৭০ বছরের মায়ের পায়ে ছেলের শিকল
প্রকাশ | ১৬ জুলাই ২০১৭, ০০:৫৫ | আপডেট: ১৬ জুলাই ২০১৭, ১৩:৪৬
ভয়াবহ এক অমানবিক ঘটনার সাক্ষী হয়ে রইল বাংলাদেশের সাতক্ষীরা জেলা। নিজের ছেলের শিকলে বাঁধা ৭০ বছরের বৃদ্ধা মা জানু পারভিনের কাছে আজ সমস্ত রং মুছে গিয়ে জীবন শুধুই সাদা-কালো। সন্তানের হাতে নির্যাতিত হয়ে চোখের জলে দিন গুনছেন তিনি।
বেশ কিছুদিন ধরেই বৃদ্ধা মা জানু পারভিনকে শিকল দিয়ে বেঁধে রেখেছেন তাঁর ছেলে ও বউমা। কারণ জানতে চাইলে তাঁদের বক্তব্য, ‘প্রলাপ বকে মা ঘুম ভাঙিয়ে দেয়।’ শুধু তাই নয় তাঁদের দাবি, “মা নাকি মাঝে মাঝে পাগলামি করে। এটা-ওটা নষ্ট করে। তাই তাঁকে বেঁধে রাখা হয়।” তবে গতিক বুঝে সঙ্গে-সঙ্গে সাফাইও দিয়েছেন দম্পতি। সবসময় নাকি তাঁরা মাকে বেঁধে রাখে না। মাঝে মাঝে তাঁকে খুলে দেওয়া হয়।
প্রতিবেশীরা জানান, জানু পারভিন ভোরে তাদের ছেলে-মেয়েদের ঘুম থেকে ডেকে তোলে। দরজায় টোকা দিয়ে শিশু-তরুণদের নামাজ পড়তে যেতে বলে। জানু বেগমের ডাকে তাদের ঘুম ভাঙ্গে। তবে নিজের কৃতকর্মে বিন্দুমাত্র অনুতপ্ত নয় বৃদ্ধার ছেলে ও বউমা। তাঁদের দাবি, মা দরজায় এসে যখন তখন আঘাত করে।
জানু বেগমের ছেলে শফিকুলের দাবি, বেঁধে না রাখলে তার মা দরজায় এসে যখন তখন আঘাত করে। এতে তাদের ঘুম ভেঙ্গে যায়।
সাতক্ষীরা সদর উপজেলার শিবপুর ইউনিয়নের শিয়ালডাঙ্গা গ্রামের বাল্লক ওরফে পুটে গাজীর বিধবা স্ত্রী জানু পারভিন। তার পাঁচ ছেলে এক মেয়ে । বিয়ে হয়ে যাওয়ায় মেয়ে শশুরবাড়িতে থাকে। অন্য সব ছেলে ও ছেলের স্ত্রীরা ভালো ব্যবহার করে জানুর সঙ্গে।
কেবল মেজ ছেলে শফিকুল ও তার স্ত্রী তার ওপর কঠোর আচরণ করে।
মাঝে মাঝে তারা মাকে বৃদ্ধাশ্রমে পাঠানোর কথা বলে। মাঝে মাঝে পাঠায় আবার নিয়েও আসে। হঠাৎ হঠাৎ বাড়ির মধ্যে গাছের সঙ্গে বেঁধে রাখে। এভাবে চলছে দিনের পর দিন।
শিয়ালডাঙ্গা গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা আনিসুর রহমান জানান, আমরা এ দৃশ্য আর দেখতে চাই না। বিষয়টি প্রশাসনকে জানিয়ে ব্যবস্থা নেব।
এ ব্যাপারে সাতক্ষীরা সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) নুর হোসেন সজল বলেন, আমার কাছে এ খবর এসেছে। আমি ব্যবস্থা নিচ্ছি। এমন অমানবিক আচরণ কোনো সন্তান তার মায়ের প্রতি করতে পারে না।