অপমান সইতে না পেরে স্কুলছাত্রীর আত্মহত্যা
প্রকাশ | ২৭ আগস্ট ২০১৭, ১৫:১৭
অনৈতিক সম্পর্কের অভিযোগ তুলে সালিশি অপমান সহ্য করতে না পেরে নবম শ্রেণির এক স্কুলছাত্রী ফাঁসি দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন।
২৬ আগস্ট (শনিবার) ভোরে সাতক্ষীরা সদর উপজেলার বল্লী গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। ওই স্কুলছাত্রীর নাম রিমা খাতুন (১৫)। তিনি সাতক্ষীরা সদর উপজেলার বল্লী গ্রামের সাইকেল মিস্ত্রী জাকির আলী খাঁর মেয়ে ও বল্লী বঙ্গবন্ধু মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্রী।
ছাত্রীর মা ফজিলা খাতুন জানান, পূবে এক গভীর রাতে আনছার আলী খাঁর ছেলে মহব্বত আলী (১৭) কৌশলে ঘরে ঢুকে রিমাকে ধর্ষণের চেষ্টা চালায়। একপর্যায়ে রিমার চিৎকারে মহব্বত পালিয়ে যায়।
ফজিলা খাতুন জানান, ২৫ আগস্ট (শুক্রবার) সকালে তিনি স্বামীর সঙ্গে বড় জামাই মোঃ নাসির উদ্দিনের বাড়িতে যান। সন্ধ্যার পর প্রাইভেট শিক্ষক রেজাউল ইসলাম পড়ানোর জন্য তাদের বাড়িতে আসেন। পড়ানোর একপর্যায়ে আনছার খাঁ ও তার ছেলে মহব্বত ওই ঘরের দরজায় ছিকল তুলে দিয়ে মোবাইলে বিভিন্ন লোকজন জড়ো করে। একপর্যায়ে দু’জনের মধ্যে অনৈতিক সম্পর্কের অভিযোগ তোলে।
রেজাউলের বাবা ছাতিয়ানতলা গ্রামের আব্দুল বারী, বড় ভাই হাফিজুল ইসলাম ও ঝাউডাঙা ইউপির সাবেক সদস্য শফিকুল ইসলামসহ কয়েকজন চলে আসেন তাদের বাড়িতে। এরপর চাচা শ্বশুর হযরত আলীর বাড়ির উঠানে সালিশি বৈঠক বসে।
তিনি আরও জানান, সালিশি বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন গ্রামের আনছার আলী খাঁ, মিজানুর রহমান, বেলাল হোসেন, আব্দুল মজিদের ছেলে হাফিজুর রহমান, ছাতিয়ানতলা গ্রামের সাবেক ইউপি সদস্য শফিকুল ইসলাম, আব্দুল বারী, তার ছেলে হাফিজুর রহমানসহ উভয়পক্ষের ১৪ জন। শালিসে রিমা ও রেজাউলকে গালিগালাজ করা হয়। শালিসে প্রাইভেট শিক্ষক বিবাহিত তাই বিয়ের দেওয়ার বিষয়টি বাদ দিয়ে মেয়ের বিয়ের জন্য রেজাউলের বাবা আব্দুল বারীর কাছে ৫০ হাজার টাকা দাবি করেন বেলাল হোসেন ও মিজানুর রহমান। একপর্যায়ে আগামী সোমবার অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য মিজানুর রহমানের কাছে ১৫ হাজার টাকা দেওয়ার শর্তে রেজাউলকে ছেড়ে দেওয়া হয় তার স্বজনদের কাছে।
রাত সাড়ে তিনটার দিকে বিছানায় না পেয়ে শাহীদা বেগম বিষয়টি তাকে (ফজিলা) অবহিত করেন। একপর্যায়ে বাড়ির উঠানের একটি আমগাছের ডালে গলায় ওড়ান পেচিয়ে ডালের সঙ্গে ঝুলন্ত অবস্থায় রিমাকে পাওয়া যায়।
শালিসে থাকা বল্লী গ্রামের আব্দুল মজিদের ছেলে হাফিজুর রহমান জানান, মিজানুর রহমান ও বেলাল মেয়ে পক্ষের হয়ে বিয়ে দেওয়ার সুবিধার্থে ১৫ হাজার টাকা দাবি করেছিলেন।
সাতক্ষীরা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মারুফ আহম্মেদ জানান, উপপরিদর্শক শেখ মোঃ মীরাজ আহম্মেদ রিমার লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য সদর থানার মর্গে পাঠিয়েছেন। এ ঘটনায় ২৬ আগস্ট (শনিবার) সকালে একটি অপমৃত্যু মামলা (৮০) হয়েছে। তবে মৃতের ভাই রনি হাসান বাদী হয়ে মহব্বত আলীসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে আত্মহত্যার প্ররোচনার অভিযোগে থানায় একটি অভিযোগ দায়েরের প্রস্তুতি নিচ্ছে।