গাছগুলি না কেটে উন্নয়ন করা যায় না?

প্রকাশ : ১৪ জানুয়ারি ২০১৮, ১৪:২০

আপনি জানেন কি- দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে হিটলারের নাৎসি বাহিনী ফ্রান্সের প্যারিস শহরের ওপর কোনো বোমা হামলা করেনি কেন? তবুও প্যারিসবাসী ভয়ে সমস্ত প্যারিসের উঁচু দালানকোঠা ধূসর রঙ করে দিয়েছিল, যেন বিমান থেকে হামলা করার সময় গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলি আলাদা না করা যায়, ল্যুভর মিউজিয়াম চেনা না যায়। এতে করে ওখানে হামলার আশঙ্কা কমে যায়।

ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক সম্প্রতি দুই পর্বের যে ধারাবাহিক ডকুমেন্টারি বানিয়েছে ‘নাজি আর্ট থেফট’ নামের তাতে দেখা যাচ্ছে হিটলারের মতন শয়তান, ফ্যাসিবাদী, রক্তলোলুপ লোকটিও আর্ট কালচারের প্রতি মারাত্মক যত্নবান ছিল! শত শত লোকের জীবন নিয়ে নিতে যার এতোটুকুন মায়া হয়নি তারও পিটার পল রুবেন্সের একটা চিত্রকর্ম, ভ্যানগঘের একটা মাস্টারপিসের প্রতি সীমাহীন মায়া ছিল!

এবার আসি নিজেদের কথায়। সম্প্রতি বাংলাদেশ সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ‘যশোর রোড’ বলে পরিচিত যে বিখ্যাত রাস্তাটা আছে সেটা আরও উন্নত করতে আড়াই হাজার প্রাচীন গাছ কেটে ফেলবে! আই রিপিট ‘আড়াই হাজার’!

কোন রাস্তা চিনতে পারছেন কি? একাত্তর সালে যে রাস্তা দিয়ে আমাদের দেশের প্রায় এককোটি শরণার্থী ভিটেমাটি ছেড়ে পাশের দেশ ভারতে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছিল, এটা সেই রাস্তা!

এই রাস্তা নিয়ে, আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের লক্ষ লক্ষ শরণার্থী নিয়ে আমেরিকার বাউন্ডুলে অতি বিখ্যাত এক কবি যার নাম ছিল অ্যালেন গিন্সবার্গ, সে লিখেছিল- ‘সেপ্টেম্বর ইন যশোর রোড’ নামের বিশ্ব বিবেক নাড়িয়ে দেয়া একটা কবিতা। সেই কবিতায় সুর দিয়ে গান গেয়ে বব ডিলান নামের নোবেল বিজয়ী কবি ও গীতিকার, বিটলস ব্যান্ডের তরুণেরা নানাভাবে বিশ্বের মানুষকে জানিয়েছিল কি ভয়াবহ নির্মমতা চলছে পূর্ব পাকিস্তান তথা বর্তমান বাংলাদেশের মানুষের ওপর।

আপনি কি জানেন পৃথিবীর সবচেয়ে পুরাতন গাছটি আছে কোন দেশে?

পৃথিবীর সবচেয়ে পুরাতন গাছটি আছে মেক্সিকোতে। এই গাছটি মূলত সাইপ্রাস গাছ, যাকে আদর করে সারা পৃথিবীর লোক ডাকে- টুলে ট্রি। কথিত আছে এই গাছের নীচে বসেই প্রাচীন মেক্সিকান সম্রাট মন্টেজুমার সাথে যুদ্ধের সময় বিশ্রাম নিয়েছিলেন স্প্যানিশ বাহিনীর সেনাপতি হার্নান কার্টেজ। বহু আগেই ইউনেস্কো একে বিশ্বসভ্যতার অংশ হিসেবে ঘোষণা করে রেখেছে।

এতোসব জেনেও সরকারের মাথামোটা নীতিনির্ধারকগণের সাথে আপনি সমর্থন জানাবেন যশোর রোডের আড়াই হাজার প্রাচীন গাছ কেটে তথাকথিত উন্নয়নের? গাছগুলি না কেটে উন্নয়ন করা কি যায় না?
 
এরপরও এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ করবেন না আপনি? 
সিদ্ধান্ত এখন আপনার!

লেখক: তরুণ লেখক ও সাহিত্যিক

মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে jagoroniya.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরণের দায় গ্রহণ করে না।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত