কুয়াকাটায় দ্বিতীয় সাবমেরিন ল্যান্ডিং স্টেশনের উদ্বোধন

প্রকাশ : ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৭, ১৬:১০

জাগরণীয়া ডেস্ক

কুয়াকাটায় দ্বিতীয় সাবমেরিন ক্যাবল ল্যান্ডিং স্টেশন ও বাংলাদেশে ‘সি-মি-ইউ-৫’ কনসোর্টিয়াম সাবমেরিন ক্যাবল সিস্টেমের উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ১০ সেপ্টেম্বর (রবিবার) সকালে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সাবমেরিন ক্যাবলের উদ্বোধন করেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, দুবার বিনা পয়সায় সাবমেরিন ক্যাবলে সংযুক্ত হওয়ার সুযোগ পেয়েও অজ্ঞতার কারণে বিএনপি সে সুযোগ হাতছাড়া করে দেশকে পিছিয়ে দিয়েছিল। রাষ্ট্র যারা পরিচালনা করে তাদের দূরদৃষ্টি না থাকলে দেশ যে পিছিয়ে যায়, তা এই মুহূর্তে জনগণ বুঝতে পারছে।

শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নে কাজ করে যাচ্ছে, যার সুফল পাচ্ছে দেশের মানুষ।

‘আমাদের দুর্ভাগ্য যে, তখন বিএনপি ক্ষমতায়। তখনকার প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া বলল যে, এটা নাকি সংযুক্ত করা যাবে না। কারণ এটা সংযুক্ত করলে বাংলাদেশের সকল তথ্য প্রকাশ হয়ে যাবে। কাজেই এটা করা ঠিক হবে না, করা যাবে না’, বলেন প্রধানমন্ত্রী।

কুয়াকাটায় অবস্থিত এই দ্বিতীয় সাবমেরিন ক্যাবলে সংযুক্ত হওয়ায় আরও ১ হাজার ৫০০ জিবিপিএস ব্যান্ডউইডথ পাচ্ছে বাংলাদেশ। আর ট্রান্সমিশন চার্জ কম পড়ায় দক্ষিণাঞ্চলের বরিশাল, পটুয়াখালী, খুলনা ও ফরিদপুরের মানুষ কম খরচে ইন্টারনেট সেবা পাবেন। 
 
প্রথম সাবমেরিন ক্যাবলের তুলনায় প্রায় আট গুণ বেশি ক্ষমতাসম্পন্ন নতুন এ স্টেশনটি চালু হওয়ায় কম টাকায় নিরবচ্ছিন্ন ও দ্রুতগতির ইন্টারনেট পাওয়া যাবে। একই সঙ্গে  বিদেশে ব্যান্ডউইডথ রফতানিও করতে পারবে বাংলাদেশ। নতুন এ সাবমেরিন ক্যাবলের মেয়াদকাল হবে ২০ থেকে ২৫ বছর।
 
পটুয়াখালীর কুয়াকাটায় মাইটভাঙ্গা গ্রামে ২০১৩ সালের শেষের দিকে ১০ একর জমির ওপর ৬৬০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত হয় বাংলাদেশের দ্বিতীয় সাবমেরিন ক্যাবল ল্যান্ডিং স্টেশনটি। প্রকল্পটির কাজ শেষ করার পর ২০১৭ সালের মার্চ মাস থেকে ইন্টারনেট ব্যবহার পরীক্ষামূলক শুরু হয়। 
 
সাগরের নিচ দিয়ে ইউরোপ থেকে সিঙ্গাপুর হয়ে ২৫ হাজার কিলোমিটার দীর্ঘ ক্যাবল লাইন বঙ্গোপসাগরের উপকূলে কুয়াকাটার স্টেশন থেকে মাত্র সাড়ে ৯ কিলোমিটার দূরত্বে পৌঁছে। চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে ল্যান্ডিং স্টেশনের সঙ্গে তা সংযোগ স্থাপন করা হয়।
 
কুয়াকাটা সৈকত থেকে একটি ব্রাঞ্চের মাধ্যমে ল্যান্ডিং স্টেশন হয়ে মূল ক্যাবলে বাংলাদেশ যুক্ত হয়েছে। মিয়ানমারের সঙ্গেও ব্রাঞ্চ শেয়ারিং হবে। এর বাইরে সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ড, শ্রীলংকা, ভারত, পাকিস্তান, সৌদি আরব, কাতার, ওমান, জিবুতি (উত্তর-পূর্ব আফ্রিকার একটি প্রজাতান্ত্রিক রাষ্ট্র), মিশর, তুরস্ক, ইতালি, ফ্রান্সসহ বেশ কিছু দেশ এ ক্যাবলে যুক্ত হয়েছে। 
 
এ জন্য সাগরের নিচ দিয়ে ফ্রান্স থেকে সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, শ্রীলংকা ও মিয়ানমার হয়ে বাংলাদেশ পর্যন্ত ২৫ হাজার কিলোমিটার দীর্ঘ ক্যাবল স্থাপন করা হয়েছে।
 
জাপানের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এনইসি বাংলাদেশের সমুদ্রসীমায় গত দুই বছর ধরে কাজ করে। ইউরোপ থেকে সিঙ্গাপুর হয়ে সমুদ্র তটে আসা সঞ্চালন লাইন বিচ ম্যানহোল, হ্যানহোল, জয়েন্ট ম্যানহোল হয়ে কুয়াকাটার গোড়া আমখোলাপাড়ায় দ্বিতীয় ল্যান্ডিং স্টেশনে সংযুক্ত হয়েছে।
 
প্রায় ৬৬০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত প্রকল্পটিতে বাংলাদেশ সরকার ১৬৬ কোটি টাকা, বিএসসিসিএল ১৪২ কোটি এবং ইসলামী উন্নয়ন ব্যাংক (আইডিবি) প্রকল্পের বাকি প্রায় ৩৫২ কোটি টাকার ঋণ সহায়তা দিয়েছে। এই টাকা ব্যয়ে ১০ একর জমির ওপর ল্যান্ডিং স্টেশনের মূল ভবনসহ ফাংশনাল বিল্ডিংয়ের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। বৈদ্যুতিক উপ-কেন্দ্র, জেনারেটর, ট্রান্সফরমার, অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থাসহ সাবমেরিন ক্যাবলের যন্ত্রপাতি স্থাপন ও ডেটা সেন্টারের কাজ শেষ হয়েছে।
 
১৯ দেশের টেলিযোগাযোগ সংস্থার সম্মেলনে গঠিত সাউথইস্ট এশিয়া-মিডলইস্ট-ওয়েস্টার্ন ইউরোপ (সি-মি-ইউ-৫) আন্তর্জাতিক কনসোর্টিয়ামের অধীনে এই সাবমেরিন ক্যাবলটিতে ২০ হাজার কিলোমিটারব্যাপী অত্যাধুনিক ১০০ জি আলোক তরঙ্গের ডিডব্লিউএম প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে। জাপানের এনইসি এবং ফ্রান্সের অ্যালকাটেল লুসেন্ট যৌথভাবে সাবমেরিন ক্যাবল প্রতিস্থাপনের কাজ করেছে।
 
এর আগে ২০০৫ সালে বাংলাদেশ প্রথমবারের মতো সাবমেরিন ক্যাবল ‘সি-মি-ইউ-৪’-এ যুক্ত হয়, যার মাধ্যমে প্রায় ২০০ জিবিপিএস ব্যান্ডউইডথ পাওয়ার সক্ষমতা রয়েছে। সি-মি-ইউ-৪ ছাড়াও বাংলাদেশের সঙ্গে ছয়টি বিকল্প সাবমেরিন ক্যাবল (আইটিসি বা ইন্টারন্যাশনাল টেরিস্ট্রিয়াল ক্যাবল) সংযুক্ত রয়েছে।
 
বর্তমানে বাংলাদেশে ইন্টারনেট ব্যবহারের পরিমাণ ৪০০ জিবিপিএসের বেশি। এর মধ্যে ১২০ জিবিপিএস রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ সাবমেরিন ক্যাবল কোম্পানি লিমিটেডের (বিএসসিসিএল) মাধ্যমে আসে। বাকি ২৮০ জিবিপিএস আইটিসির ব্যান্ডউইডথ ভারত থেকে আমদানি করা হয়।
 
দ্বিতীয় সাবমেরিন ক্যাবল স্থাপনে ২০১১ সালের ডিসেম্বরে কনসোর্টিয়ামের সঙ্গে চুক্তি করে বাংলাদেশ। দ্বিতীয় সাবমেরিন ক্যাবল প্রকল্পের কাজ শেষ করার জন্য ২০১৬ সালের জুন পর্যন্ত সময় নির্ধারণ করা হয়েছিল। এরই পরিপ্রেক্ষিতে চলতি বছরের ৩১ জুলাই এই ক্যাবলের উদ্বোধনের তারিখ দেওয়া হয়েছিল। 
 
তার আগে মার্চের দ্বিতীয় সপ্তাহে ক্যাবলটি উদ্বোধনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম। তবে রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানি বিটিসিএল সঞ্চালন লাইনের কাজ ঠিকমতো শেষ করতে না পারায় এতদিনের এই বিলম্ব।  
 
চলতি বছরের ২১  ফেব্রুয়ারি তুরস্কের ইস্তাম্বুলে এই কনসোর্টিয়ামের উদ্বোধন হয়। গত ১৬ জানুয়ারি হাওয়াইয়ের হনুলুলুতে ২০ হাজার কিলোমিটার দীর্ঘ এবং ২৪ টেরাবাইট পার সেকেন্ড (টিবিএস) গতির এই সি-মি-উই-৫ প্রকল্পের উদ্বোধন করা হয়। এই কনসোর্টিয়ামে যুক্ত রয়েছে বাংলাদেশসহ ১৭ দেশ এবং এই ক্যাবলের মোট ল্যান্ডিং পয়েন্ট রয়েছে ১৮টি।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত