ঘুরে আসুন পাখির অভয়ারণ্য বাইক্কা বিলে

প্রকাশ : ৩০ ডিসেম্বর ২০১৭, ১৩:৩৬

জাগরণীয়া ডেস্ক

এই শীতে আপনি বা পরিবার পরিজন নিয়ে ঘুরে আসতে পারেন সিলেটের মনমুগ্ধকর বেশ কিছু জায়গা। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে সিলেটে যোগাযোগ ব্যবস্থাটাও অনেক ভাল। বাস, ট্রেন এমনকি বিমানেও যেতে পারবেন সিলেটে। এ জেলায় যেসব জায়গা সবার পরিচিত তা দেখার পাশাপশি আপনি নতুন কিছু জায়গায়ও ঘুরে আসতে পারবেন। এতে সারা বছরের ক্লান্তি কিছুটা হলেও দূর হবে।

এই অঞ্চলের অন্যতম মৎস্য অভয়ারণ্য মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলের হাইল হাওরের বাইক্কা বিল। শীতকালে হাজার হাজার পরিযায়ী পাখিদের কলকাকলিতে মুখর থাকে এই বিলের চারপাশ। হাইল হাওড়ের পূর্বদিকের প্রায় ১০০ হেক্টর আয়তনের এই জলাভূমি ১ জুলাই ২০০৩ তারিখে মৎস্য সম্পদের একটি অভয়াশ্রম হিসেবে সংরক্ষণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

বাইক্কা বিল
৪২৫ দশমিক ১৫ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এই বিলের সুনাম সর্বত্র। কিন্তু পানিপূর্ণ বাইক্কা বিলের সঙ্গে আমরা ক’জনইবা পরিচিত। থৈ থৈ করা পানির বাইক্কা বিলের সৌন্দর্যের সঙ্গে অনেকেই পরিচিত নয়। বাইক্কা বিলের মূল আকর্ষণ পরিযায়ী আর স্থানীয় পাখি। বিলের শুরুতেই দেখা যাবে দলে দলে পার্পল সোয়াম্প হেন বা কালেম। পাশেই হয়তো দেখবেন গ্রেট কর্মোরন্ট বা ছোট পানকৌড়ি, লিটল কর্মোরাণ্ট বা বড় পানকৌড়ির দল। শুধু পাখিই নয়, হাওড়ে মাছের রাজ্যেও রয়েছে অসংখ্য প্রজাতির মাছ। আইড়, মেনি, কই, ফলি, পাবদা, বোয়াল, গজারসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছেরও অভয়াশ্রম। এছাড়া এই বিলের দাপুটে পাখিরা হলো শঙ্খচিল, ভুবন চিল, পালসী কুড়া, ঈগল, গুটি ঈগল ইত্যাদি। শীতের এই সময়ে দেখা মিলবে অতিথি পাখি সরালি, মরচেরং ভূতি হাঁস, গিরিয়া হাঁস আর ল্যাঞ্জা হাঁস। এছাড়া বিলের মধ্যে অপেক্ষাকৃত দূরত্বে দেখা মিলবে মেটোমাথা টিটি, কালাপাখা ঠেঙ্গী গেওয়ালা বাটান ইত্যাদি। 

বাইক্কা বিল ছাড়াও শ্রীমঙ্গলে দেখা পাবেন সবুজের নিসর্গে ভরা ৪৪টি চা বাগান, জীববৈচিত্র্যসমৃদ্ধ বনাঞ্চল লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান, নৃ-তাত্ত্বিক জনগোষ্ঠি খাসিয়া, ত্রিপুরা, সাঁওতালদের বৈচিত্র্যময় জীবনচিত্র, রামনগরের প্রসিদ্ধ মণিপুরী তাঁতশিল্প ও কাপড়, বৃটিশ চা ব্যবস্থাপকদের কবরস্থান ডিনস্টন সিমেট্রি, ব্যক্তিগত উদ্যোগে গড়া বন্যপ্রাণি সেবা ফাউন্ডেশন, ৫০০ বছরের পুরনো নির্মাই শিববাড়ি, লেবু, পান ও আনারস বাগানের প্রাকৃতিক রূপ প্রভৃতি।

কখন ভ্রমণে যাবেন
নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি মাসের মাঝামাঝি সময় বাইক্কা বিল ভ্রমণের জন্য সেরা। এসময় এখানে প্রচুর সংখ্যায় পরিযায়ী পাখির কলকাকলিতে চারদিক মুখর থাকে জলজ উদ্ভিদ, মাছপ্রেমীদের জন্য এটা সেরা মৌসুম। 

যেভাবে যাবেন বাইক্কা বিল
শ্রীমঙ্গলের সঙ্গে সারা দেশের রেল ও সড়কপথে রয়েছে উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা। ঢাকা থেকে ৩টি, চট্টগ্রাম থেকে ২টি আন্ত:নগর ট্রেন প্রতিদিন যায় শ্রীমঙ্গল। ট্রেনে ভ্রমণ করেই শ্রীমঙ্গল যেতে পারেন। ঢাকার সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল থেকে হানিফ বা শ্যামলী পরিবহনের বাসে করেও যেতে পারবেন। এছাড়া মহাখালি থেকে এনা পরিবহন উত্তরা হয়ে শ্রীমঙ্গল যায়। শ্রীমঙ্গল শহরে পৌঁছে অটোরিক্সা, সিএনজিচালিত অটোরিক্সা, জীপ, প্রাইভেটকার কিংবা মাইক্রো ভাড়া করে আপনি দর্শনীয় স্থানগুলোতে যেতে পারবেন।

থাকার ব্যবস্থা
পর্যটকদের রাত যাপনের জন্য এখানে বেশ কয়েকটি হোটেল, রিসোর্ট, রেস্ট হাউস ও কটেজ রয়েছে। নির্জন পরিবেশে পাহাড়ি টিলার ওপর নির্মিত টি-রিসোর্ট ও পাঁচ তারকা মানের গ্র্যাণ্ড সুলতান টি-রিসোর্ট অ্যান্ড গলফের নজরকাড়া সৌন্দর্য পর্যটকদের কাছে টানবে অনায়াসেই।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত