স্বীকৃতি চেয়ে মন্দিরে অনশনে বসেছেন প্রেমিকা
প্রকাশ | ১৪ জুলাই ২০১৭, ০১:৪৪
জয়পুরহাটের পাঁচবিবি উপজেলার উচনা গ্রামে স্ত্রীর স্বীকৃতির দাবিতে স্বামীর বাড়িতে দুদিন ধরে বিউটি রানী নামের এক প্রেমিকা অনশন করছেন।
তবে মেয়েটির শাশুড়ি ও দাদি শাশুড়ির বাধায় বাড়িতে প্রবেশ করতে না পেরে অবশেষে মেয়েটির ঠাঁই হয়েছে মন্দিরে। সেখানে অনশন করছেন তিনি।
বিউটির জানান, রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলার মেনানগর বানিয়াপাড়া গ্রামের শ্রী রমেশ বাবু রায়ের মেয়ে শ্রীমতি বিউটি রানী তৃষা (২০)। সাভার হেমায়েতপুরের গার্মেন্টে (এবি অ্যাপারেলস) চাকরির সুবাদে জয়পুরহাটের পাঁচবিবি উপজেলার উচনা গ্রামের শ্রী নিপেন চন্দ্রের ছেলে শ্রী অলক চন্দ্রের (২৪) সঙ্গে পরিচয় হয়। পরিচয়ের সুবাদে দুজনের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে।
প্রেমের সম্পর্কের একপর্যায়ে দেড় বছর আগে রাজধানীর ঢাকেশ্বরী মন্দিরে সনাতনী প্রথা অনুযায়ী তারা নোটারি পাবলিকের মাধ্যমে বিয়ে করেন। গত ২০ এপ্রিল এফিডেভিট করেন তারা।
গত ঈদুল ফিতরের ছুটি পেলে বিউটি রানীকে সাভারে বাসায় রেখে তিনদিনের কথা বলে বাড়িতে আসেন অলক। কিন্তু তিনদিন অতিবাহিত হওয়ার পর অলক সাভারে ফিরে না যাওয়ায় চিন্তিত হয়ে পড়েন বিউটি। স্বামী অলক ও শ্বশুর বাড়ির লোকজনের কাছে ফোনে যোগাযোগ করেন তিনি।
এ অবস্থায় অলক ফোন ধরেন না। আবার না শ্বশুর বাড়ির লোকজন বিউটির সঙ্গে বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে ফোন বন্ধ করে দেন।
উপায় না পেয়ে বিউটি চলে আসেন অলকের বাড়িতে। এখানে অলককে না পেয়ে এবং তাদের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করে কোনো সমাধান না পেয়ে বিষয়টি সংশ্লিষ্ট চেয়ারম্যানকে জানান বিউটি। কিন্তু ছেলে বাড়িতে না থাকায় বিউটিকে সাতদিনের সময় চেয়ে রংপুরে পাঠান চেয়ারম্যান।
সাতদিন অতিবাহিত হওয়ায় বিউটি গত ১১ জুলাই (মঙ্গলবার) আবার স্ত্রীর স্বীকৃতি আদায়ে স্বামীর বাড়িতে আসেন।
তবে এতে বাধা হয়ে দাঁড়ান তার শাশুড়ি ও দাদি শাশুড়ি। তাকে গলা ধাক্কা দিয়ে বাড়ি থেকে বের করে দেন।
ফলে কোনো উপায় না পেয়ে ১১ জুলাই (মঙ্গলবার) সকাল থেকে পাশের সালুয়া বারোয়ারী মন্দিরে আশ্রয় নিয়ে সেখানেই অর্ধাহারে-অনাহারে দিনাতিপাত করছেন বিউটি।
তিনি সাংবাদিকদের বলেন, সব কিছু ত্যাগ করে এখানে এসেছি। ঘরে না নিলে আত্মহত্যা ছাড়া আমার কোনো উপায় নেই।
এ ব্যাপারে অলকের ভাই শ্রী শ্যামল চন্দ্রের কাছে জানতে চাইলে তিনি ঘটনা স্বীকার করে বলেন, মেয়েটি জোর করে আমার ভাইয়ের কাছ থেকে কাগজে স্বাক্ষর নিয়েছেন। অলক স্বেচ্ছায় তাকে বিয়ে করেনি।
গ্রাম পুলিশ গমু চন্দ্র জানান, মেয়েটি দুদিন থেকে এখানে অবস্থান করছে। মেয়েটির কাছে একটি এফিডেভিটের কাগজ ও বিয়ের পোশাক পরা ছাড়াও অন্তরঙ্গ মুহূর্তের কিছু ছবি আমরা দেখেছি। মেয়েটি আসার পর ছেলেটি পালিয়ে গেছে এবং ছেলের পরিবারের কেউ গ্রামের লোকজনের সঙ্গে এ ব্যাপারে কোনো কথা বলছে না।
ধরঞ্জি ইউনিয়নের ইউপি সদস্য আব্দুল গনি ঘটনার কথা স্বীকার করে বলেন, বিষয়টি সমাধানের চেষ্টার সময় একটি কুচক্রী মহল ভিন্ন খাতে মীমাংসার চেষ্টা করছে।
অপর ইউপি সদস্য ফারায়েজ মণ্ডলের কাছে জানতে চাইলে তিনি এ সম্পর্কে কিছুই জানেন না বলে জানান।
ধরঞ্জি ইউনিয়নের মহিলা সদস্য নূরজাহান বেগম জানান, ছেলের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করে বিষয়টি মীমাংসার চেষ্টা করা হচ্ছে।
পাঁচবিবি থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি-তদন্ত) কিরণ চন্দ্র রায় বলেন, ঘটনাটি আমরা শুনেছি। তবে মেয়েটি অভিযোগ দিলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।