‘এখন কঠোর সিদ্ধান্ত নেবার পালা’

প্রকাশ : ১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, ১৬:০৪

জাগরণীয়া ডেস্ক

মিস আয়ারল্যান্ড খেতাব জয়ী বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মাকসুদা আক্তার প্রিয়তি। ন্যাচারাল বিউটি বিভাগ প্রিয়তিকে ‘মডেল অব দ্য ইয়ার’ নির্বাচন করেছে আয়ারল্যান্ডের জনপ্রিয় ম্যাগাজিন আইরিশ ফ্যাশন অ্যান্ড গ্ল্যামার। 

মাকসুদা আক্তার প্রিয়তি তার ফেসবুক এ লিখেছেন, আমাদের নতুন জেনারেশন মনে করে আমাদের দেশে অনেক কিছুর পরিবর্তন আনতে হবে, আর পরিবর্তন আনতে হলে আমাদেরই দেশ চালনার দায়িত্ব নিতে হবে।

দুটো বড় কাজের প্রস্তুতি এক সাথে কখনই ভালো হয় না। যেকোনো কাজের প্রস্তুতির প্রতি দৃঢ় প্রতিজ্ঞা, কঠোর পরিশ্রম, নিষ্ঠা, পরিকল্পনা, লক্ষ্য, সময়ের কাঠামো তৈরি করা, এইগুলোর সমন্বয় লাগে। হুট করে কোন কাজের স্থায়িত্ব বেশী দিন থাকে না। অন্তত পর্যাপ্ত প্রস্তুতি ছাড়া আমি কোন কাজ করতে পারি না, করতে শিখিও নি। যেমন, মিজ আয়ারল্যান্ড এর সময় আমি প্রস্তুতির সময় ছিল সাত মাস, মিজ আর্থ এর সময় এক বছর, আইরিশ মুভিতে অভিনয় এর জন্য এক বছর। 

সুতরাং, দুটো কাজ একসাথে করে ভালো রেজাল্ট দেয়া সম্ভব নয়। বলিউডে কাজ করা মানে, I have to be a girl from next door. তাদের ভাষা, accent (উচ্চারণভঙ্গি) পুরো পুরি ভাবে আয়ত্তে আনতে হবে, বিভিন্ন ধরনের নাচের ট্রেইনিং নিতে হবে। যার সমন্বয়ের নিজেকে establish করা বা proof করতে ৫-৭ বছর সর্বনিম্ন লেগে যায়, যা আমরা অন্যান্য বিদেশী অভিনেত্রীরা বলিউড এ কাজ করছে তাদের দিকে তাকালেই বুঝতে পারি। আমার অর্জনগুলো বা টাইটেল গুলো একটা বড় চাবি যা শুধুমাত্র বড় দরজা খুলে দেয়ার ভুমিকা রেখেছে, যার কাছ পর্যন্ত সাধারণ মানুষ আসা একটি স্বপ্ন মনে করে।

হলিউডেও একই রকম। আমেরিকান লোকাল Accent (উচ্চারণভঙ্গি) আনতে হবে, এমন কি গালিটাও লোকাল হতে হবে। নাচের পরিবর্তে বিভিন্ন রকমের ফাইটিং এর ট্রেইনিং, অভিনয় দক্ষতার পাশাপাশি ফিটনেসে সর্বশ্রেষ্ঠ থাকতে হবে, skill (দক্ষতা) হিসাবে জানতে হবে হাজার ফুট উঁচু পাহাড় থেকে কিভাবে লাফ দিতে হবে আবার কিভাবে পাহাড়ে বেয়ে উঠতে হবে, কিভাবে সমুদ্রে সাঁতার কাটতে হবে আবার কিভাবে বরফে স্কিইং করতে হবে। Accent পরিবর্তন করা খুব সহজ কাজ না। যার জন্য বলিউড এর বড় বড় অভিনয় শিল্পী রা কাজ পায় না, আর পেলেও টিকে থাকতে পারে না। এই গুলোর প্রস্তুতি নিতে নিতেও ৭/১০ বছর টানা লেগে যায়। আমি আয়ারল্যান্ড এ গত পনের বছর থাকার পরও আমি আইরিশ ইংলিশ Accent জব্দ করতে পারিনি। অবশ্য তার জন্য আমি নিজেকে কখনও force/push ও করিনি, করতে হয়নি। 

এখন আসি, বাংলাদেশের রাজনীতির ব্যাপারে। বলা হয়ে থাকে যে রাজনীতি নোংরা। এইটা যে শুধু বাংলাদেশে, তা কিন্তু নয়। পৃথিবীর সব দেশেই। যে যেই ভাবে তার দৃষ্টিকোণ থেকে দেখে, কারণ সবার মতাদর্শ ভিন্ন। কিন্তু আমি বিশ্বাস করি, আমাদের নতুন জেনারেশন মনে করে আমাদের দেশে অনেক কিছুর পরিবর্তন আনতে হবে, আর পরিবর্তন আনতে হলে আমাদেরই দেশ চালনার দায়িত্ব নিতে হবে। তাই বলে ধুপ করে পরিবর্তন আনা যাবে না। তার জন্য তৃণমূল পর্যায়ে, মাঠ পর্যায়ে কাজ করতে হবে সমাজকর্মী হিসাবে, পরিবর্তন আনতে হবে শেকড় থেকে। ৪০/৪৫ বছর পর যখন আমরা বার্ধক্যর প্রতি এগুতে থাকি তখন আমাদের শরীর অলরেডি ক্লান্ত হওয়ার পথে। তখন সমাজের সমাজকর্মী হয়ে কাজ করা থেকে অফিসের রুমে এসে কাজ চালানোর চিন্তা বেশী আসে। আমার ভিতরে যেই প্রশ্নটি বেশী আসে,‘আচ্ছা আমাদের গড় আয়ু কতদিন? স্বাভাবিক ভাবে বাঁচবো কতো দিন? নিজের দেশে serve (সেবা করা) করার সুযোগ আছে কতো দিন? কবে আনতে পারবো গতানুগতিক দিক থেকে বেরিয়ে পরিবর্তন আনার চেষ্টা?’ 

আমার এখন কঠোর সিদ্ধান্ত নেবার পালা। বাকিটা নির্ভর করছে আপনারা আমাকে কোথায় বেশী দেখতে চান আর উপরওয়ালা আমার ডেস্টিনি কোথায় রেখেছেন। কিন্তু একটা কথা, সবার উপরে আপনাদের ভালোবাসা, যার সাথে কোন ধরনের সমঝোতা নয়।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত