‘আমাদের আসার পথটা সহজ ছিল না’

প্রকাশ : ০৯ মার্চ ২০১৭, ১৭:৪১

জাগরণীয়া ডেস্ক

পরিবার থেকে শুরু করে সামাজিক নানা বাধা ও রাষ্ট্রীয় সীমাবদ্ধতা অতিক্রম করে দেশ ও দেশের বাইরে সুনাম অর্জন করা বাংলাদেশের নারী অ্যাথলেটদের এই উঠে আসার গল্পটা কেমন ছিল? নিজেদের সাফল্যের পিছনে থাকা নানা প্রতিবন্ধকতার অতিক্রমের গল্প নিয়ে বুধবার রাজধানীর বনানী বার্গার কিং আউটলেটে আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে হাজির হন ক্রীড়া অঙ্গনের নারী তারকারা।

অনুষ্ঠানে নিজেদের বাধা পেরিয়ে এতদূর আসার গল্প শুনান সাঁতারু মাহফুজা খাতুন শিলা, দৌড়বিদ শিরিন আকতার, টেনিস খেলোয়াড় আফরানা ইসলাম প্রীতি ও তীরন্দাজ হিরা মনি।

যশোরের নোয়াপাড়ার এক প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে উঠে এসে আন্তর্জাতিক সাঁতারের অঙ্গনে বাংলাদেশকে প্রতিনিধিত্ব করছেন মাহফুজা খাতুন শিলা।

গত সাউথ এশিয়ান গেমসে ৫০ ও ১০০ মিটার সাঁতারে স্বর্ণপদক অর্জনকারী শিলা বলেন, “আমাদের এখানে আসার পথটা সহজ ছিল না, জীবন যুদ্ধে লিপ্ত থেকেও খেলাধুলা চালিয়ে গিয়েছি।”

তিনি বলেন, “সাঁতার যে একটা খেলা হতে পারে এবং এই খেলা মেয়েরা খেলতে পারে, তা আমার অঞ্চলের মানুষ ভাবতেও পারত না।”

পারিপার্শ্বিক প্রতিবন্ধকতা ও মানুষের সংকীর্ণ মানসিকতার কারণে দেশের নারীরা আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ছে বলে মনে করেন মাহফুজা।

এদিকে টানা চারবার দেশের দ্রুততম মানবীর খেতাব জেতা সাতক্ষীরার দাহাকুলা গ্রামের শিরিন আকতার জানান, জন্মের পর পরিবারে অনাকাঙ্ক্ষিত ছিলেন তিনি।

শিরিন বলেন, “বাবা মা পুত্র সন্তান চেয়েছিল, কিন্তু যখন দেখে মেয়ে হয়েছে, তাও আবার শ্যামলা বর্ণের, হতাশ হয়েছিলেন।”

শিরিন আক্তারের ট্যালেন্ট হান্টের মধ্য দিয়ে ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বিকেএসপিতে পড়ার সুযোগ মিললেও বাবা ভর্তি হতে দিতে চায়নি।

ট্যালেন্ট হান্টের মাধ্যমে বিকেএসপিতে পড়ার সুযোগ মিললেও টানা চারবার দেশের দ্রুততম মানবীর খেতাব জেতা শিরিন আক্তারকে ভর্তি হতে দিতে চাননি তার বাবা। 

নারীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “বাধাকে বাধা মনে করে থেমে গেলে নিজেদের জায়গা আমরা করে নিতে পারব না।”

অন্যদিকে আইএসএসএফ ইন্টারন্যাশনাল সলিডারিটি আর্চারি চ্যাম্পিয়নশিপে মহিলা এককে স্বর্ণপদক অর্জনকারী হিরা মনি জানান বাবার অবাধ্য হয়েই বিকেএসপিতে ভর্তি হওয়ার কথা।

অনূর্ধ্ব ১৪ টেনিস চ্যাম্পিয়নে এক সময়ের দেশ সেরা বাগেরহাট সদরের মেয়ে প্রীতিও জানান এই পর্যন্ত আসার আগে পরিবারের অসহযোগিতার কথা।

প্রীতি বলেন, “বাবা-মা খেলাধুলা করার ব্যাপারে আগ্রহী ছিলেন না, বলেছিলেন, ‘এর ফল ভাল হবে না’। মেয়ে হয়ে আমি কতটুকুই বা করতে পারব এমন সন্দেহ করতেন তারা।”

অনুষ্ঠান শেষে ক্রীড়া ক্ষেত্রে ‘অভাবনীয় অবদানের’ স্বীকৃতিস্বরূপ এই চার নারী খেলোয়াড়কে সম্মাননা ক্রেস্ট প্রদান করেন বাংলাট্রেক লিমিটেডের গ্রুপ হেড অব অ্যাডমিনিস্ট্রেশন মনোয়ার হোসেন ও বাংলাট্রেক কমিউনিকেশন লিমিটেডের হেড অব কর্পোরেট অ্যাফেয়ার্স রকিব মাহমুদ।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত