ছুটি বাড়ছে সব ধর্মের প্রধান উৎসবের

প্রকাশ | ১৪ জুন ২০১৭, ১৭:৫৩

অনলাইন ডেস্ক

এতদিন কেবল দুই ঈদে ৩ দিন ধরে সরকারি ছুটি ভোগ করে আসছিলেন সরকারি চাকুরীজীবিরা। এখন থেকে আরো ৩ দিন বাড়িয়ে মোট ৬ দিনের ছুটি করার বিষয় প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। তবে কেবল ঈদ নয়, সব ধর্মের প্রধান উৎসবের ছুটি বাড়বে। মুসলমানদের ঈদের ছুটির আদলে হিন্দু ধর্মের প্রধান উৎসব দুর্গাপূজা, খ্রিস্টানদের বড়দিন এবং বৌদ্ধদের উৎসব বুদ্ধপূর্ণিমার ছুটিও বাড়বে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে এ সংক্রান্ত নির্দেশনা দিয়েছেন। ১৩ জুন (মঙ্গলবার) প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে এ নির্দেশনা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পৌঁছেছে। এর আগে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে মুসলমানদের বড় দুই ধর্মীয় উৎসব ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহার ছুটি দ্বিগুণ করার প্রস্তাব দেওয়া হয়। ঈদুল ফিতরের প্রচলিত ছুটির সঙ্গে অতিরিক্ত তিন দিন যোগ করে মোট ছয় দিন এবং ঈদুল আজহার তিন দিনের সঙ্গে অতিরিক্ত আরো তিন দিনের ছুটি অনুমোদন করার সুপারিশ করা হয়। এসব ছুটি সরকারি কর্মচারীদের নৈমিত্তিক ছুটির সঙ্গে সমন্বয়ের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে।

এ প্রস্তাবে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় নীতিগতভাবে একমত পোষণ করে। তবে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে প্রশ্ন তোলা হয়, শুধু ঈদের ছুটি কেন বাড়বে। ছুটি বাড়াতে হলে সব ধর্মের মূল উৎসবের ছুটি বাড়াতে হবে এবং সে অনুযায়ী নতুন প্রস্তাব তৈরি করে তা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠাতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দেওয়া হয়।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. মোজাম্মেল হক খান বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নির্দেশনা আমরা পেয়েছি। বিষয়টি নিয়ে আমরা কাজ করছি। ’

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, দুই ঈদে মোট ছয় দিন ছুটি বাড়ালে নৈমিত্তিক ছুটি অবশিষ্ট থাকে ১৪ দিন। দুর্গাপূজা, বড়দিন ও বুদ্ধপূর্ণিমায় আরো এক দিন করে বাড়ালে মোট তিন দিন ছুটি বাড়াতে হয়। ফলে নৈমিত্তিক ছুটি থাকে আর ১১ দিন। এ বিষয়টিও সরকারকে ভাবতে হচ্ছে। আরেক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, নৈমিত্তিক ছুটি ১১ দিনের বেশি রাখার দরকার কি? বেশির ভাগ সরকারি কর্মচারী বছরের বরাদ্দকৃত নৈমিত্তিক ছুটি ভোগ করেন না। সে ক্ষেত্রে কারো আপত্তি থাকার কথা নয়।

এসব ছুটি চলতি মাসের শেষে অনুষ্ঠেয় ঈদুল ফিতরেই কার্যকর হবে কি না জানতে চাইলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘চলতি বছর থেকেই এ নিয়ম কার্যকর হতে পারে। কারণ বিষয়টির সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় একমত। আমরা প্রস্তাবটি প্রস্তুত করে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠিয়ে দেব। প্রধানমন্ত্রী সুইডেন থেকে ফিরে এ প্রস্তাব অনুমোদন করে দিলে তা মন্ত্রিসভার পরবর্তী বৈঠকে (১৯ জুন) উপস্থাপন করা হতে পারে। সেখানে অনুমোদন হলেই এ ছুটি কার্যকরে কোনো বাধা থাকবে না। ’

গত কয়েক বছর ধরেই ঈদের ছুটি বাড়ানো নিয়ে বিতর্ক চলছে। গত বছর ঈদের ছুটি বাড়িয়ে তা আবার সাপ্তাহিক ছুটি শনিবারের সঙ্গে সমন্বয় করা হয়। তখন অনেকেই বদলি ছুটির পরিবর্তে নৈমিত্তিক ছুটির সঙ্গে সরকারি ছুটি সমন্বয় করার তাগিদ দেন।

চাঁদ দেখা সাপেক্ষে ২৬ বা ২৭ জুন বাংলাদেশে ঈদুল ফিতর উদযাপিত হতে পারে। এ জন্য ২৬ জুন ঈদ ধরে ২৫, ২৬ ও ২৭ জুন ঈদের ছুটি নির্ধারিত আছে। ঈদের আগে সরকারি চাকরিজীবীদের শেষ অফিস ২২ জুন বৃহস্পতিবার। ২৩ জুন শুক্রবার, সেদিনই শবেকদর। ২৪ জুন শনিবার সাপ্তাহিক ছুটি, ২৫ থেকে ২৭ জুন ঈদের ছুটি এবং মাঝে ২৮ ও ২৯ জুন অফিস খোলা। ৩০ জুন শুক্রবার ও ১ জুলাই শনিবার সাপ্তাহিক ছুটি। অর্থাৎ ২৮ ও ২৯ জুন অফিস বন্ধ থাকলে ২৩ জুন থেকে ১ জুলাই পর্যন্ত ৯ দিন ছুটি কাটিয়ে ২ জুলাই থেকে যথারীতি অফিস শুরু হবে। কোরবানির ঈদে নির্ধারিত তিন দিন ছুটির সঙ্গে আরো তিন দিন যুক্ত করা হচ্ছে।

ঈদে ঘরমুখো মানুষ দীর্ঘ সময় পথে আটকে থাকে। পৌঁছাতে না পৌঁছাতেই ফেরার তাগিদ। ফলে অনেকেরই প্রিয়জনের সঙ্গে ঈদের আনন্দ পূরণ হয় না। অথচ ঈদের সময় বাড়তি ছুটি উৎসবের আনন্দ বাড়িয়ে দিতে পারে বহুগুণ। বিশ্বে অনেক দেশেই ধর্মীয় বা জাতীয় উৎসবে দীর্ঘ ছুটি দেওয়ার রেওয়াজ রয়েছে। বাংলাদেশেও ঈদের ছুটি বাড়ানোর আলোচনা ও প্রস্তাব দিন দিনই জোরালো হচ্ছে।   ঈদের ছুটি বাড়ানোর জন্য বিভিন্ন সময় পুলিশের পক্ষ থেকে সরকারকে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। ছুটি বাড়ানোর পক্ষে তাদের যুক্তি হচ্ছে—মাত্র তিন দিন ছুটি থাকায় এক সঙ্গে প্রচুর লোক ঢাকা ও বিভিন্ন শহর থেকে গ্রামের উদ্দেশে রওনা হয়। এতে পথে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। এ সময় ঘরমুখো মানুষ নানা হয়রানির মুখে পড়ে। এর পরের বছরই সচিবসভায় ঈদের ছুটি কিভাবে বাড়ানো যায় তা নিয়ে সচিবদের কাছ থেকে প্রস্তাব আহ্বান করা হয়।

সৌদি আরবে ঈদুল ফিতরের ছুটি থাকে সাত দিন। ঈদুল আজহার ছুটি থাকে ১০ দিন। চীনে বসন্ত উৎসবে সরকারি ছুটি থাকে টানা সাত দিন। অক্টোবর মাসেও ছুটি আছে এক সপ্তাহের। মালয়েশিয়া, ব্রাজিলসহ অন্যান্য দেশেও দুই ছুটির মাঝের কর্মদিবসগুলোকে ছুটি ঘোষণা করা হয়।