‘বাংলাদেশকে উন্নত দেশে রূপান্তরের কর্ম-পরিকল্পনার কাজ শুরু করেছি’

প্রকাশ : ২৯ এপ্রিল ২০১৮, ১৭:০০

জাগরণীয়া ডেস্ক

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তাঁর সরকার ২০২১ সাল থেকে ২০৪১ সাল পর্যন্ত সময়ে বাংলাদেশকে একটি উন্নত দেশে রূপান্তরের প্রয়োজনীয় পরিকল্পনা ও কর্মপন্থা প্রণয়নের কাজ শুরু করেছে।

তিনি বলেন, ‘২০২১ সাল থেকে ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে আমরা কিভাবে দেখতে চাই সেভাবে বাংলাদেশকে উন্নয়নের জন্য আমরা পরিকল্পনা প্রণয়নের কাজ শুরু করেছি,’ তিনি ২৮ এপ্রিল (শনিবার) এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রদত্ত ভাষণে একথা বলেন।

শেখ হাসিনা বলেন, তাঁর সরকারের গৃহিত বিভিন্ন স্বল্পমেয়াদি, মধ্যমেয়াদি এবং দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ এবং তা বাস্তবায়নের জন্যই আজকে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে এবং উন্নয়নশীল দেশ হবার যোগ্যতা অর্জনে সমর্থ হয়েছে।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ ইতোমধ্যেই আগামী ছয় বছর পর্যন্ত উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে এর অবস্থানকে ধরে রাখার লক্ষ্য অর্জনে সমর্থ হয়েছে। এখন আমরা পরিকল্পনা করছি কিভাবে দেশকে ২০৪১ সাল নাগাদ উন্নত দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে পারি।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অষ্ট্রেলিয়া সফর উপলক্ষে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ অষ্ট্রেলিয়া শাখা এই সংবর্ধনার আয়োজন করে। তিনি সিডনীতে অনুষ্ঠিত গ্লোবাল উইমেন সামিট-২০১৮তে যোগদান করতে এবং গ্লোবাল উইমেন লিডারশিপ এওয়ার্ড-২০১৮ গ্রহণ করতে গত ২৭ এপ্রিল (শুক্রবার) সিডনী পৌঁছেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশ ২০৪১ সাল নাগাদ একটি উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়ে উঠবে এবং এই লক্ষ্য অর্জনে আমরা সকল ধরনের পদক্ষেপ ও পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি।’ তিনি বাংলাদেশের এই উন্নয়ন-অগ্রযাত্রা যাতে কোনভাবে ব্যাহত না হয় সেজন্য সকলকে সতর্ক থাকার আহবান জানিয়ে বলেন, যুদ্ধাপরাধী, খুনী এবং দেশের উন্নয়নের প্রতি অনাস্থাশীল চক্র যাতে কোনভাবে আর কোনদিন এ দেশের রাষ্ট্রীয় রাস্ট্রীয় ক্ষমতায় আসতে না পারে।

দেশের মর্যাদার বিষয়ে সবসময় সতর্ক থাকার আহবান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী প্রবাসী বাংলাদেশীদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘আপনারা যে যেখানেই বাস করুন না কেন, আপনাদের দেশপ্রেম নিয়ে কাজ করে দেশের সম্মানকে তুলে ধরতে হবে, যে সম্মান আমরা লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জন করেছি।

তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের ক্ষুধা ও দারিদ্র মুক্ত বাংলাদেশ বিনির্মাণের মধ্যদিয়েই আমরা এই শহীদদের প্রতি যথাযথভাবে সন্মান জানাতে পারি।’

প্রধানমন্ত্রীর ছোট বোন শেখ রেহানা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী, মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন।

অষ্ট্রেলিয়ার আরএমআইটি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড.শামসু রহমান, আওয়ামী লীগ নেতা ড. মিল্টন হাসনাত, গামা আব্দুল কাদির, আনিসুর রহমান রিতু, প্রদ্যুত সিং চুন্নু এবং নিরাজুল ইসলাম অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সংবর্ধনা আয়োজন কমিটির আহবায়ক শেখ শামিমুল হক।

অষ্ট্রেলিয় আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ, বিভিন্ন পেশাজীবী এবং সাংস্কৃতিক সংগঠনের পক্ষ থেকে অনুষ্ঠানের শুরুতে প্রধানমন্ত্রীকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানানো হয়।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু বেঁচে থাকলে স্বাধীনতার ১০ বছরের মধ্যেই বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেতো, যা ৪৭ বছর পর পেয়েছে।

তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু দারিদ্র্য নির্মূল করে দেশের মানুষকে সমৃদ্ধ জীবন দেয়ার পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিলেন। কিন্তু ১৯৭৫ পরবর্তী শাসকরা দেশকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিয়েছিল। কারণ দেশের স্বাধীনতায় তাদের বিশ্বাস ছিল না।’

শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধু তাঁর সাড়ে ৩ বছরের শাসনামলে যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশকে পুনর্গঠন করে দেশের অর্থনীতিকে সম্ভাবনাময় রূপ দিয়েছিলেন। ক্ষমতায় থাকার স্বল্প সময়ে তিনি যে বিপুল কাজ করেছিলেন তা ভাবলে আমাদের বিম্মিত হতে হয়। তাঁর হত্যাকাণ্ডের পর বাংলাদেশ সবক্ষেত্রে পিছিয়ে যায়।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, জিয়াউর রহমান হলেন মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিঘ্নিত করার জন্য দায়ী প্রথম ব্যক্তি, তিনি ক্ষমতা আঁকড়ে থাকার জন্য একটি এলিট ও দুর্নীতিবাজ গোষ্ঠী সৃষ্টি করেছিলেন। ফলে বাংলাদেশ একটি ভিক্ষুকের দেশে পরিণত হয়েছিল। অন্য সকল অবৈধ ও সামরিক শাসকরা তার পদাঙ্ক অনুসরণ করে।

তিনি বলেন, খালেদা জিয়ার লাগামহীন দুর্নীতি বাংলাদেশকে পর পর পাঁচ বছর দুর্নীতিগ্রস্ত দেশে পরিণত করে। আমেরিকা ও সিঙ্গাপুরের গোয়েন্দা সংস্থা এই দুর্নীতি উদঘাটন করে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ বঙ্গবন্ধুর প্রতিষ্ঠিত সংগঠন এবং এটি দেশকে স্বাধীন করেছে। কিন্তু জিয়া ও তার স্ত্রী বঙ্গবন্ধু, আওয়ামী লীগ, ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ এবং স্বাধীনতার সকল দলিলপত্র ও প্রতীক মুছে ফেলতে হেন চেষ্টা নাই যা করেননি।

তিনি বলেন, ‘কিন্তু সত্যকে কেউ দামাচাপা দিয়ে রাখতে পারে না। আর ১৯৭১ সালের ৭ মার্চের বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণকে ইউনেস্কোর স্বীকৃতি এর জ্বলন্ত উদাহরণ।

শেখ হাসিনা বলেন, ছয় বছরের নির্বাসিত জীবন শেষে ১৯৮১ সালে তিনি যখন দেশে ফিরেন তখন বাংলাদেশের মানুষ এক কঠিন সময় পার করছিল এবং দেশ খুনিদের শাসনে কাতরাচ্ছিল।

তিনি বলেন, বারবার তাঁর প্রাণনাশের চেষ্টা সত্ত্বেও দেশের মানুষের নিঃস্বার্থ সমর্থন এবং আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের অপরিসীম ত্যাগের কারণে তাঁর দেশে ফেরা সম্ভব হয়েছে।

তিনি বলেন, ‘আমি তাদের হুমকি-ধামকিকে কখনো ভয় পাইনি। জনগণের জন্য কাজ করা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বাংলাদেশকে গড়ে তোলা অব্যাহত রেখেছি এবং দেশকে সামনে এগিয়ে নিয়েছি।’

শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ডের ২১ বছর পর বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ যখন ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় আসে তখন বাংলাদেশে সত্যিকার উন্নয়নের ধারা সৃষ্টি হয়।

গ্রামের মানুষ এখন উন্নয়নের সুফল পাচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘দেশের মানুষ আমাদের শাসন এবং ২০০৮ সাল থেকে আমরা যেসব উন্নয়ন কর্মকা- বাস্তবায়ন করেছি তার সুফল ভোগ করছে।’

বিভিন্ন আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সাফল্যের প্রসঙ্গ বর্ণনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সন্ত্রাস দমন করা ছিল অগ্রাধিকার কাজ, যা তাঁর সরকার কয়েক বছরের মধ্যে সম্পন্ন করেছে।

বিএনপির সমালোচনা করে তিনি বলেন, ২০০১ সালে ক্ষমতায় এসে বিএনপি পাকিস্তানি কায়দায় দেশ চালিয়েছে। এই দলটি দেশে সন্ত্রাস, হত্যা ও দুর্নীতির রাজত্ব কায়েম করেছে।

শেখ হাসিনা বলেন, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ করেনি এবং তারা দেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ধ্বংস করতে চেয়েছে। আন্দোলনের নামে তারা দেশব্যাপী তান্ডব ও ধ্বংসাত্মক কাজ এবং নিরাপরাধ মানুষকে হত্যা ও আহত করেছে।

দুর্নীতির বিরুদ্ধে তাঁর সরকারের দৃঢ়তার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, পদ্মা সেতু নির্মাণে আমাদের বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাংকের উত্থাপিত দুর্নীতির অভিযোগ কানাডার আদালতে মিথ্যা ও অতিরঞ্জিত বলে প্রমাণিত হয়েছে।

বিশ্বব্যাংকের অর্থায়ন ছাড়া পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ বাস্তবায়িত হবে বলে কেউ চিন্তা করতে পারেনি উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘বিশ্বব্যাংক আমাদেরকে দুর্নীতিপরায়ণ হিসেবে চিহ্নিত করার অপচেষ্টা করেছিল। আমরা তাই তাদের কাছ থেকে একটি টাকাও নিইনি এবং আমরা আমাদের নিজস্ব অর্থেই এই মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন করছি।’

তিনি বলেন, জনগণের সেবার জন্যই রাজনীতিতে এসেছেন, তাঁর ভবিষ্যত তৈরির জন্য নয়।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমার পিতা দেশকে স্বাধীন করে গেছেন এবং এই দেশের জনগণের জন্যই তিনি তাঁর সমগ্র জীবন উৎসর্গ করেছেন। বঙ্গবন্ধুর প্রদর্শিত পথে বাংলাদেশকে গঠন করাই এখন আমার দায়িত্ব।’

নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মাসেতু নির্মাণে তাঁর সরকারের সিদ্ধান্তকে সর্বাত্মকরণে সমর্থন দেয়ায় তিনি দেশের সাধারণ জনগণ ও প্রবাসীদের প্রতি ধন্যবাদ জানান।

অস্ট্রেলিয়ার অনেক রাজনৈতিক নেতার আমাদের মুক্তিযুদ্ধে দৃঢ় সমর্থন দানের কথা স্মরণ করে শেখ হাসিনা বাংলাদেশের উন্নয়নে অস্ট্রেলিয়ার ভূমিকার ভুয়সী প্রশংসা করেন। উন্নয়নশীল দেশ থেকে অস্ট্রেলিয়া প্রথম ১৯৭২ সালের ৩১ জানুয়ারি বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিয়েছিল বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

স্বাধীনতার পর থেকেই অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশের চমৎকার সম্পর্ক বজায় রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, খাদ্য সহায়তা ও অন্যান্য সহযোগিতাসহ যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ গঠনেও অস্ট্রেলিয়ার ব্যাপক অবদান রয়েছে।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত