প্রবাসে সংস্কৃতির দূত ফারজানা রিপা

প্রকাশ : ০৮ এপ্রিল ২০১৭, ১৭:৩৮

জাগরণীয়া ডেস্ক

দেশবরেণ্য নারী চিত্রশিল্পীদের একজন ফারজানা রিপা। একই সঙ্গে আবার খ্যাতিমান পোশাক ডিজাইনার। কাপড় আর ফ্রেম তার ক্যানভাস। থাকেন থাইল্যান্ডে। ফ্যাশন ডিজাইনিং আর পেইন্টিং, মাধ্যম দু’টি হলেও শিল্পসত্তা দিয়ে প্রবাসে বসে তিনি আঁকেন অভিন্ন এক ছবি। আর এতে মূর্ত হয়ে ওঠে বাংলাদেশেরই প্রতিচ্ছবি। 

নানা প্রদর্শনীতে অংশ নিয়ে এভাবেই বিশ্বের কাছে মেলে ধরছেন নিজের দেশের ঐতিহ্য তার সংস্কৃতিকে। হয়ে উঠেছেন প্রবাসে সংস্কৃতির দূত। শিল্প আর সংস্কৃতিতে বাংলাদেশ যে কতোটা সমৃদ্ধ সেই উচ্চতাও তুলে ধরছেন থাইল্যান্ডে স্থানীয় শিল্পীদের সঙ্গে যৌথ প্রদর্শনীর মাধ্যমে।

স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ দূতাবাসের উদ্যোগে গত ২৭ মার্চ (সোমবার) ব্যাংককে আয়োজন করা হয় দুই দিনব্যাপী চিত্রকলা প্রদর্শনীর। এতে প্রদর্শিত হয় ফারজানা রিপাসহ বাংলাদেশের চার নারী শিল্পীর চিত্রকর্ম।

থাইল্যান্ডের ডিজিটাল ইকোনমি ও সোসাইটি মন্ত্রী ড. পিচেট ডুরাংকাভেরাজ প্রদর্শনীর উদ্ধোধন করে বাংলাদেশের শিল্পকর্মের ভূয়সী প্রশংসা করে বলেন, বাংলাদেশের চিত্র ও শিল্পকলা অত্যন্ত উন্নতমানের।

এ প্রসঙ্গে ফারজানা রিপা বলেন, এই প্রাপ্তিটাই আমাদের অহংকার। এভাবে প্রবাসে থাইল্যান্ড ও বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক সহযোগিতা বাড়াতে দূতাবাস যে উদ্যোগ নিচ্ছে, আমরা তার অংশীজন হয়ে ভিনদেশে তুলে ধরছি নিজের প্রিয় মাতৃভূমিকে।

কেবল রঙ-তুলির আঁচড়মাখা চিত্রকর্মেই নয়, ফ্যাশন ডিজাইনিংয়েও বাংলাদেশকে তুলে ধরছেন অন্যভাবে।

এখানকার চুরালংকন ও শিল্পাংকন ইউনিভার্সিটির সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে চিত্রশিল্পের প্রদর্শনীর মাধ্যমে এখানকার নতুন প্রজন্মের কাছে পৌঁছে দিয়েছেন বাংলাদেশের ঐতিহ্য আর সংস্কৃতিকে।

ফ্যাশন ডিজাইন আর পেইন্টিং। অবশ্যই দু’টি আলাদা মাধ্যম। তবে অভিন্ন সত্ত্বায় তা দাঁড়িয়ে আছে সৃষ্টিশীলতায়, বলতে পারেন ক্রিয়েটিভ প্ল্যাটফর্মে। এখানে আমি তুলে ধরি বাংলাদেশের কাপড়। দেশের ফেব্রিক্স, তাঁত, খাদি, সিল্ক বা কটনের কাপড় তখন হয়ে ওঠে এক একটি ক্যানভাস। প্রবাসে এগুলোকে প্রমোট করি। দেশের ঐতিহ্য, প্রাসঙ্গিক চাহিদার আলোকে এমনভাবে শাড়ি বা সালোয়ার কামিজে ফিউশন করি, যার দূর্নিবার আকর্ষণ টেনে নেয় এখানকার স্থানীয় ছাড়াও স্থানীয়দের, নিজের কাজ নিয়ে স্থানীয় একটি পত্রিকার সাংবাদিককে এভাবেই বলেন ফারজানা রিপা।

দেশের অন্যতম ফ্যাশন হাউজ ব্র্যাকের আড়ংয়ে ডিজাইনার হিসেবে সাত বছর মর্যাদাপূর্ণ অবস্থানে কাজ করেছেন।

এক পলকে ফারজানা রিপা, ঢাকার বনানীতে বেড়ে ওঠা। বাবা শাহাবুদ্দিন হাওলাদার। ছয় বোন ও এক ভাইয়ের মধ্যে দ্বিতীয় রিপার শিল্পের প্রতি ঝোঁক সেই ছোটবেলা থেকেই। হলিক্রস কলেজ থেকে ঢাকা বিশ্বিবিদ্যালয়ের চারুকলায়। ফাইন আর্টসের শিক্ষার্থী অবস্থায় ব্র্যাকের আড়ংয়ের সঙ্গে সম্পৃক্ত হন। স্বামীর কর্মস্থলের সুবাদে প্রথমে শ্রীলংকার কলম্বো, সেখান থেকে চলে আসেন থাইল্যান্ডের ব্যাংককে।

অয়েল পেইটিং, অ্যাক্রেলিক রঙ বা মিক্স মিডিয়ার ক্যানভাসে তুলে ধরেন নিজের সংস্কৃতি আর একান্ত শিল্প ভাবনাকে। রঙ-তুলির আঁচড়ে ফ্রেমবন্দি রাখেন সময়কে।

স্বামী রাকিবুল আমিন আর একমাত্র কন্যা অদৃতি আমিনকে নিয়েই সুখের সংসার। গ্রেড সেভেনে পড়ুয়া কন্যার ঝোঁকও মায়ের সৃষ্টিশীলতার প্রতি।

সংসার সামলে ফ্যাশন ডিজাইনিং, পেইন্টিং আর দেশ-বিদেশে প্রদর্শনী – কী করে সামলান?

‘সব কৃতজ্ঞতা রাকিবুল আমিনের। আমার আগ্রহ দেখে ওই আমাকে চারুকলায় পাঠিয়েছিল। এখনও সেই আগের মতোই শিল্পের প্রতি ভালোবাসায় এসব কাজে উৎসাহ আর সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। কারণ, সে নিজেও অসম্ভব শিল্পানুরাগী। বলতে পারেন, আমার সব প্রেরণার উৎস’।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত