নারীদের পাল্টা জবাব থামবে না

প্রকাশ | ২০ ডিসেম্বর ২০১৭, ২৩:৩৮

রাস্তাঘাটে হাঁটতে এখন আর ভীত লাগে না তেমন। সে সময়টা যখনই হোক না কেন। রাস্তাঘাটে টিটকারি শুনলে জবাব দেওয়ার মত মনের জোর আর সাহস হয়েছে বেশ এবং বিপদে পড়লে তা মোকাবেলা করার মেন্টালিটিও আছে। ব্যাগে পিপার স্প্রে, এন্টিকাটার, কাঁচি, সুই নিয়েই ঘুরি। যাতে প্রয়োজনে সেগুলো কাজে লাগানো যায়।

আজ বিকেলেই রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলাম। পাশেই একজন ২৬/২৭ বছরের ছেলে সিগারেট ফুঁকতে ফুঁকতে হাটছিল। তো রাস্তায় তো নারীপুরুষ যে যার ইচ্ছামতই হাঁটবে এটাই তো নিয়ম। তবে রাস্তায় হাঁটার নিয়মকানুন তেমন কেউ মানে না এটাই হতাশার।

তো এক পর্যায় ছেলেটা আমার সামনে চলে গেল, আমি পেছনে। রাস্তা পার হলাম প্রায় একসাথে হেঁটেই। ছেলেটা হঠাৎ আমাকে বলল, কিছু বলবেন আপু?
- না
- তবে তাকিয়ে আছেন যে?
- আপনিও তো তাকিয়ে আছেন। 
- না আপু কিন্তু মেয়ে মানুষের দিকেই তো ছেলেরা তাকায় তাই।
- যাক স্বীকার করলেন তবে।

হ্যাঁ এমন ঘটনা বা এর থেকেও জঘন্য ঘটনা প্রতিনিয়ত ঘটে এই দেশে। বাংলাদেশ এখনো মেয়েদের জন্য নিরাপদ নয় বটে কিন্তু তাই বলে মেয়েরা ঘরে বসে থাকলে তো সেইসকল পুরুষেরা ঘরে এসে মৌলিক চাহিদাগুলো মেটাবে না আর মেটালেই বা মেয়েরা সেগুলো বিনাবাক্যে গ্রহণ করবেই বা কেন?

মেয়েরা লেখাপড়া শিখছে, নিজের পায়ে দাঁড়াতে জানে। স্বনির্ভর হচ্ছে। দেশের প্রতিটা কর্মক্ষেত্রে মেয়েরা তাদের যোগ্যতা প্রমাণ করে দিচ্ছে বারবার। কোনদিক থেকে মেয়েরা এখন আর পিছিয়ে নেই।

তারপরও পুরুষের নজর এবং মনোভাব পরিবর্তন হচ্ছে না। পথেঘাটে মেয়েদের দেখলেই তাদের পৌরুষত্ব জেগে ওঠে। নিদেনপক্ষে একটু টিটকারি না মারলে তাদের বদহজম হয়। পুরুষরা মেয়েদের স্বাধীনতা কিছুতেই মেনে নিতে পারে না। স্বাধীনতার প্রশ্নে পুরুষরা বিভিন্ন বাকবিতণ্ডা করেন যার মধ্যে প্রধান হল ধর্ম, পোশাক! কিন্তু কেন?

মেয়েরা কি করবে না করবে তা আজও কেন পুরুষরা ঠিক করে দিবেন? একজন প্রাপ্তবয়স্ক মেয়ে নিজের সিদ্ধান্ত নিজে কেন নিতে পারবেন না? কেন পদে পদে তারা এসব প্রশ্নের সম্মুখীন হবেন?

আচ্ছা, পুরুষরা কি মেয়ে ছাড়া কোন সমাজ পরিচালনা করতে পারবে?

একটা সমাজ, একটা সিস্টেম, একটা দেশ পরিচালনায় যেমন একজন পুরুষ দরকার তেমনি একজন নারীরও দরকার। কিন্তু পুরুষরা কেবল নারীদের খেলার পুতুল ভাবতে চান কিন্তু মর্যাদা দিতে চান না! তারা নারীদের বন্ধু ভেবে সমাজ এগিয়ে নিতে চান না কেবল নিজেদের তৈরী নিয়মের ছাঁচে ফেলে সেইমত গড়তো চান মেয়েদের। পুরুষরা যৌথভাবে কাজ করতে চান না তারা চান নারীকে দাসী করে রাখতে যে তাদের কথামত খাবে, ঘুমাবে। 

পুরুষরা এইরকম ইচ্ছা থেকেই পথেঘাটে নারীদের উত্যক্ত, বিরক্ত, ধর্ষণসহ বিভিন্ন প্রকার যৌন হয়রানি করে থাকেন। 

কিন্তু আজকাল নারীরা পাল্টা জবাব দিতে শিখেছে। বিভিন্নভাবে পাল্টা জবাব পেয়েও পুরুষেরা থামছে না। তারা মরিয়া হয়ে উঠেছে তাদের ক্ষমতা বহাল তবিয়তে টিকিয়ে রাখার জন্য কিন্তু তাতে নারীদের পাল্টা জবাব থামবে না। চলবে।

লেখক: সংস্কৃতিকর্মী