পাল তোলা নৌযানে বিশ্বভ্রমণ

দুঃসাহসিক অভিযাত্রী অ্যালেন ম্যাকআর্থার

প্রকাশ : ০৮ মে ২০১৭, ১৫:৩৮

মারুফ ইসলাম

পুরো নাম ড্যাম অ্যালেন প্যাট্রিসিয়া ম্যাকআর্থার। ছোট নাম অ্যালেন ম্যাকআর্থার। বন্ধুরা অবশ্য ডাকেন আরও ছোট নামে-শুধুই অ্যালেন। চিনতে পারছেন, অ্যালেনকে? না পারারই কথা। আশপাশের সব মানুষকেই ঠিকঠাক চিনি না, তার উপর আবার বিদেশি! এবার যদি বলি, শুধু পালতোলা এক নৌকা নিয়ে দ্রুততম সময়ে বিশ্বভ্রমণের রেকর্ড গড়েছিলেন এক নারী… ব্রিটিশ সরকার তাঁকে ‘ড্যাম কমান্ডার অব দ্য মোস্ট এক্সসিলেন্ট অর্ডার অব দ্য ব্রিটিশ এম্পায়ার’ সম্মাননা জানিয়েছে। মনে পড়ছে? থাক, কষ্ট করার দরকার নেই। আমিই বলে দিচ্ছি অ্যালেনের ঠিকুজি।


২০০৫ সালে পাল তোলা নৌযানে দ্রুততম সময়ে নৌপথে বিশ্বভ্রমণের রেকর্ড গড়েছিলেন অ্যালেন ম্যাকআর্থার। তখন বিশ্বজুড়ে হইচহই পড়ে গিয়েছিল। একটা নারীর পক্ষে এতটা দুঃসাহসিক হওয়া কীভাবে সম্ভব?

অ্যালেন হেঁসে বলেন, ‘ছোটবেলা্ থেকেই সমুদ্র আমাকে টানে। থিয়ে ম্যাকআর্থার নামে আমার এক আত্মীয় আছেন, তার নৌযান দিয়েই শুরু হয় আমার নৌভ্রমণ। এরপর নেশাটা এমনভাবে চেপে ধরে যে নিজের একটা নৌকা না হলেই নয়! তখন, সেই স্কুলে পড়াকালীন সময়েই, নিজের তিন বছরের খাবারের টাকা বাঁচিয়ে প্রথম একটা নৌকা কিনি আমি।’

বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে অ্যালেন অবশ্য স্বীকার করেছেন, নিতান্ত শখের বসে তিনি সমুদ্রে ভেসে বেড়াতেন। সমুদ্র তাঁর খুব ভালো লাগে। সেই ভালো লাগার কারণেই মাত্র ২৪ বছর বয়সেই প্রথম এক বিশ্ব প্রতিযোগিতায় অংশ নেন তিনি। বিশ্ব ভ্রমণের সেই প্রতিযোগিতা ৯৪ দিনে শেষ করে সফলভাবে ফিরে আসেন অ্যালেন। পরবর্তী সময়ে যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের একাধিক দীর্ঘ প্রতিযোগিতায় অংশ নেন তিনি।

ছোটবেলা থেকেই সমুদ্র আমাকে টানে। থিয়ে ম্যাকআর্থার নামে আমার এক আত্মীয় আছেন, তার নৌযান দিয়েই শুরু হয় আমার নৌভ্রমণ। এরপর নেশাটা এমনভাবে চেপে ধরে যে নিজের একটা নৌকা না হলেই নয়! তখন, সেই স্কুলে পড়াকালীন সময়েই, নিজের তিন বছরের খাবারের টাকা বাঁচিয়ে প্রথম একটা নৌকা কিনি আমি।’

অ্যালেনের ব্যাক্তিগত ওয়েবসাইট জানাচ্ছে, এককভাবে ৭১ দিন ১৪ ঘণ্টা ১৮ মিনিট ৩৩ সেকেন্ডে ২৬ হাজার মাইল ভ্রমণের রেকর্ড আছে এই নারীর দখলে। তাঁর এসব সফলতার স্বীকৃতি হিসেবে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট নিকোলাস সারকোজির কাছ থেকে পেয়েছেন লিজিওন ডি’অনার সম্মাননা।

অ্যালেনের ড্রয়িং রুমের আলমারিতে থরে থরে সাজানো রয়েছে এরকম আরও অনেক সম্মাননা স্মারক। সেসবের দিকে তাকিয়ে ইদানিং অ্যালেন একটা ছোট্ট দীর্ঘশ্বাস গোপন করেন। মেঘে মেঘে বেলা তো কম হলো না! সেই ১৯৭৬ সালের ৮ জুলাই ইংল্যান্ডের ডার্বিশায়ারে জন্মছিলেন তিনি। বাবা-মা দুজনেই ছিলেন শিক্ষক। ছিলেন নারী স্বাধীনতায় বিশ্বাসী আর যথেষ্ঠ উদারমনা। অ্যালেনের এসব দুঃসাহসিক কাজে সদা উৎসাহ দিয়ে গেছেন তাঁরা। অ্যালেনের আরও দুটি ভাই আছে। ভাইদের সাথে সমান অধিকার নিয়ে বেড়ে উঠেছেন তিনি।

বড় হয়ে তিনি পেশা হিসেবে বেছে নেন স্বাধীন ব্যবসা। একটি নৌকা বিক্রির মধ্য দিয়েই শুরু হয় তাঁর এই পেশাজীবন। ব্যবসায় বিফল হননি অ্যালেন ম্যাকআর্থার।

বর্তমানে অবশ্য নিজের পেশা থেকে অবসর নিয়ে গড়ে তুলেছেন অ্যালেন ম্যাকআর্থার ক্যানসার ট্রাস্ট এবং অ্যালেন ম্যাকআর্থার ফাউন্ডেশন। এ ফাউন্ডেশনের মূল দায়িত্ব বিভিন্ন ধরনের সেবামূলক কাজ করা।

এছাড়া তাঁর অবসর কাটে আত্মজীবনী লিখে। ২০০২ সালে নিজের প্রথম আত্মজীবনী ‘টেকিং অন দ্য ওয়ার্ল্ড’ প্রকাশিত হয়। এরপর ২০১০ সালে দ্বিতীয় আত্মজীবনী ‘ফুল সার্কেল’ প্রকাশ করেন তিনি। অবসর জীবনযাপন করলেও সমুদ্র আর পানির টান এখনো টানে তাঁকে।

তথ্যসূত্র: বিবিসি, উইকিপিডিয়া ও অ্যালেন ম্যাকআর্থার ফাউন্ডেশন
প্রথম প্রকাশ: প্রমিনেন্ট বাংলা

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত