ওসমানী উদ্যান

প্রকাশ : ০৮ সেপ্টেম্বর ২০১৬, ১৫:৩৬

জাগরণীয়া ডেস্ক

ঢাকার ঐতিহ্যবাহী উদ্যানগুলোর একটি ওসমানী উদ্যান।এটি প্রায় ২৩.৩৭ একর জুড়ে বিস্তৃত।

অবস্থান

ঢাকার গুলিস্তানে ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের (নগর ভবন) বিপরীত পাশে এবং সচিবালয়ের পিছনে এটি অবস্থিত। উদ্যানটির সাথেই রয়েছে গোলাপ শাহ মসজিদ, এর পাশেই রয়েছে গোলাপ শাহ এর মাজার, রমনা ভবন, জিপিও, বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ এর প্রধান অফিস এবং ঢাকা ষ্টেডিয়াম।

খোলা বন্ধের সময়সূচী

প্রাতঃভ্রমণকারীদের তথা দর্শণার্থীদের জন্য এটি খোলা থাকে প্রতিদিন। গ্রীস্মকালে এটি সকাল ৫.০০ টা থেকে রাত ৯.০০ টা পর্যন্ত এবং শীতকালে সকাল ৬.০০ টা থেকে রাত ৮.০০ টা পর্যন্ত। সাপ্তাহিক বন্ধ নেই।

সদর দরজা

উদ্যানটিতে প্রবেশ এবং বাহির হওয়ার জন্য মোট ৩টি সদর দরজা রয়েছে। মূল দরজাটি সিটি কর্পোরেশনের ঠিক বিপরিত পাশে, দ্বিতীয় দরজাটি রয়েছে গোলাপ শাহ মসজিদের পাশ ঘেষে এবং তৃতীয় দরজাটি ওসমানি অডিটোরিয়ামের পাশ ঘেষে।

মীর জুমলার কামান

সম্রাট আওরঙ্গজেবের প্রধান সেনাপতি মীর জুমলার কামানটি বর্তমানে ওসমানী উদ্যানের শোভা বর্ধন করে রয়েছে। কামানটি মীর জুমলা আসাম যুদ্ধে ব্যবহার করেছিলেন।

উদ্যানটির নামকরণ

১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের কমান্ডার লেঃ জেঃ এম এ জি ওসমানির নামকরনে ওসমানি উদ্যান নামকরন করা হয় এবং তারই স্মরনে উদ্যানটির পাশে ওসমানি অডিটোরিয়াম নির্মাণ করা হয়।

তত্ত্বাবধান এবং নিরাপত্ত্বা ব্যবস্থা

ঢাকা সিটি করপোরেশন (নগর ভবন) উদ্যানটি তত্ত্বাবধানসহ যাবতীয় সংস্কার ও সার্বিক নিরাপত্ত্বা নিশ্চিত করে থাকে। উদ্যানটির ভেতরে রয়েছে গার্ড রুম। পুলিশ সদস্যরা সর্ব সময় সক্রিয় থাকেন। এছাড়া মাঝে মাঝে সতর্কীকরন বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয়। কাজেই এখানে কোন ধরনের উচ্ছৃংখল বা অসামাজিক অপরাধ ঘটে না বললেই চলে।

লেক বা জলাধার

মোট ৫.৩৪ একর জুড়ে বিস্তৃত লেকদুটি উদ্যানটির অন্যতম প্রধান আকর্ষণ। লেকটিতে পর্যাপ্ত পরিমান পানি প্রবাহমান থাকায় এতে ছোট বড় প্রচুর পরিমানে মাছ পাওয়া যায়।

ওয়াক ওয়ে

প্রাতঃভ্রমণকারীদের জন্য রয়েছে ৩.৭৪ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য বিশিষ্ট ওয়াক ওয়ে।

মহিলা এ্যারেনা

উদ্যানটির ভিতরে পশ্চিম দিকে মহিলা প্রাতঃভ্রমনকারীদের জন্য তৈরী করা হয়েছে ২৫ বর্গকিলোমিটার আয়তন বিশিষ্ট মহিলা অঙ্গন। এর চারপাশ গাছ দিয়ে ঘেরা। এখানে মহিলাগন যোগব্যায়াম সহ নান রকমের শারিরীক কসরত করতে পারেন।

শিশু এ্যারেনা

শিশু এ্যারেনায় রয়েছে শিশুদের জন্য অযান্ত্রিক খেলাধুলার ব্যবস্থা যেমন দোলনা, স্লিপার ইত্যাদি। শিশু এ্যারেনাটি বিভিন্ন রকমের গাছ দিয়ে সাজানো হয়েছে।

ফুলের বাগান

উদ্যানটির প্রবেশ পথের সামনেই রয়েছে দেশি বিদেশি নান জাতের ফুল গাছের সমাহরোহ। এছাড়া রয়েছে নানা জাতের পাতা বাহারের গাছ।

স্বাধীনতা স্মৃতি স্তম্ভ

ওসমানী উদ্যানের মূল ফটক পেরিয়ে চোখে পড়ে স্বাধীনতা যুদ্ধের স্মৃতি বিজরিত স্বাধীনতা স্মৃতি স্তম্ভ।

প্রাঙ্গন বিভক্তিকরন

মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের স্মৃতিকে ধরে রাখতে ওসমানী উদ্যানকে মোট ১১টি সেক্টরে ভাগ করা হয়েছে। উদ্যানের মানচিত্রে সেক্টরগুলোর অবস্থান লক্ষ্য করা যায়।

বৃক্ষের সমাহরোহ

এখানে সাধারনত নানা জাতের এবং দূর্লভ প্রজাতির বৃক্ষ চোখে পড়ে। তন্মধ্যে কড়ই, আমলকি, তেতুল, বট, অর্জুন, মেহগনি অন্যতম। এছাড়াও রয়েছে বড়ই গাছ, আম গাছ, কাঁঠাল গাছ, কলা গাছ এবং নিম গাছ। রয়েছে বিভিন্ন ধরণের ফুলের গাছ, পাতা বাহারি গাছ এবং লতা গুল্ম।

বালু দ্বীপ

ওসমানী উদ্যানের লেকের পাশেই রয়েছে কৃত্রিমভাবে তৈরি করা ২টি বালু দ্বীপ।

মসজিদ

ওসমানী উদ্যানের পাশ ঘেষে রয়েছে হাফেজী হুজুর মসজিদ এবং গোলাপ শাহ মসজিদ।

ফ্লাড লাইট

সান্ধ্যকালীন ভ্রমণকারীদের জন্য রয়েছে উদ্যানের বিভিন্ন প্রাঙ্গনে ফ্লাড লাইট ব্যবস্থা।

টয়লেট ব্যবস্থা

ওসমানী উদ্যানে প্রাত:ভ্রমনকারী এবং দর্শণার্থিদের সুবিধার্থে রয়েছে পাবলিক টয়লেট।

মুক্তিযোদ্ধা ক্লাব

ওসমানী উদ্যানের পূর্বদিকে রয়েছে মুক্তিযোদ্ধা ক্লাব। এটি ১৯৭২ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। মুক্তিযোদ্ধা ক্লাবের পাশেই রয়েছে একটি পানির পাম্প।

গাড়ি পার্কিং ব্যবস্থা

উদ্যানের বাইরে রাস্তার কিছু অংশে দর্শনার্থী বা প্রাত:ভ্রমনকারি নিজ দায়িত্বে গাড়ি পার্ক করতে পারেন।

বেশি ভিড় হয়

সরকারী ছুটির দিন ছাড়াও বিশেষ দিনগুলোতে উদ্যানে লোক সমাগম বেশি হয়।

দিক নির্দেশক ম্যাপ

উদ্যানটির প্রবেশ মূখেই রয়েছে দর্শনার্থীদের জন্য দিক নির্দেশক ম্যাপ। এতে ওসমানী উদ্যান, লেক, স্থাপনা এবং অন্যান্য ওয়াকওয়ে সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা পাওয়া যায়।

সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি

গাছের পাতা ও ফুল ছিড়বেন না।
গাছের ডালপালা ভাঙ্গা নিষেধ।
ময়লা আবর্জনা যত্রতত্র স্থানে না ফেলে নির্দিষ্ট স্থানে ফেলুন।
ওয়াকওয়ে দিয়ে হাটুন।
ঘাস মাড়াবেন না।
পার্কের অভ্যন্তরে মটর সাইকেল, বাই সাইকেল বা অন্যান্য যানবাহন চালানো নিষেধ।
উদ্যানে ভবঘুরে, বাস্তুহারা এবং ভিক্ষুক প্রবেশ নিষেধ।
পার্কের বেঞ্চে এবং ওয়াকওয়েতে শয়ন নিষেধ।
যত্রতত্র স্থানে টয়লেট করা নিষেধ।
রাত ৯.০০ টা থেকে ভোর ৫.০০ টা পর্যন্ত পার্কে প্রবেশ নিষেধ।
এখানে ধুমপান করা নিষেধ। আইনত দন্ডনীয় অপরাধ।
লেকে মাছ ধরা এবং গোসল করা নিষেধ।
অসামাজিক কার্যকলাপ নিষিদ্ধ।
উল্লেখিত সতর্কবাণী অবহেলায় আর্থিক জরিমানা এবং প্রয়োজনে কর্তৃপক্ষ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত