চলন্ত বাসে গণধর্ষণের পর হত্যা, গ্রেপ্তার ৫
প্রকাশ | ৩০ আগস্ট ২০১৭, ০১:০৬
সিরাজগঞ্জ থেকে ময়মনসিংহ যাওয়ার পথে চলন্ত বাসে পাশবিক নির্যাতনের পর হত্যা করা হয় এক নারীকে। গত ২৬ আগস্ট (শনিবার) টাঙ্গাইলের মধুপুরে বেওয়ারিশ হিসেবে এক তরুণীর লাশ দাফন করার পর তদন্ত করতে গিয়ে বেরিয়ে এসেছে ধর্ষণ ও হত্যাকাণ্ডের রোমহর্ষক কাহিনি। পুলিশ জানতে পেরেছে, ২৫ আগস্ট (শুক্রবার) রাতে চলন্ত বাসে দলবেঁধে ধর্ষণের পর ওই কলেজছাত্রীকে হত্যা করা হয়।
নিহত জাকিয়া সুলতানা রূপার বাড়ি সিরাজগঞ্জের তাড়াশে। ঢাকার আইডিয়াল ল কলেজে পড়ালেখা করার পাশাপাশি একটি কোম্পানির প্রোমশনাল ডিভিশনে কাজ করছিলেন তিনি। তার কর্মস্থল ছিল ময়মনসিংহ জেলা সদরে।
মধুপুর থানার ওসি শফিকুল ইসলাম জানান, "ছোঁয়া পরিবহনের একটি বাসে যাওয়ার সময় ২৫ আগস্ট (শুক্রবার) রাতে নির্মম নির্যাতন ও হত্যার শিকার হন ওই তরুণী। ওই বাসের চালক, সুপারভাইজারসহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করার পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তাদের কাছ থেকে ঘটনার বিবরণ পাওয়া গেছে। তাদের মধ্যে তিনজন ধর্ষণ ও হত্যায় জড়িত থাকার কথা জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছে"।
পরে ওই তিনজন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও দেন।
ওসি জানান, ২৫ আগস্ট (শুক্রবার) রাত ১১টার দিকে টাঙ্গাইল-ময়মনসিংহ সড়কের পাশে মধুপুর উপজেলার পঁচিশ মাইল এলাকায় ওই তরুণীর লাশ পাওয়ার পর হত্যার আলামত থাকায় অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে একটি মামলা করে মধুপুর পুলিশ। কিন্তু পরিচয় জানতে না পারায় ময়নাতদন্ত শেষে শনিবার বিকালে টাঙ্গাইল কেন্দ্রীয় কবরস্থানে বেওয়ারিশ হিসেবে তাকে দাফন করা হয়।
এদিকে গণমাধ্যমে লাশ উদ্ধারের খবর পেয়ে গত ২৮ আগস্ট (সোমবার) রাতে মধুপুর থানায় গিয়ে ছবি দেখে রূপাকে শনাক্ত করেন তার বড় ভাই হাফিজুর রহমান।
হাফিজুর বলেন, রূপা শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষায় অংশ নিতে গত ২৫ আগস্ট (শুক্রবার) বগুড়ায় যান। পরীক্ষা শেষে এক সহকর্মীকে সঙ্গে নিয়ে ময়মনসিংহগামী ছোঁয়া পরিবহনের (ঢাকা মেট্রো ব-১৪-৩৯৬৩) বাসে ওঠেন। কর্মস্থল ঢাকায় হওয়ায় টাঙ্গাইলের এলেঙ্গায় নেমে যান ওই সহকর্মী। ওই বাসেই ময়মনসিংহে পৌঁছানোর কথা ছিল রূপার।
রাত প্রায় ১০টা পর্যন্ত রূপার সঙ্গে তার বড় ভাই হাফিজুর রহমান এর মোবাইলফোনে যোগাযোগ ছিল। কিন্তু তারপর থেকেই রূপার ফোন বন্ধ পাওয়া যায় বলে জানান হাফিজুর রহমান।
হাফিজুর বলেন, "সঠিক সময়ে রূপা ময়মনসিংহে না পৌঁছানোয় সহকর্মীরা তার মোবাইলে ফোন করেন। এক যুবক ফোনটি ধরে ফোনের মালিক ভুল করে সেটি ফেলে গেছেন বলে সংযোগ কেটে দেন। এরপর থেকেই ফোনটি বন্ধ পাওয়া যাচ্ছিল। এদিকে শনিবার সকালেও রূপা কর্মস্থলে না যাওয়ায় তার অফিস থেকে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তাদের কাছ থেকে রূপার নিখোঁজ থাকার কথা জানতে পেরে আমরা ময়মনসিংহ কোতয়ালি মডেল থানায় সাধারণ ডায়েরি করি। পরে মধুপুরে একটি লাশ পাওয়ার খবর মিডিয়ায় দেখে আমরা থানায় যাই"।
মধুপুরের ওসি শফিকুল বলেন, “রূপার পরিচয় শনাক্ত হওয়ার পর সোমবার রাতেই অভিযান চালিয়ে ময়মনসিংহ থেকে ছোঁয়া বাসটির চালক হাবিব, তার সহকারী শামীম, আকরাম ও জাহাঙ্গীর এবং সুপারভাইজার সফর এই পাঁচ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। ভিকটিমের মোবাইল ফোনটি পাওয়া যায় তাদের কাছে। ছোঁয়া পরিবহনের বাসটিও জব্দ করা হয়।”
ওসি জানান, লাশ উদ্ধারের পর আলামত দেখে সন্দেহ হওয়ার কারণে অপমৃত্যুর মামলা না করে প্রথম দিনই পুলিশের পক্ষ থেকে হত্যা মামলা করা হয়েছিল। বাসের কর্মচারীদের গ্রেপ্তারের পর তাদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সেই সন্দেহেরই সত্যতা পাওয়া যায়। ওই পাঁচজনের মধ্যে তিনজন স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিতে রাজি হয়েছে। তারা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে বলেছে, কালিহাতী থেকে মধুপুর পর্যন্ত রাস্তায় চলন্ত বাসে পর্যায়ক্রমে রেপ করা হয় মেয়েটিকে।
ওসি বলেন, “বাসটি টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলার কাছাকাছি এলে বাসের হেলপার শামীম রূপাকে জোর করে বাসের পেছনের আসনে নিয়ে যায়। এরপর শামীম,আকরাম ও জাহাঙ্গীর পালাক্রমে তাকে ধর্ষণ করে। মেয়েটি তাদের বলেছিল, সঙ্গে যা টাকা পয়সা আছে, তা নিয়ে যেন তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়। কিন্তু ধর্ষণের পর ঘাড় মটকে, মাথা থেঁতলে তাকে হত্যা করে লাশ রাস্তায় ফেলে চলে যায় বাসের কর্মচারীরা”।
আকরাম ও জাহাঙ্গীরের বাড়ি ময়মনসিংহ সদর উপজেলার মির্জাপুর গ্রামে। শামীমের বাড়ি মুক্তাগাছার নন্দিবাড়ি।
২৯ আগস্ট (মঙ্গলবার) সন্ধ্যায় শামীম, আকরাম ও জাহাঙ্গীর টাঙ্গাইলের জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন বলে জানান ওসি শফিকুল। জবানবন্দি নিয়ে রাতেই তাদের কারাগারে পাঠানো হয়।
গ্রেপ্তার অন্য দুজন বাসের চালক হাবিব (৪৫) ও সুপারভাইজার সফর আলীকে (৫৫) নিয়ে খুন হওয়া রূপার ওড়না, জুতা ও ভ্যানিটি ব্যাগ উদ্ধারে অভিযান চালানো হচ্ছে বলে জানান শফিকুল।
হাবিব এবং সফর আলীকে আজ ৩০ আগস্ট (বুধবার) আদালতে হাজির করা হবে। তাদের দু'জনের বাড়ি ময়মনসিংহ সদর উপজেলা মির্জাপুর গ্রামে।