন্য যেকোনো ত্যাগ স্বীকার করা, যেকোনো ঝুঁকি নেওয়ার মতো সাহস রাখা। একজন রাজনীতিবিদের জন্য এটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আর সেটা করতে পেরেছি বলেই ২১ বছর পর ক্ষমতায় এসেছি। নইলে জাতির পিতার পরিবারের কেউ ক্ষমতায় আসবে, এ চিন্তা তো তারা করেইনি। কারণ, এটা তো তারা চায়নি।’
'ছাত্রলীগের ইতিহাস, বাংলাদেশের ইতিহাস'—বঙ্গবন্ধুর এই উক্তি ভুলে না যাওয়ার জন্য ছাত্রলীগের প্রতি আহ্বান জানান আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।