‘আমার মা সারাজীবন কষ্ট করে গেছেন’
প্রকাশ | ০৮ আগস্ট ২০১৭, ১৫:২১
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘ঘাতকের দল যেভাবে আমার মায়ের ওপর গুলি চালিয়েছে, সেটা কখনও ভাবতে পারি নাই। আমার মনে হয়, ঘাতকের দল জানতো এদেশের স্বাধীনতার পেছনে আমার মায়ের অবদান। আমার কষ্ট আমার মা সারাজীবন কষ্ট করে গেলেন।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমার আব্বা মায়ের মতো একজন সাথী পেয়েছিলেন বলেই তিনি তার জীবনে সংগ্রাম করে সফলতা পেয়েছিলেন। আমি সবার কাছে দোয়া চাই।’
৮ আগস্ট (মঙ্গলবার) ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে শেখ ফজিলাতুন্নেসা মুজিবের ৮৭তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে এভাবেই স্মৃতিচারণ করছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
শেখ হাসিনা বলেন, দেশের ক্রান্তিকাল যখন কোনো সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার দরকার পড়তো তখন আমার মা আব্বাকে সাহায্য করতেন। কোনো গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে মা আব্বাকে সবকিছু থেকে কিছুক্ষণের জন্য আলাদা করে রাখতেন। বলতেন ১৫ মিনিট শুয়ে রেস্ট নাও। অনেকে অনেক কথা বলবে, কিন্তু তোমাকে লক্ষ্যে পৌঁছাতে হবে। গোটা দেশ তোমার দিকে তাকিয়ে। তোমার মনে যে কথাটা আসবে সেই কথাটাই বলবে।
তিনি বলেন, ‘আমরা ছোট বেলায় একটানা দুই বছরও বাবাকে কাছে পাইনি। আমার মা টুঙ্গিপাড়ায় জন্ম। সম্পর্কে আত্মীয় আমার বাবার। মাত্র তিন বছর বয়সে আমার নানা মারা যান। আমার নানার খুব ইচ্ছে ছিল আমার মা ও খালাকে লেখাপড়া করাবেন।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আব্বার সবচেয়ে প্রিয় ফিলোসফার ছিলেন বার্টেন্ড রাসেল। আমার তিন ভাইয়ের নাম কিন্তু ঐতিহাসিক ঘটনার সঙ্গে মিলিয়ে রেখেছিলেন মা। কামাল আতাতুর্কের নামে কামাল, কামাল আব্দুল নাসেরের নামে জামালের নাম আর বার্টেন্ড রাসেলের নামে রাসেলের নাম।’
দেশের জন্য মায়ের ত্যাগ নিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের বাসায় ওয়ার্কিং কমিটির মিটিং হতো। ছয় দফা না আট দফা হবে সেটা ছিলো গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত। দিনের পর দিন মিটিং চলতো। এতো মানুষের রান্না মা করতেন। তখন তো ডেকোরেটর ছিলো না। আমরা প্লেট, গ্লাস মেজে দিয়েছি।
‘মা আমাকে মাঝে মধ্যে বলতেন কি আলোচনা হচ্ছে খেয়াল রাখতে। নেতারা বলতেন ৬ দফা দিয়ে কি হবে, ৮ দফা হলে সব চাহিদা পূরণ হবে। আমার সঙ্গেও অনেক নেতার কথা হতো। বলতো তুমি কিছু বোঝ না, ৬ দফা না, ৮ দফা হলে সুবিধা হবে।
তিনি বলেন, ‘আব্বা কী চান, সেটা আমার মা বুঝতেন। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা দেওয়ার আগে পাকিস্তানি গোয়েন্দা বাহিনী আমার মাকে অনেকবার ইন্টারোগেশন করেছে। কোনোভাবে তাকে মামলায় জড়ানো যায় কিনা। কিন্তু আমার মা অত্যন্ত বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে বিষয়টি মোকাবিলা করেন।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আব্বাকে কোনোদিন সংসারের বিষয় নিয়ে মা বিরক্ত করতেন না। শুধু সংসার নয়, সংগঠনের বিষয়গুলো আমার মা দেখতেন। ছাত্রলীগ সরাসরি মা দেখতেন। আমাদের তো সারাটা জীবন ধাক্কা খেয়ে খেয়ে চলতে হয়েছে।’