‘বাইরের উসকানিতে যেন দুর্ঘটনা না ঘটে’
প্রকাশ | ২৭ আগস্ট ২০১৭, ১৭:২০
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, কর্মক্ষেত্রে নিহত এবং আহত শ্রমিক পরিবারের সদস্যদের সহযোগিতার জন্য সকল প্রস্তুতকারক এবং রপ্তানিকারক শিল্প প্রতিষ্ঠানকে শ্রম এবং কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের কেন্দ্রীয় কল্যাণ তহবিলের আওতায় আনা হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা ইতোমধ্যেই সকল গার্মেন্টস শিল্প প্রতিষ্ঠানকে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের কেন্দ্রীয় তহবিলের আওতায় আনার জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দিয়েছি।’
প্রধানমন্ত্রী ২৭ আগস্ট (রবিবার) তার কার্যালয়ে কর্মক্ষেত্রে নিহত ও পঙ্গু শ্রমিকদের পরিবারের সদসদ্যদের মাঝে তৈরি পোশাক শিল্পের তহবিল থেকে ক্ষতিপূরনের চেক প্রদান কালে একথা বলেন।
পোশাক রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলোকে কেন্দ্রীয় তহবিলের আওতায় আনার নির্দেশ দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি মনে করি বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ এর সদস্য ছাড়া যে সকল প্রতিষ্ঠান পোশাক রপ্তানি করে, তাদেরকেও কেন্দ্রীয় তহবিলের আওতায় আনতে হবে। রপ্তানি করতে হলে তাদেরকে বিজিএমইএ অথবা বিকেএমইএ’র সদস্য হতে হবে। বিষয়টি পর্যালোচনা করার জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দিচ্ছি।’
প্রথমবারের মতো শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের অধীনে গঠিত কেন্দ্রীয় তহবিল থেকে মৃত্যু ও পঙ্গুত্বজনিত কারণে ২৩৪ জন শ্রমিকের ক্ষতিপূরণের চেক প্রদান করা হয়।
রপ্তানি মূল্যের ‘০’ দশমিক ‘০’শূন্য ৩ শতাংশ হারে অর্থ বিজেএমইএ এবং বিকেএমইএ’র মাধ্যমে কেন্দ্রীয় তহবিলে জমা হচ্ছে। এজন্য প্রধানমন্ত্রী উদ্যাক্তাদের ধন্যবাদ জানান।
একজন গার্মেন্টস শ্রমিক কোন দুর্ঘটনায় নিহত বা গুরুতর আহত হলেতার পরিবারকে ৩ লাখ টাকা করে এই তহবিল থেকে অনুদান পাবেন এবং কর্মক্ষেত্রের বাইরে যে কোন মৃত্যুর জন্য তার পরিবারের স্বজনরা ২ লাখ টাকা পাবেন।
মালিকদের উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, ‘শিল্পের মালিকদের প্রতি আমার অনুরোধ থাকবে আপনারা ব্যবসা করে অবশ্যই লাভ নেবেন। সাথে সাথে আপনারা শ্রমিকদের কল্যাণে বিশেষ দৃষ্টি দিয়েছেন এটা অব্যাহত রাখতে হবে। এরাই তো আপনাদের কারখানা চালু রাখে। আপনারা যা কিছু উপার্জন করেন, এই শ্রমিকদের শ্রমের বিনিময়ে।’
শ্রমিকদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এই প্রতিষ্ঠান থেকে আপনি জীবন জীবিকার সুযোগ পাচ্ছেন, অর্থ উপার্জন করছেন। সেই প্রতিষ্ঠান যেন ভালোভাবে চলতে পারে, বাইরের কারো উস্কানিতে কোন রকম দুর্ঘটনা যেন সেখানে না ঘটে সেটা বিশেষ ভাবে দেখতে হবে সবাইকে।’
তিনি বলেন, আমাদের দেশে কেউ কেউ আছে শ্রমিক রাজনীতির নামে এনজিও করে আবার তারা শ্রমিক নেতাও সেজে যায়। তারা ভাগ খাওয়ার জন্য নানা ভাবে ঘোট পাকায়। এদের কাছ থেকে সব সময় দূরে থাকতে হবে।
কোন সমস্যা হলে সাথে সাথে তার সরকার ব্যবস্থা নিচ্ছে এবং নেবে বলেও প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন।
রপ্তানি পণ্য বাড়ানোর পাশাপাশি নতুন রপ্তানি বাজার খোঁজা এবং অভ্যন্তরীণ বাজার সৃষ্টির তাগিদ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের রপ্তানি পণ্য বাড়াতে হবে। কোন দেশে কি ধরনের চাহিদা সেটা খুঁজে বের করতে হবে। ভবিষ্যতে কোন দেশে কত রপ্তানি করতে পারি সেটা বের করতে হবে। অবশ্য আমাদের নিজের দেশেও মানুষের ক্রয় ক্ষমতা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
বাংলাদেশের সঙ্গে প্রতিবেশী দেশগুলোর সুসম্পর্কের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রতিবেশি দেশগুলো পণ্য রপ্তানির জন্য ভালো গন্তব্য হতে পারে। সেখানে বিশাল বাজার রয়েছে।
শ্রমিকদের কল্যাণে কাজ করার প্রত্যয় ব্যক্ত করে তিনি বলেন, ‘আমি রাজনীতি করি বড় লোককে বড় লোক বানানোর জন্য নয়, আমার রাজনীতি গরীব মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য।’
তিনি বলেন, ‘আমার রাজনীতি এদেশের কৃষক শ্রমিক মেহনতি মানুষের জন্য।’
শেখ হাসিনা শ্রমিক-মালিকদের কল্যাণে ও শিল্প বিকাশে সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগের কথা তুলে ধরেন।
অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক চুন্নু এবং বিজিএমইএ সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান।
এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ, প্রধানমন্ত্রীর মূখ্য সচিবড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী ও শ্রম মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব আফরোজা খান এ সময় উপস্থিত ছিলেন।