উবার চালকের নারী নিপীড়ন

প্রকাশ : ১৩ জুন ২০১৭, ১৩:৩৭

শান্তা ঘোষ

সালাম নিবেন সবাই। আজকে আপনাদের সাথে আমার এক্সপেরিয়েন্স শেয়ার করব, থ্রু উবার, এবং সবার দোয়ায় আমি এখনো জীবিত!

সোমবার বিকাল বেলা আমার বন্ধুদের সাথের ইফতার অ্যাটেন্ড করব, তো আমার ফ্রেন্ড বলল উবার ডাক, আমাকে তুলে নিয়ে একবারে যা, কারণ বাইরে ঝুম বৃষ্টি। ১৫-২০ মিনিট চেষ্টার পর পেলামও, তো ড্রাইভার আসলেন। আমি বললাম ভাইয়া বারো (মিরপুর বারো) হয়ে বের হন, আমি ক্যান্টনমেন্ট দিয়ে যাব, তাহলে জ্যামটাও পাবো না। বের হওয়ার পথে একটা জায়গায় (রেনেটার পাশে) মাটি তোলার মেশিন রেখে দেয়া, গাড়ি যাওয়ার জায়গা নাই, তো উনি অল্প ঘুরে পাশের রাস্তা দিয়ে বের হয়। বারো নাম্বার আসার পর আমি বললাম ভাইয়া আমি ক্যান্টনমেন্ট হয়ে যাব তো, আপনি যে দিক দিয়ে হয় যান। কালশী হয়ে বা ডিওএইচএস হয়ে। তো উনি ঢুকে বলল ক্যান্টনমেন্ট কই যাবেন বলেন। আমি বললাম ভাইয়া আমি পোস্টঅফিস যাব, আপনি আগান, আমি দেখিয়ে দিব। 

তারপর সে বলা শুরু করল আপনি আমারে এত্ত ঘুরাইতেছেন, এত্ত তো আমি ঘুরব না। বলে রাখা ভালো, আমার ডেস্টিনেশন ছিল বনানী। তারপর সে ডিওএইচএস গেইট পার হয়ে গাড়ি থামিয়ে বলে আমি আর যাবো না, আপনার যা ভাল লাগে করেন, আপনি রুট চেইঞ্জ করেন। আমি বললাম এটা কেমন কথা ভাই, বাইরে বৃষ্টি, আমি একজনকে দাঁড় করিয়ে রেখেছি প্লিজ যান। আর আপনি তো এভাবে নামিয়ে দিতে পারেন না। বলল আমি যাবো না, আপনি কি করতে পারেন দেখি! আমি বললাম ঠিক আছে, আমি একা একটা মেয়ে আছি বলে আপনি যাচ্ছেতাই করবেন? দাঁড়ান আমি ক্যান্টনমেন্ট থেকে এমপি ডাকছি, দেখি আপনি এরকম মাঝ রাস্তায় কিভাবে নামান। 

তারপর সে গাড়ি স্টার্ট দেয়, এবং আমাকে হঠাৎ বলে আমি ড্রাইভার বলে আপনি আমাকে টিজ করলেন! আমি তো অবাক, কি টিজ করলাম ভাই? বুঝালামই তো না! বরং আপনি আমাকে নামিয়ে দিতে চাইছিলেন। আপনি তো ড্রাইভারই, আপনাকে টিজ করার আমার কি আছে! এরপর কন্টিনিওয়াস আমার সাথে ঝগড়া করার চেষ্টা সে চালাচ্ছিল, আমি বললাম দেখুন আপনি সামনের দিকে তাকিয়ে ড্রাইভ করুন। সে থামেই না, তখন আমি ভয়ে চিৎকার দেই, যে আপনি ঠিক করে চালাবেন নাকি না! এবার আসল জিনিস শুরু, সে গাড়ি থামিয়ে আমার কলারে হাত দিয়ে, গলা চেপে ধরে বলে, "খানকি মাগীর বাচ্চা, তোর কলিজা এখানে ছিঁড়ে রেখে চলে যাব! তুই আর্মির বাচ্চা হইলেই বা কি! আমার বাড়ি এখানে, কমিশনার আমার বন্ধু, তোরে মাইরা ফালায়ে দিব, কেউ জানবেও না!" 

তারপর আমি জীবন বাঁচাতে উনার চোখের নিচের মাংসে চেপে ধরে আমার গলার হাত ছাড়াই! গেটও খুলে ফেলি কিভাবে যেন, বলতে পারব না! এবং যখন তাকে বললাম আমি রেকর্ড করছি, সে আমার ফোন কাড়াকাড়ি করে, আমার হাত ছিলে যায়, হাতের চুড়ি বাঁকা হয়ে যায়! এবং আমি বাইরে এসে মানুষের হেল্প আর কি চাইবো কান্না শুরু করে দেই, সে মানুষকে গিয়ে বুঝানো শুরু করলো তার সাথে আমি অন্যায় করেছি, তাকে নাকি আমিই গালাগালি করেছি!! আমাকে কেউ হেল্প করতে পারেওনি! 

আমি আমাকে আজকে বাঁচাতে পেরেছি, কারণ আমি চুপ করে থাকিনি! অন্য কোনো মেয়ে হলে জানি না কি হত! আমাদের দেশের মেয়েদের সবদিক থেকে পঙ্গু বানিয়ে রাখা হয়, রেইপ হলেও প্রমাণ করতে হয়, সেই জিনিসগুলো আজ খুব ভালো করে উপলব্ধি করলাম! কালকেই আমি একটা স্ট্যাটাস দিয়েছিলাম, এদেশে পুরুষ হওয়াটাও যোগ্যতা! আপনি হয়ত ভাবছেন, আমি কেন এগুলো বলছি, বলছি কারণ একটা ছেলের সাথে এগুলো হয় না! হতে পারেই না!

আপুরা, উবারে একা যাতায়াত করার আগে একশ বার ভাবুন, হয়ত ভালো পেয়েছেন আগে, কিন্তু একদিনের খারাপ আপনার জানও নিতে পারে!

বিঃ দ্রঃ কারো যদি জানা থেকে কি করা যায়, জানাবেন, উবারকে আগেও জানানো হয়েছে, ড্রাইভারদের ব্যবহার সম্পর্কিত কথা। তারা একটা কলও দেয় না, মেইল দিয়ে বসে থাকে! আমি একটা জিডি করবো, কারণ আসার আগে ওর কানের নিচে একটা থাপ্পর মেরেছি, কন্ট্রোল করতে পারি নাই, ও তো বলেছেই ওর কোনো ভয় নেই, যদি মেরে ফেলে, তাই আর কি!

ড্রাইভার: সুমন সরকার
মোবাইল: +8801716259046

উবার ইউজারস অফ বাংলাদেশ ফেসবুক গ্রুপ থেকে

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত