১৫ বছরে যুক্তরাষ্ট্রে ২ লাখ বাল্যবিবাহ

প্রকাশ : ১০ জুলাই ২০১৭, ২২:৪৪

জাগরণীয়া ডেস্ক

প্রচলিত আইনের ফাঁকফোকর গলে গত ১৫ বছরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে দুই লাখেরও বেশি শিশুর বিয়ে হয়ে গেছে। বাল্যবিবাহ হওয়া এসব শিশুর মধ্যে ১০ বছর বয়সী তিনটি মেয়েশিশু এবং ১১ বছর বয়সী একটি ছেলে শিশুও রয়েছে। সম্প্রতি প্রকাশিত নতুন পরিসংখ্যানে এ তথ্য উঠে এসেছে।

যুক্তরাষ্ট্রে বিয়ের জন্য নির্ধারিত সর্বনিম্ন বয়স ১৮ বছর। তবে প্রতিটি অঙ্গরাজ্যে এ ক্ষেত্রে কিছুটা ছাড় দেয়। যেমন মা-বাবার সম্মতি বা গর্ভাবস্থার কারণে অপ্রাপ্তবয়স্কদের বিয়ের অনুমোদন দেয় দেশটি। আলাস্কা, লুইজিয়ানা ও সাউথ ক্যারোলাইনায় শিশুদের ১২ বছরের বিয়ের অনুমোদন আছে। অপর ১১টি অঙ্গরাজ্য ১৩ বছরে বিয়ে করার অনুমতি আছে। এক হাজারের বেশি শিশু, যাদের বয়স ১৪ বছর বা নিচে, তারা বিয়ের অনুমতি পেয়েছে। দেশটির বেশির ভাগ অঙ্গরাজ্যে যৌনসম্মতির বয়স ১৬ থেকে ১৮ নির্ধারণ করা আছে। কোনো ব্যক্তি যদি শিশুর সঙ্গে যৌন সংসর্গে লিপ্ত হয়, তবে ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে ধর্ষণেরও অভিযোগ আনা যাবে। তবে বাল্যবিবাহের এসব ঘটনা বিচারক দ্বারা অনুমোদিত হয়ে থাকে। ফলে যৌন নির্যাতনের নানান অভিযোগ সেভাবে প্রকাশ্যে আসে না।

যুক্তরাষ্ট্রে ২০০০ থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে অন্তত ২ লাখ ৭ হাজার ৪৬৮টি বাল্যবিবাহের ঘটনা ঘটেছে। বাল্যবিবাহ রোধে কাজ করা এমন কিছু সংস্থা এবং এ-সংক্রান্ত অনুসন্ধানী তথ্যচিত্র নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ‘ফ্রন্টলাইন’-এর জরিপে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

তবে ধারণা করা হচ্ছে, বাল্যবিবাহের বাস্তব চিত্র আরও ভয়াবহ হতে পারে। কারণ, দেশটির ১০টি অঙ্গরাজ্য বাল্যবিবাহ-সংক্রান্ত কোনো তথ্য অথবা অসম্পূর্ণ তথ্য প্রকাশ করেছে। ফলে বাল্যবিবাহের প্রকৃত সংখ্যা আরও বেশি হতে পারে।

জরিপে দেখা গেছে, মাত্র ১৪ শতাংশ শিশু তাদের জীবনসঙ্গী হিসেবে প্রায় সমবয়সীদের পেয়েছে। অধিকাংশ শিশু যাদের বিয়ে করেছে, তারা ১৮ থেকে ২৯ বছর বয়সের ব্যক্তি। এদের মধ্য ৬০ শতাংশের বয়স ১৮ থেকে ২০-এর মধ্যে।

আলবামা অঙ্গরাজ্যে দেখা গেছে, ১৪ বছরের এক শিশুর সঙ্গে ৭৪ বছরের এক বৃদ্ধের বিয়ে দেওয়া হয়েছে। ওহাইওতে ১৭ বছরের শিশুর সঙ্গে ৬৫ বছরের বৃদ্ধের বিয়ের ঘটনা ঘটেছে।

এ বছরের মে মাসে বাল্যবিবাহ রোধে আনা একটি আইনে সই করতে অস্বীকৃতি জানান নিউ জার্সির প্রভাবশালী রিপাবলিকান গভর্নর ক্রিস ক্রিস্টি। ক্রিস্টির দাবি, আইনটি ধর্মীয় রীতিনীতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক। তবে ক্রিস্টির বিরোধিতার পরও বিলটি ইতিমধ্যে দেশটির আইনসভার উভয় কক্ষ অনুমোদন দিয়েছে।

বেসরকারি সংস্থা ‘আনচেইন্ড’-এর প্রতিষ্ঠাতা ফ্রাইডে রেইস বলেন, বাল্যবিবাহ-সংক্রান্ত নিউ জার্সির তথ্য-উপাত্ত পেয়ে তিনি প্রকৃত অর্থে ‘ধাক্কা’ খেয়েছিলেন। কারণ, তারা যে যে তথ্য-উপাত্ত পেয়েছিলেন, তা ছিল ভয়াবহ। ১৯৯৫ থেকে ২০১২ সালের মধ্যে সেখানে প্রায় সাড়ে তিন হাজার বাল্যবিবাহের ঘটনা ঘটেছে।

‘এটি আমার চিন্তা-ধারণার বাইরে ছিল’ উল্লেখ করে ফ্রাইডে রেইস আরও বলেন, ওই সব বিয়ের ক্ষেত্রে অধিকাংশেরই বয়স ছিল ১৩ বছর এবং তাদের বিয়ে হয় প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষদের সঙ্গে।

দেশটির তাহিরিহ বিচারকেন্দ্র সহিংসতার শিকার নারীকে আইনি সেবা প্রদান করে। এ সংস্থার আইনজীবী জেনে স্মুথ বলেন, শিশুর বিয়ের ক্ষেত্রে দেখা গেছে, এরা সাধারণত দরিদ্র পরিবার থেকে আসা। 

জেনে স্মুথ আরও বলেন, ‘প্রায় সব তথ্য-প্রমাণ নির্দেশ করছে যে নগরের মেয়েরা তরুণদের বিয়ে করতে পারছে না। মধ্যবিত্ত বা ধনী পরিবার থেকে আসা মেয়েরাও তরুণদের বিয়ে করতে পারছে না। এটি একটি গ্রামীণ প্রপঞ্চ এবং এটি দারিদ্র্যের কারণে ঘটছে।’

গত মাসে নিউইয়র্ক ১৭ বছরের কম বয়সী শিশুদের বিয়ে নিষিদ্ধ করেছে। এর আগে ১৪ বছর বয়সী শিশুদের বাবা-মা ও আদালতের অনুমতি সাপেক্ষে রাষ্ট্রীয় আইন অনুযায়ী বিয়ের অনুমতি পেত।

তথ্যসূত্র: ইনডিপেনডেন্ট

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত