শুনুন ‘কারখানার’ উদ্যোক্তাদের গল্প

প্রকাশ : ১৬ নভেম্বর ২০১৬, ১৮:৫৩

নাফিসা শামা প্রভা

গহনা ভালোবাসে না এমন মেয়ে খোঁজে পাওয়া কঠিন। নতুন নতুন ডিজাইনের গহনা প্রত্যেক মেয়েই পছন্দ করে। আর সেসব গহনাতে যদি থাকে কাঠ এবং রঙের অভিনব মিশ্রণের কারুশিল্প, তাহলে তো কথাই নেই। 

ইদানীং আমাদের দেশের তরুণ-তরুণীদের যেমন পোশাক-আশাকে এসেছে নতুনত্ব, তেমনই তাদের গহনা বাছাইয়ের ক্ষেত্রেও বেশ সৃজনশীলতার দিকে ঝুকছে। একটা সময় মেয়েরা গহনা পড়লেও এখন কিছু কিছু প্রতিষ্ঠান ছেলেদের জন্য গহনা তি করেছেন। আর ছেলেও খুব স্বচ্ছন্দে সঙ্গে সেগুরো ব্যবহারও করছে।   

সোনা ও রূপার গহনা আমাদের আদি ঐতিহ্যরই এক রূপ। আর এখনকার প্রজন্ম আগ্রহী হচ্ছে আটপৌরে গহনার প্রতি যার মূল কাঁচামাল হয়তো অতি সাধারণ কাঠ বা পিতল। তবে তাতে শুধুমাত্র হাতের কাজই ফুটিয়ে তুলছে কিছু অসাধারণ কারুশিল্প। তরুণ-তরুণী নির্বিশেষে এখন গলার পেন্ডেন্ট পছন্দ করেন।

পরিবর্তনধর্মী গহনার তৈরিতে পেছনে কিছু তরুণ উদ্যোক্তার হাত রয়েছে।  যাদের অভিনব চিন্তা-ভাবনা হাত আর অক্লান্ত পরিশ্রমে আমাদের গহনা-শিল্পে আসছে চমৎকার নতুনত্ব! এমনই কিছু তরুণ উদ্যোক্তাদের প্রয়াসের বাস্তব রূপ নিলো ‘কারখানা’- এটি মূলত একটি অনলাইন গহনার সংগ্রহশালা। 

এখানকার গহনা তৈরি করা হয় কেরোসিন কাঠ এবং তার ওপর অ্যাক্রিলিক রঙ দিয়ে— গহনা নিয়ে এ ধরণের এক্সপেরিমেন্ট উল্লেখযোগ্যভাবে এর আগে তেমন করা হয়নি। 

“কারখানা” তাদের যাত্রা শুরু করেছে পেন্ডেন্ট বা মালা দিয়ে, তবে এ বিষয়ে নিশ্চিত যে, এই কারখোনা থেকে আরও নতুন ধরণের গহনার আবির্ভাব হবে।

কেরোসিন কাঠের গহনার ওপর রঙে ফুটিয়ে তোলা হয় বিচিত্র বিষয়বস্তু, সেখানে বিড়ালপ্রেমীরা যেমন পাবেন তাদের পছন্দের থিমের পেন্ডেন্ট (বলা বাহুল্য কারখানার সঙ্গে যুক্ত প্রত্যেকেই একেকজন বিরাট বিড়ালপ্রেমী)। তেমন ইদানীংকালের সবচেয়ে জনপ্রিয় টিভি সিরিয়াল ‘গেম অফ থ্রোন্স’এর ভক্তরাও পাবেন চমৎকার ডিজাইনের পেডেন্ট। এছাড়া কারখানার ভাণ্ডারে  আরো থাকছে অসাধারণঅনেক থিমের পেন্ডেন্ট, যা ক্রেতারা তাদের ফেসবুক পেজে পাবেন।  

এসব গহনা খুব সাবলীলভাবে যেকোন পোশাকের সাথেই মানিয়ে যাবে। যেমন ওয়েস্টার্ন পোশাক তেমনি সুতি শাড়ি সঙ্গে গহনা অনায়াসে ব্যবহার করতে পারবেন। তরুণীদের পাশাপাশি এখন অনেক তরুণরাও পছন্দ করেন একটু ছোট আকারের পেন্ডেন্ট। তাই এখানে ছেলেদের জন্যও সংগ্রহ রাখা হয়েছে চেনা-অচেনা নানান থিমের পেন্ডেন্ট। 

এবার কারখানার কারিগরদের নিয়ে কিছু বলতে হচ্ছে। এই কারখানার সদস্যরা নিজেদের কামলা বলেই অভিহিত করেন। চার বন্ধু-তিলোত্তমা, নোমান, অন্তরা এবং রাজীব যথাক্রমে আহসানউল্লাহ ইউনিভার্সিটি এবং এশিয়া প্যাসিফিক ইউনিভার্সিটির ছাত্র-ছাত্রী। তারা সবাই নিজেদের হাতে গহনা বানানোর প্রতিটি ধাপ সম্পাদন করেন।

পোশাক এবং গহনার ঢঙে তো নতুনত্ব আছেই, তার সঙ্গে আমাদের দৈনন্দিন জীবন-যাত্রার বিভিন্ন পরিবর্তনের কারণে ফেসবুক-নির্ভর অনলাইন শপগুলোর জনপ্রিয়তা এবং চাহিদাও বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাতে করে অনেক উদ্যোক্তাদের সৃজনশীলতা এবং ব্যবসার প্রসার হচ্ছে, যেটা নিয়ে আমরা ভবিষ্যতে বেশ আশা করতে পারি। 

আমরা চাই আমাদের নতুন প্রজন্ম তাদের অনন্য এবং দারুন সব কল্পনার বাস্তবায়ন করুক। ঠিক যেভাবে ‘কারখানা’ আর তার কামলারা তাদের স্বপ্ন পূরণের পথে সাহস করে নেমেছে, আমাদেরও দায়িত্ব তাদের সমর্থন দিয়ে এবং উৎসাহিত করে তাদের উদ্যোক্তা হওয়ার পথে স্বাগতম জানানো।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত