আমরা কেন চুপ আছি?

প্রকাশ : ০৯ আগস্ট ২০১৬, ১৩:৪৪

কিছুদিন আগে বিবিসি একটা মিথ্যা খবর ছাপিয়েছিল যে, সজীব ওয়াজেদ জয় ইসরাইলের গুপ্তচর মেন্দি সাফাদির সাথে গোপন বৈঠক করেছেন। যে বৈঠকে সজীব ওয়াজেদ জয় সাফাদিকে বোঝানোর চেষ্টা করেন, দেশে যে সংখ্যালঘু হিন্দু হত্যা অথবা নির্যাতন হয়েছে সেগুলো ভুল খবর। সেই ভুয়া গুজবের বিরুদ্ধে সরকার কোন ব্যবস্থা নিতে পারেনি, সরকারে হুমকি ধমকি বিবিসি আমলেই নেয়নি। খবরটি এখনো অনলাইনে বিদ্যমান, এমনকি খবরটি রিমুভও করতে পারেনি সরকার। এরপর জয় এক স্ট্যাটাসে বলেছেন যে, খবরটি ভুল ও গুজব এবং এরকম কোন গোপন বৈঠক সে সাফাদির সাথে করেনি।

দুই একদিন ধরে অনলাইনে TodayNews71.com নামের একটা অনলাইন নিউজ পোর্টাল মিথ্যে একটা খবর দিয়ে গুজব ছড়ানোর চেষ্টা করছিল, সজীব ওয়াজেদ জয় বিমান দুর্ঘটনায় মারা গেছেন। সেই গুজবে কান না দেওয়ার জন্য রিপোর্ট করেছিল বাংলা-মেইলের প্রতিবেদক প্রান্ত পলাশ। তার খবরটিতে সে মূলত টুডে-নিউজ একাত্তর ডট কমের পাঠকের কমেন্ট তুলে ধরেছিলেন যেখানে এরকম কমেন্ট ছিল,''এ ধরনের ভুয়া সংবাদ যেসকল তথাকথিত নিউজ পোর্টাল প্রকাশ করে, সরকার কেন সেগুলো বন্ধ করে না?'' এরপর সরকারের পক্ষ থেকে নোটিশ করার পর তারা খবরটি সরায়নি। ধারণা করা হচ্ছিল এই অভিযোগে গ্রেফতার করা হয় প্রান্ত পলাশ সহ আরও তিন সহকর্মীকে, কিন্তু পরবর্তীতে মিথ্যে গুজব ছড়ানোর দায়ে তার বিরুদ্ধে দেওয়া হয়েছে আইসিটি এক্টে মামলা। নিউজ পোর্টাল ছাগু হলে অবশ্যই বন্ধ করবে সরকার, কিন্তু যে খবরের ভিত্তিতে প্রান্তকে ধরে নিয়ে আইসিটি অ্যাক্টে মামলা হয়েছে সেটা ছিল গুজবের প্রতিবাদ, গুজব নয়; যার লক্ষ্য ছিল অন্তত মানুষ যাতে এরকম ভুয়া খবরে বিভ্রান্ত না হয়। এখানে স্পষ্টই বুঝা যায় এটা কোন মহল প্রান্তকে ফাঁসানোর একটা মিথ্যে ফাঁদ পেতেছে। তাছাড়া কোন পত্রিকার কোন প্রতিনিধি নিজের ইচ্ছায় কোন সংবাদ প্রকাশ করতে পারে না। বার্তা-সম্পাদকের ইচ্ছানুযায়ী তাকে সংবাদ প্রকাশ করতে হয়। সম্পাদক এবং বার্তা-সম্পাদকের পারমিশন ছাড়া কোন খবর ছাপানো যায় না। দায় যদি যায় সেটা পত্রিকার সম্পাদক এবং বার্তা সম্পাদকের ঘাড়েই যাওয়ার কথা। প্রান্ত পলাশ পত্রিকাটির তেমন কোন বিশেষ পোস্টে চাকুরীরত নন, সে একজন ক্ষুদ্র প্রতিনিধি মাত্র, যে টাকার বিনিময়ে সময় ও শ্রম দেয় মাত্র। পত্রিকার খবরের যাবতীয় সিদ্ধান্তদাতা সম্পাদক, বার্তাসম্পাদক এবং সহ সম্পাদক।

সাংবাদিকতা একটা কাজ, সাংবাদিকদের কাজ হচ্ছে তথ্য সংগ্রহ করা, প্রতিবেদন লেখা, সম্পাদনা করা। সংবাদ কোন ঘটনা নয় ঘটনার প্রতিবেদন। সংবাদ বা খবরের কোন সুনির্দিষ্ট ধরা বাঁধা সংজ্ঞা নেই। সংবাদ হচ্ছে চলতি ঘটনা, বিষয়বস্তুর বিবরণ, যা হতে হবে হবে অবশ্যই সত্য ঘটনার প্রেক্ষিতে বস্তুনিষ্ঠ, যা পাঠককে উদ্দীপনা দেয় এবং সমাজে প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে। তবে সংবাদ কে অবশ্যই নির্ভুল ও নিরপেক্ষ হতে হবে। সে দিক দিয়ে বিচার করলে প্রান্ত পলাশের প্রকাশিত সংবাদ কোনভাবেই উস্কানিমূলক, মিথ্যে, ভুল বা সমাজের জন্য ক্ষতিকর কোন তথ্য বহন করেনি, যাতে করে তাকে গ্রেফতার করা যায়। তাছাড়া খবর প্রকাশে এমন কোন নিয়ম নেই যে, কোন পত্রিকা TodayNews71.com এর ভুয়া খবরের প্রতিবাদ করে কোন পত্রিকা নিউজ ছাপায়নি বা লেখেনি বলে আমি, আপনি অথবা অন্য কোন পত্রিকা এই বিষয়ে লিখতে পারবে না।

অনলাইনে একটা বিষয় লক্ষ্য করা যাচ্ছে যে প্রান্তর বিষয়ে মুক্তমনা লেখকেরা কেউ কলম তুলছেন না। কারণ হিসেবে আমি বিবেচনা করতে পারি, বাংলামেইল ছাগু পত্রিকা অথবা প্রান্ত হিন্দু পরিবার থেকে আগত মুক্তমনা কবি। দ্বীতিয় কারণটিও আমি ফেলে দিচ্ছি না, কারণ এর আগেও দেখেছি হিন্দু পরিবার থেকে আগত ব্লগাররা পর্যাপ্ত সাপোর্ট পায়নি। বাংলামেইল পত্রিকাটি ছাগু বা অছাগু দেখার আগে আমাদের দেখা উচিত কোন খবরের ভিত্তিতে তাকে আটক করে তার বিরুদ্ধে মামলা দেওয়া হয়েছে? এবং খবরটি কি আদৌ বস্তুনিষ্ঠ সমসাময়িক গুরুত্বপূর্ণ এবং সত্য সংবাদ কিনা? আমরা যারা অনলাইনে লেখালেখি করি তারা প্রান্তের জন্য কিছু করতে না পারি কলমটা তো তুলতে পারি, অন্তত মানবিক দিক বিবেচনা করে আমরা তার জন্য প্রতিবাদটুকু করতে পারি । সেটাও আমরা কেউ করছি না। এই বিষয়ে আমরা সকলে এক আশ্চর্য নীরবতা পালন করছি। এমনকি ৫৭ ধারার বিরুদ্ধে মুখর লেখকেরাও এখানে প্রান্ত যে নির্দোষ সেটা খুঁজে পাচ্ছেন না বা এই বিষয়ে কিছু লিখছেন না।

একটা সময় তসলিমা নাসরিন কে দেশান্তরিত-করণসহ মাথার মূল্য নির্ধারণ করেছিল। আমরা চুপ ছিলাম। এরপর পর্যায়ক্রমে লেখক, ব্লগার, প্রকাশক, সমকামী এক্টিভিস্ট, মুয়াজ্জিন, মোল্লা, পুরোহিত, সাধু, ভিক্ষু, সংখ্যালঘু হিন্দু সহ বিদেশী নাগরিক কেউ বাদ যায়নি। এইবার কবি এবং সাংবাদিকের উপর আঘাত এসেছে। ছাগু সাইটসহ ভুয়া নিউজ পোর্টাল বন্ধের কার্যক্রম নিঃসন্দেহে ভাল কার্যক্রম আমি সাধুবাদ জানাই। কিন্তু সেকারণে কোন নির্দোষ ব্যক্তি বলীর পাঠা হচ্ছেন, আর আমরা সকলে বিষয়টা দেখেও নিশ্চুপ আছি। যতক্ষণ পর্যন্ত বড় কোন কবি বা সাংবাদিকের ( অথবা আমার আপনার নিকটাত্মীয় ) বিরুদ্ধে আইসিটি অ্যাক্টে মামলা না করা হবে বা তারা কেউ ক্রসফায়ারে খুন না হবেন, সে পর্যন্ত আশা করি আমরা সবাই চুপচাপ নীরবতাই পালন করব। আমাদের এই নীরবতাই আগামীতে সরকারে স্বৈরাচারী অপরাধের দ্বার উন্মুক্ত করে দিবে। যা জাতির জন্য খুব কল্যাণ বয়ে আনবে না বলেই আমার ধারণা।

লেখক: প্রবাসী লেখক

মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে jagoroniya.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরণের দায় গ্রহণ করে না।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত