বাচ্চাগুলো যাবে কোথায়?

প্রকাশ | ০১ ডিসেম্বর ২০১৭, ০১:০৫

গত বছর মালয়েশিয়া যাবার সময় আমার সাথে প্লেনে ৩টা পরিবার উঠে, যার মাঝে ২টা পরিবার একসাথে, এবং ১টা পরিবার তাদের মতো করে যাচ্ছে। প্লেনে উঠার পর প্লেন একটা সময় খুব বাম্প করছিলো তখন একজনের এক বাচ্চা ভয় পেয়ে শ্বাস কষ্টে আক্রান্ত হলে, মাকে ডাকলে মা ঠিক হয়ে যাবে বলে পাশের জনের সাথে খুব গল্প করছে, শেষ পর্যন্ত কেবিন ক্রুরা এসে উদ্ধার করলো এবং তখনও মা তার গল্পে ব্যস্ত! আরেক মা-ও প্যান্ট শার্ট পরা, সে কেবিন ক্রু তার সাথে ফ্ল্যার্ট করছে সেটাতে ব্যস্ত, বাপ আর দাদী ২ বাচ্চা সামলাতে ব্যস্ত। বের হবার সময় সে লাইনে আমার সামনে দাঁড়ালো এবং সে সগৌরবে তার এই কথা স্বামীর সাথে শেয়ার করছে!!! 

এগুলো তো সাধারণ বিষয়। মামলার এজাহারে দেখেছি, মা তার প্রেমিক সহ নিজ সন্তানকে কেটে পানির ট্যাংকে ঢুকিয়ে রেখেছে কারণ বাচ্চা মাকে পরকীয়া করার সময় প্রেমিক সহ দেখে ফেলেছে। এরকম ঘটনা কিন্তু এখন কম নয়, কোর্ট প্রাকটিস করে এমন সকল আইনজীবীর ঝুলিতে এ ধরনের মামলা আছে। 

মেয়েরা খোঁজে স্ট্যাবলিস্ট পাত্র আর ছেলেরা দেখে মেয়ে সুন্দরী কিনা আর মেয়ের বাপের কি আছে? কেউ দেখে না মানুষ হিসেবে কে কেমন? তাই সমস্যা হবার পর যখন একজন আরেকজন সম্পর্কে বলে এবং এক একজনের কর্মকাণ্ড দেখে আমি মোটেও অবাক হই না। বিয়েও সমাজে একটা স্ট্যাটাস। আমার হাজবেন্ড ওমুক !!! ছেলেরা বলে আমার শ্বশুর তমুক , নিজের বাপ কি করে সেটা বলে না!!!

আমি জানি এই পোস্ট লেখার সাথে সাথে সকলে নানা কারনে আমার উপর ঝাঁপিয়ে পড়বে। আমি সবসময় একটা কথা বলি সেটা হলো 'অর্পিত মাতৃত্ব', এটা বললে নানা রকমের মন্তব্য আমাকে শুনতে হয়। পুলিশ এবং আইনজীবীদের পেশার কারনে মানুষের জীবনের নানা রকম সত্য ঘটনা দেখার সুযোগ হয়। 'অর্পিত মাতৃত্ব' বলি এ জন্য যে অনেক মায়েরা যত না বেশি মাতৃত্বের কারণে সন্তান সন্তান করে তার চেয়ে বেশি সমাজের কারনে এবং একটা সময় স্বামীর সাথে জেদের কারনে করে। বাচ্চাটা দুজনের যুদ্ধের বিষয়বস্তু হয়, তারা কেউ বাচ্চার জন্য লড়াই করে না, লড়াই করে নিজেদের আধিপত্য বা ক্ষমতা প্রকাশের জন্য। বাবারা বা পুরুষরা কি করেন সেটা আমি সবসময় বলি, আজকে মায়ের কথা বলবো। আইনজীবী হিসেবে মা এবং বাবা উভয়ের পক্ষেই মামলা করার সুযোগ হয়েছে, আমি মুদ্রার এপিঠ ওপিঠ দুটোই দেখেছি। অধিকাংশ বাবা মা কাস্টডি মোকদ্দমা করেন ইগো ও ক্ষমতা প্রদর্শনের জন্য!

আজকালকার যুগে 'মা' হওয়াটাও ফ্যাশন ও 'নারী হিসেবে আমি সম্পূর্ণ' এটা প্রমাণেরও একটা মাপকাঠি এবং বাচ্চা হবার পর ফিগার মেইনটেইন করা তো সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়!! আমার কথাগুলো অদ্ভুত ও বাজে শোনালেও একটা কথাও মিথ্যা নয়। 'আল্লাহ ভাবি, আপনার বাচ্চা আছে দেখলে বোঝাই যায় না' - এই কমপ্লিমেন্ট পাওয়া আর মোঘল সালতানাত জয় করা একই বিষয়!!

রুদ্ধদ্বার শুনানীতে, যখন ৮ বছরের একটা বাচ্চা মেয়ে বাবার কোলে উঠে এমনভাবে নিজেকে আড়াল করে যেনো মা তার চেহারা না দেখতে পায় এবং সে কোন ভাবেই মায়ের চেহারা দেখবে না, তখন বুঝতে হবে সেই মা-ও মা !! নিজেদের কামনা বাসনার বশবর্তী হয়ে এমন দৃশ্য সন্তানকে দেখাবেন না যা এতোটুকু সন্তানের মনেও মায়ের জন্য ঘৃণা তৈরী করে। বাবারা যা করে তা অধিকাংশ সময় বাড়ির বাইরে করে তাই বাচ্চারা দেখতে পারে না, কিন্তু মায়েরা যা করে বাড়িতে করে এবং অধিকাংশ সময়ে সাথে বাচ্চা নিয়ে করে। বাবারা ডেম কেয়ার আর মায়েরা বাচ্চা সাথে রাখে নিজেদের বাহানার জন্য, তাই বাচ্চারা মায়ের ঘটনা দেখে। বাচ্চারা কিন্তু মায়ের বন্ধু মামা এবং মামারূপী প্রেমিকের মাঝে পার্থক্য বোঝে! যদি স্বামী স্ত্রীর একে অপরকে ভালো না লাগে তবে সেখান থেকে বের হয়ে আসুন, কিন্তু বাচ্চার মনে নোংরা অভিজ্ঞতা তৈরী থেকে বিরত থাকুন। একজন আইনজীবী হিসেবে যখন দাঁড়াই আর বাচ্চা মায়ের মুখও দেখতে চায় না তখন কারো জন্য নয়, শুধু বাচ্চাটার জন্য খারাপ লাগে! মা দূরে গেলে বাবাও খালু হয়ে যায়, এখন আমরা মায়েরাও যদি খালা হয়ে যাই বাচ্চাগুলো যাবে কোথায়? প্রতিটা বাচ্চার জন্য খারাপ লাগে যাদের জন্য বাবা মায়েরা মাতৃত্ব ও পিতৃত্বের নামে যুদ্ধ করতে আসে!!

লেখক: আইনজীবী