নির্যাতিত সেই অন্তঃসত্ত্বার সন্তানের মৃত্যু
প্রকাশ | ১০ আগস্ট ২০১৭, ২৩:৪৬
গরু চুরির মিথ্যা অভিযোগে গাছে বেঁধে নির্যাতনের শিকার গৃহবধূ শেফালী বেগমের (৩২) অপুষ্ট কন্যা সন্তানকে অবশেষে বাঁচানো গেল না। জন্মের পর থেকে অক্সিজেন দিয়ে বাঁচিয়ে রাখা শিশুটি তিনদিনের মাথায় ৯ আগস্ট (বুধবার) রাত সাড়ে ১০টার দিকে মারা যায়।
হাসপাতালের গাইনি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. ফেরদৌসি সুলতানা জানান, সময়ের অনেক আগেই ৯০০ গ্রাম ওজন নিয়ে শিশুটির জন্ম হয়। জন্মের পর থেকে শিশুটিকে অক্সিজেন দিয়ে বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা চলছিল। তবে অনেক চেষ্টা করেও শিশুটিকে শেষ পর্যন্ত বাঁচানো গেল না। ৯ আগস্ট (বুধবার) রাতে শিশুটি মারা যায়।
নির্যাতনের বর্ণনা দিয়ে হাসপাতালে শেফালি কান্নাজড়ানো কণ্ঠে বলেন, "আমাদের বাড়ি ডিমলা উপজেলার খালিশা চাপানি ইউনিয়নের বাইশপুকুর গ্রামে। আমার স্বামীর নাম লালন মিয়া। গত শুক্রবার খালিশা চাপানি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ নেতার নির্দেশে গ্রাম পুলিশ সর্দার রশিদুল ইসলাম আমাকে ধরে নিয়ে আসে। আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে আমি নাকি দিনের বেলায় গরু চুরি করেছি। আমাকে তারা ধরে এনে গাছের সাথে বেঁধে ফেলে। আমি তাদের হাত-পা ধরে অনেক কাকুতি-মিনতি করি। বলি, আমি গরু চুরি করিনি, আমার পেটে সাত মাসের বাচ্চা। তারপরও তারা আমাকে ছাড়েনি। আমার চার বছরের ছেলের সামনেই মারধর করতে থাকে তারা। এক পর্যায়ে আমি জ্ঞান হারাই"।
তিনি আরও বলেন, "কিছুক্ষণ পর জ্ঞান ফিরলে আবারও তারা আমাকে মারধর করতে শুরু করে। এভাবে দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত নির্যাতন করে। পরে ওই আওয়ামী লীগ নেতারাই পুলিশে খবর দেয়। পুলিশ এসে আমাকে গাছের সাথে বাঁধা অবস্থায় পেয়ে খুলে দেয়। কিন্তু পুলিশও থানায় নিয়ে মারধর করার হুমকি দেয়। পরে আমি খুবই অসুস্থ হয়ে পড়লে তারা আমাকে স্থানীয় স্বাস্থ্য কেন্দ্রে নিয়ে যায়। সেখানে চিকিৎসা না পেয়ে এবং আওয়ামী লীগ নেতাদের হুমকিতে গত শনিবার রাতে স্বাস্থ্য কেন্দ্র থেকে পালিয়ে দূর সম্পর্কের এক আত্মীয়ের সঙ্গে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এসে ভর্তি হই"।
শেফালী বলেন, "মারধরের কারণে পেটে প্রচণ্ড ব্যথা হলে সোমবার (৭ আগস্ট) আমি হাসপাতালে মেয়ে সন্তানের জন্ম দেই। কিন্তু ওরা তো আমার পেটের সন্তানকেও মেরে ফেললো। আমি তাদের ফাঁসি চাই"।
উল্লেখ্য, নীলফামারীর ডিমলা উপজেলায় গত ৪ আগস্ট (শুক্রবার) গরু চুরির মিথ্যা অভিযোগে গাছে বেঁধে নির্যাতন করা হয় সাত মাসের অন্তঃসত্ত্বা গৃহবধূ শেফালী বেগমকে। পরে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় নির্ধারিত সময়ের আগে ৭ আগস্ট (সোমবার) অপরিপক্ক সন্তানের জন্ম দেন তিনি।