ধর্মানুভূতি: কানের দূষণ নাকি মনের দূষণ

প্রকাশ : ০২ নভেম্বর ২০১৬, ২১:৩১

দেশের বড় শহরগুলোতে অহরহ বাড়িঘর নির্মিত হচ্ছে, আর নির্মাণাধীন বাড়ির কাজের নানাবিধ শব্দে জনজীবনে কি পরিমাণ যন্ত্রণা নেমে আসে তা কেবল ভুক্তভোগীরাই জানেন। পথেঘাটে কনস্ট্রাকশনের মালামাল ফেলে জনজীবনে যে ভোগান্তির সৃষ্টি হয় সেটার কথা এখানে নাই বা বললাম।

এ মুহূর্তে আমার বাসার খুব কাছেই কনস্ট্রাকশনের কাজ চলছে; সারাদিন অবিরাম অটোমেটিক মেশিনে ইটের খোয়া ভাঙচুরের শব্দ চলছে তো চলছে! কান মাথা ঝালাপালা হয়ে যাচ্ছে সবারই। কিন্ত বেদনার বিষয় হলো কেউ-ই কিছু বলছে না; সম্ভবত এতে কারও শ্রবণ যন্ত্রের ক্ষতিও হচ্ছে না কিংবা অনুভূতিতেও আঘাত লাগছে না!

মজার বিষয় হল হাজার বছর ধরে হিন্দু-মুসলিম একই বা পাশাপাশি পাড়ায় বসবাস করলেও কাঁসা-ঘণ্টায় কারও নামাজে ব্যাঘাত ঘটেনি! আবার পাঁচ ওয়াক্তের আযান কিংবা সেহরির চেঁচা-মেচিতেও কারও শ্রবণানুভূতিতে বা ধর্মানুভূতিতে আঘাত / চোট লাগেনি।

অথচ ইদানীংকালে কাঁসা-ঘন্টার শব্দে নামাজে ব্যাঘাত ঘটছে। কিছুদিন আগে সিলেটে কাঁসার ঘন্টার শব্দকে কেন্দ্র করে যে দুঃখজনক ঘটনা ঘটলো সেটা নিয়ে জাতি হিসেবে অত্যন্ত লজ্জাকর এবং একজন মুসলমান হিসেবে আমি এতে ভীষণভাবে লজ্জিত।

কথা হল সারাদিনের ইটের খোয়া ভাঙার কর্কশ শব্দে যদি কারো কিছু না হয় তাহলে কাঁসার ঘন্টার শব্দে কেন নামাজের ব্যাঘাত হবে? শব্দ তো ভাই শব্দই, এর আবার জাত-পাত কিসের? আমি বিমান বন্দর এলাকায় থাকি বিমানের মুহুর্মুহু তর্জন-গর্জনে বাচ্চারা রীতিমতো ভয় পায়; বিশেষ করে ফাইটার বিমানের শব্দে।

তাহলে প্রতীয়মান হচ্ছে যে আমাদের অনুভূতি কিছু কিছু জায়গায় অতীব সক্রিয় আর কিছু কিছু জায়গায় ব্যাপক ভোঁতা কিংবা নিষ্ক্রিয়!

বর্তমানে আমাদের জীবন থেকে সহবস্থান, সহমর্মিতা, একে অন্যকে সম্মান যেন ফিরোজা রঙের মত ফিকে হয়ে যাচ্ছে। যার প্রমান আমরা বি-বাড়িয়ার ঘটনার মধ্য দিয়ে পেলাম।

একবার ভাবুন তো মানুষ এমন সব অনুভূতি হঠাৎ কোথা থেকে আমদানি করলো? আগে তো এসব বিস্ময়কর অনুভুতির নাম-গন্ধও শুনতে পাইনি। এগুলো কি তবে হাওয়ায় ভর করে এলো?

কয়েক দশক জুড়ে আরববিশ্বে রপ্তানিকৃত শ্রমিক ভাইদের দ্বারা আমদানিকৃত সংস্কৃতির আলোকছটা কি আমরা দেখতে পাচ্ছি? ডিসেন্ট্রালাইজড রেডিয়েশনের মাধ্যমে কি ধাপেধাপে আমরা কেবলামুখী হচ্ছি?

চলমান সময়ে এই প্রবণতা তো হাইব্রিডের মতো বর্ধমান! আগে ভাইয়েরা বাইয়াত নিয়েছেন এখন বোনেরা যাচ্ছেন তাদেরও বাইয়াতী হতে কতোক্ষন? বিশেষ করে সরকারি দল ও বিরোধীদল যখন একযোগে ধর্মের ধ্বজাধারী হয়ে রাজনৈতিক সুবিধাবাদ চরিতার্থ করতে ‘ধর্মের ষাঁড়’ লেলিয়ে দিতে দ্বিধা করছেন না!

অনুভূতি মোদের ভিখারি করেছে
ধর্ম বেনিয়াদের করেছে রাণী ....

লেখক : নৃবিজ্ঞানী, মানবাধিকার কর্মী এবং ভিজুয়্যাল স্টোরিটেলার

মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে jagoroniya.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরণের দায় গ্রহণ করে না।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত