আমার মা, আমি মা

প্রকাশ : ১৪ মে ২০১৭, ১৪:২৭

জোহরা শিউলী

‘পথের ক্লান্তি ভুলে ... স্নেহভরা কোলে তব মা গো ... বলো কবে শীতল হবো।’

হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের গানের মতো শীতল হওয়ার জন্য আমাদের মাকেই দরকার। ছোট্ট একটা শব্দ। মা। এক অক্ষরের। কিন্তু কী বিশাল তার পরিধি! সৃষ্টির সেই আদিলগ্ন থেকে মধুর এ শব্দটি শুধু মমতার নয়, ক্ষমতারও যেন সর্বোচ্চ আধার। 

১০ মাস ১০ দিন ধরে গর্ভধারণ। নাড়িছেঁড়া ধনটির জন্য জীবনের সবটুকু নিঃশ্বাস বাজি রাখা। ক'জন পারে? শুধু মা ছাড়া। এমন সুন্দর একটা শব্দ। এমন প্রশান্তির একটা ডাক। মায়ের মতো আপন কেউ নেই। 

জন্মদাত্রী হিসেবে আমার, আপনার, সবার জীবনে মায়ের স্থান সবার ওপরে। তাই তাকে শ্রদ্ধা-ভালোবাসা জানানোর জন্য একটি বিশেষ দিনের হয়তো কোনো প্রয়োজন নেই। তারপরও আধুনিক বিশ্বে মে মাসের দ্বিতীয় রোববারটিকে 'মা দিবস' হিসেবে পালন করা হচ্ছে, যার সূত্রপাত ১৯১৪ সালের ৮ মে থেকে। সমীক্ষা বলছে, বছরের আর পাঁচটি দিনের তুলনায় এদিন অনেক বেশি মানুষ নিজের মাকে ফোন করেন, তার জন্য ফুল কেনেন, উপহার দেন। তবে মায়েদের জন্য কি আলাদা করে উপহারের প্রয়োজন আছে? সন্তানের মুখে একটি বার মা ডাক কিংবা প্রিয় সন্তানের মুখটি ক্ষণিকের জন্য দেখা হলেই তো মায়ের জন্য স্বর্গীয় সুখ। 

কথায় আছে- কুসন্তান যদিও থেকে থাকে। কুমাতা কখনও নয়। কোনো মা, তা তিনি যে পেশাতেই থাকুন না কেন, যত কুশ্রীই হন না কেন, সন্তানের কাছে তিনি কিন্তু দেবীর মতোই। সবচেয়ে আদর্শ আর প্রিয় মুখটিই মায়ের। ইসলামে ‘মায়ের পায়ের নিচে সন্তানের বেহেশত’ পাওয়ার কথা বলা হয়েছে। খ্রিস্টধর্মেও রয়েছে ‘মাদার মেরির’ বিশেষ তাৎপর্য। সেই মায়ের জন্য কি-না বছরে একটা মাত্র দিন!

তবে এ রীতিকে বোধহয় একেবারে তাচ্ছিল্য করা ঠিক নয়। অন্তত একটা দিন তো মায়ের কথা, তার সুখ-দুঃখ, চাওয়া-পাওয়ার কথা ভাবেন বিশ্বাসী। তারপরও কি মায়ের জন্য আমরা একটা দিন শুধু পালন করব? বাকি ৩৬৪ দিন সন্তানরা মায়ের কথা ভাববে না? মা তো প্রতিদিনের কাছে থাকার। কাছে পাওয়ার। মার জন্য আলাদা করে একটি দিন?

কিংবা মায়ের কাছে, মায়ের স্পর্শেই যাদের দিন কাটে এখন প্রতিদিন। নিজের হাতে এক কাপ চা বানিয়ে বসুন মায়ের পাশে। দিনের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে মাকে আধা ঘণ্টা সময় দিলে স্বর্গ থেকে যে পবিত্রতা আপনাকে ঘিরে রাখবে অন্তত সেটুকুর জন্য আপনার বেঁচে থাকা অনেক সুন্দর হবে। 

‘আমাদের মায়েরা অনেক সন্তানকে একসঙ্গে দেখাশোনা করতেন। তাদের পরিশ্রম ছিল একরকম। এখন আমাদেরটা আরেকটু ভিন্ন।’ বলছিলেন সঙ্গীতশিল্পী ফাতেমা তুজ জোহরা। আমার মতে, একেক ধাপে সন্তান পালনের ধরন একেক রকম। তবে সব মায়ের মনে সন্তানের প্রতি চিরন্তন অনুভব তো থাকেই। 

মা ভাবনা নিয়ে ত্রপা মজুমদার জানান, মা অনেক ছোট্ট একটি শব্দ। কিন্তু কত আবেগ। কত প্রশান্তি এতে জড়িয়ে আছে সন্তান মাত্রই তা জানেন। প্রতিটি সন্তানের জীবনে ঘোর লাগা অন্ধকার সময়টুকুতে শুধু মনে হয় মা যদি একটু পাশে থাকত। মায়ের হাতের স্পর্শ যদি একটু মাথায় থাকত। এ এক স্বর্গীয় সম্পর্ক। এটা আমি মা হওয়ার পর আরও বেশি করে বুঝতে শিখেছি। একটি সন্তানকে তিল তিল করে বড় করে তুলতে মায়ের কত যে কষ্ট হয় এটা শুধু মা মাত্রই জানেন। তবে একটা বিষয় না বললেই নয়। যে মা একা হাতে তার এতগুলো সন্তানকে লালন-পালন করেন, সেই এতগুলো সন্তানের অনেক হাত একসময় মায়ের দায়িত্ব ভাগাভাগিতে অপারগতা দেখায়। এ আমরা কোন পথে যাচ্ছি? বাবা-মা যখন বয়স্ক হন, প্রকৃতির নিয়মে তারা একটু অসহায় হয়ে যান। আমাদের তখনই তাদের ঠিকমতো দেখভাল করতে হবে। ঠিক যেভাবে তারা শৈশব-কৈশোরে আমাদের দেখাশোনা করেছেন।

নৃত্যশিল্পী জিনাত বরকতউল্লাহ বললেন, আসলে মা শব্দটাই অন্যরকম। এত প্রশান্তি আর কোনো শব্দে নেই। সেটা যেমন আমি আমার মাকে ডাকতে গিয়ে টের পেতাম। আমার দুই মেয়ে যখন আমাকে ডাকত তখন আমারও সেরকম লাগত। আবার এখন আমাদের নাতিদের বেলায় দেখি, তারা আমার মেয়েদের মা বলে ডাকলে আমার মেয়েদের মুখ উজ্জ্বল হয়ে ওঠে। শুধু এই একটি মাত্র এক অক্ষরের ডাক মানুষের জীবন বদলে দিতে পারে আমূল।

সূত্র: সমকাল

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত