কেন স্বেচ্ছায় কারাগারে যাচ্ছেন কোরিয়ানরা!

প্রকাশ : ০১ ডিসেম্বর ২০১৮, ১৫:৪৯

জাগরণীয়া ডেস্ক

আসামিদের জন্য যখন কারাগার নির্দিষ্ট, তখন দক্ষিণ কোরিয়ার মানুষজন স্বেচ্ছায় কারাবাসকে বেছে নিচ্ছেন! খবর রয়টার্স এর। 

দেশটির উত্তরপূর্বের হংচিওন এলাকায় ‘প্রিজন ইনসাইড মি’ নামের এই নকল কারাগারে গত ৫ বছরে প্রায় দুই হাজার মানুষে স্বেচ্ছায় কারাবরণ করেছেন। প্রাত্যহিক জীবনের ঝঞ্ঝাট থেকে বাঁচতে এই কারাগারে আশ্রয় নিচ্ছেন তারা। কারাবাস নেয়া বেশিরভাগই অফিস কর্মী নতুবা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী।

প্রসিকিউটর হিসেবে সপ্তাহে প্রায় ১০০ ঘণ্টা কাজ করা এই কারাগারের সহপ্রতিষ্ঠাতা নোহ জি-হিয়াং বলেন, নকল এই কারাগার তৈরির পরিকল্পনা তিনি পেয়েছেন তার স্বামীর কাছ থেকে। যিনি প্রায়ই সবকিছু ছেড়েছুঁড়ে কারাগারে চলে যাওয়ার কথা বলতেন। তিনি বলতেন, ‘নির্জন কারাবাসে’ গিয়ে বিশ্রাম নিতে পারলে ভালো হতো।

নোহ জিং আরও বলেন, কারাগার থেকে বের হয়ে অনেকেই মন্তব্য করেন, এটি কারাগার নয়, বরং আমরা এখান থেকে বের হয়ে যেখানে যাচ্ছে সেটি কারাগার।

৯০ ডলার দিয়ে ২৪ ঘন্টার জন্য কারাবাসে আসা অফিস কর্মকর্তা পার্ক হাই-রি (২৮) বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে জানান, ‘এই কারাগার আমাকে মুক্তির স্বাদ দেয়’।

কারাগার নিয়ম সম্পর্কে জানা যায়, এই কারাগারের নিয়ম খুব কড়া। মেঝেতে শুতে হয়। কোন স্মার্ট ফোন এবং ঘড়ি ব্যবহার করা যায় না। সবসময় নীল পোশাকে থাকতে হয়। কারাগার কক্ষেই একটা ছোট টয়লেট আছে, কিন্তু কোনও আয়না নেই। খাবারের মেন্যু খুবই সাধারণ- ডিনারে সিদ্ধ মিষ্টি আলু এবং ব্যানানা শেক। সকালের খাবার হিসেবে থাকে জাউ ভাত।

উল্লেখ্য, দক্ষিণ কোরিয়ার প্রযুক্তি নির্ভর, রপ্তানি চালিত অর্থনীতির কারণে দেশটিতে প্রতি পদক্ষেপে বেড়েছে ব্যস্ততা আর প্রতিযোগিতা। সেই সাথে সাধারণ মানুষ ভুগছে শারিরীক ও মানসিক চাপে। শুধুমাত্র ২০১৭ সালে দক্ষিণ কোরিয়ার প্রতিটি মানুষ গড়ে ২,০২৪ ঘণ্টা কাজ করেছে। অর্গানাইজেশন ফর ইকোনমিক কোঅপারেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট উন্ন্যনশীল ৩৬টি সদস্য দেশের ওপর জরিপ চালিয়ে এই তথ্য জানায় । বেশি পরিশ্রম করে বেশি আয়ের সুযোগ করে দিতে দেশটির সরকার ন্যুনতম মজুরির পরিমাণ বাড়িয়েছে। সপ্তাহে ৬৮ ঘণ্টার বদলে ৫২ ঘণ্টা কাজের আইন জারি করা হয়েছে সেখানে। 

আর তাই এমন নকল কারাগারের দিকে ঝুঁকছেন মানুষজন। 

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত